* প্রবাসী—বৈশাখ, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ১ম খণ্ড তারপর বাণিজ্যের পথ সুগম করার উপলক্ষ্যে বিদেশী বণিকেরা তাদের কারবারের গদিটার উপরে রাজভক্ত চড়িয়ে বসল। সময় ছিল অমুকুল। তখন মোগলরাজত্বে ভাঙন ধরেছে, মারাঠীরা, শিখের এই সাম্রাজ্যের গ্রন্থিগুলো শিথিল করতে প্রবৃত্ত, ইংরেজের হাতে সেটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল ধ্বংসের পথে । পূৰ্ব্বতন রাজগৌরবলোলুপের যখন এদেশে রাজত্ব করত তখন এদেশে অত্যাচার অবিচার অব্যবস্থা ছিল না vথ~ বলা চলে না। কিন্তু তারা ছিল এদেশের অঙ্গীভূত । তাদের অাচড়ে দেশের গায়ে যা ক্ষত হয়েছিল তা ত্বকের উপরে ; রক্তপাত অনেক হয়েচে, কিন্তু অস্থিবন্ধনীগুলোকে নড়িয়ে দেয়নি। ধন-উৎপাদনের বিচিত্র কাজ তখন অব্যাহত চলছিল, এমনি কি নবাব বাদশাহের কাছ থেকে সে-সমস্ত কাজ প্রশ্রয় পেয়েছে। তা যদি না হ’ত তাহ’লে এখানে বিদেশী বণিকের ভিড় ঘটবার কোনো কারণ থাকত না,—মরুভূমিতে পঙ্গপালের ভিড় জমূবে কেন ? তারপরে ভারতবর্ষে বাণিজ্য ও সাম্রাজ্যের অশুভ সঙ্গমকালে বণিক রাজা দেশের ধনকল্পতরুর শিকড়গুলোকে কি ক’রে ছেদন করতে লাগলেন, সে ইতিহাস শতবার-কথিত এবং অত্যন্ত শ্রুতিকটু। কিন্তু পুরাতন ব’লে সেটাকে ৰিস্থতির মুখস্ট্রলি চাপা দিয়ে রাখবার চেষ্টা চলবে না। এদেশের বর্তমান দুৰ্ব্বহ দারিদ্র্যের উপক্রমণিকা সেইখানে। ভারতবর্ষের ধনমহিমা ছিল, কিন্তু সেটা কোন বাহন যোগে দ্বীপান্তরিত হয়েছে সেকথা যদি ভুলি জ্ঞৰ পৃথিবীর আধুনিক ইতিহাসের একটা তত্ত্বকথা আমাদের এড়িয়ে যাবে। আধুনিক রাষ্ট্রনীতির প্রেরণাশক্তি বীৰ্য্যাভিমান নয়, সে হচ্চে ধনের লোভ, এই তত্ত্বটি মনে রাখা চাই । রাজগৌরবের সঙ্গে প্রজাদের একটা মানবিক সম্বন্ধ থাকে, কিন্তু ধনলোভের সঙ্গে তা থাকতেই পারে না। ধন নিৰ্ম্মম, নৈর্ব্যক্তিক । ষে-মুরগী সোনার ডিম পাড়ে লোভ যে কেবল তার ডিমগুলোকেই ঝুড়িতে তোলে তা নয়, মুরগীটাকে-স্বদ্ধ সে জবাই করে । বণিকরাজের লোভ ভারতের ধন-উৎপাদনের বিচিত্র শক্তিকেই পছু ক'রে দিয়েছে। বাকী রয়েছে কেৰল কৃষি, নইলে কাচা মালের জোগান বন্ধ হয় এবং বিদেশী পণ্যের হাটে মূল্য দেবার শক্তি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। ভারতবর্ষের সদ্যঃপাতী জীবিকা এই অতি ক্ষীণ বুস্থের উপর নির্ভর করে আছে । এ কথা মেনে নেওয়া যাক তখনকার কালে যে-নৈপুণ্য ও যে-সকল উপায়ের যোগে হাতের কাজ চলত ও শিল্পীরা খেয়ে প’রে বঁাচত যন্ত্রের প্রতিষোগিতায় তারা স্বতই নিক্রিয় হয়ে পড়েচে । অতএব প্রজাদের বাচাবার জন্যে নিতান্তই প্রয়োজন ছিল সৰ্ব্বপ্রষত্ত্বে তাদের যন্ত্রকুশল ক’রে তোলা । প্রাণের দায়ে বৰ্ত্তমানকালে সকল দেশেই এই উদ্যোগ প্রবল। জাপান অল্প কালের মধ্যে ধনের যন্ত্রবাহনকে আয়ত্ত ক’রে নিয়েচে, যদি-না সম্ভব হ’ত তাহ’লে ষষ্ট্ৰী যুরোপের ষড়যন্ত্রে সে ধনে-প্ৰাণে মারা যেত। আমাদের ভাগ্যে সে স্থযোগ ঘটল না, কেন-না লোভ ঈর্ষাপরায়ণ । এই প্রকাও লোভের আওতায় আমাদের ধনপ্রাণ মুষড়ে এল, তৎপরিবর্ভে রাজা আমাদের সাত্বন দিয়ে বলচেন এখনও ধনপ্রাণের যেটুকু বাকী সেটুকু রক্ষা করবার জন্তে আইন এবং চৌকিদারের ব্যবস্থাভাম রইল আমার হাতে। এদিকে আমাদের অন্নবস্ত্র বিদ্যাবুদ্ধি বন্ধক রেখে কণ্ঠাগত প্ৰাণে আমরা চৌকিদারের উদ্ধির খরচ জোগাচ্চি। এই যে সাংঘাতিক ঔদাসীনা, এর মূলে আছে লোভ । সকল প্রকার জ্ঞানে ও কৰ্ম্মে যেখানে শক্তির উৎস বা পীঠস্থান সেখান থেকে বহু নীচে দাড়িয়ে এতকাল আমরা ই{ ক’রে উপরের দিকে তাকিয়ে আছি আর সেই উৰ্দ্ধলোক থেকে এই আশ্বাসবাণী শুনে আসচি, তোমাদের শক্তি ক্ষয় যদি হয় ভয় কি, আমাদের শক্তি আছে, আমরা তোমাদের রক্ষা করব । যার সঙ্গে মানুষের লোভের সম্বন্ধ তার কাছ থেকে মানুষ প্রয়োজন উদ্ধার করে, কিন্তু কখনও তাকে সম্মান করে না । যাকে সম্মান করে না তার দাবিকে মাছৰ যথাসম্ভব ছোট ক’রে রাখে ; অবশেষে সে এত সস্তা হয়ে পড়ে যে, তার অসামান্ত অভাবেও সামান্ত খরচ করতে গায়ে বাজে। আমাদের প্রাণরক্ষা ও মন্থসত্ত্বের লঙ্গারক্ষার জন্তে কতই কম বরাদ্ধ সে কারও অগোচর নেই। জয়
পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/২১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/c/cd/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu/page21-1024px-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80_%28%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97%2C_%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE_%E0%A6%96%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1%29.djvu.jpg)