পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] করিত, “ক্যাণ্ডিয়া পিলি, রূপোর চামচের গল্পট বল না, সেটা আমরা ভাল করে শুনিনি । অপরিচিত লোককেও ক্যাণ্ডিয়া এখন মাঝে মাঝে ডাকিয় দাড় করাইত, জোর করিয়া তাহাকে চুরির কাহিনী এবং নিজের নির্দোষিতার প্রমাণ শুনাইয়া দিত। পাড়ার ছোকৃরার দল মধ্যে মধ্যে তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইড, এবং তাহার হাতে একটা বা দুইটা পয়স গুজিয়া দিয়া, তাহাকে বক্তৃত করাইতে লাগাইয়া দিত । কেহ বা দুষ্টামি করিয়া তাহার সঙ্গে তর্ক করিত এবং বিরুদ্ধ যুক্তি দিত। ক্যাণ্ডিয়া ক্ষেপিয়া উঠিয়া অনর্গল বকিয়া যাইত। ছোকৃরার শেযে তাহাকে নিষ্ঠুর কোনো একটা কথা বলিয়া বিদায় করিয়া দিত । ক্যাণ্ডিয়া মাথা নাড়িয়া চলিয়া যাইত, তাহার পর রাস্তার ধত ভিখারী ধরিয়া নিজের স্বপক্ষের যুক্তি শুনাইতে বসিত। একজন বধির ভিখারিণীর সঙ্গে সে বন্ধুত্ব করিয়াছিল, তাহার আবার এক প৷ খোড়া । কুহুধ্বনি 6. PS শেষে ক্যাণ্ডিয়া সাংঘাতিক অমুখে শয্যাশায়ী হইয়া পড়িল । তাহার ভিখারিণী বন্ধুই তাহার তত্ত্বাবধান করিতে লাগিল। ডন ক্রিষ্টিন লামোনিকা তাহাকে খানিকট ঔষধ, এক ঝুড়ি কয়লা পাঠাইয়া দিলেন । » রোগিণী ঘরের বিছানায় শুইয়। কেবলই রূপোর চামচের বিষয় প্রলাপ বকিতে লাগিল। মাঝে মাঝে এক হাতের উপর ভর করিয়া উচু হইয়া উঠিয়া আর এক হাত সবেগে শূন্তে নাড়িয়। সে নিজের যুক্তিতে জোর দিতে লাগিল । তাহার আয়ু শেষ হইয়া আসিয়াছিল । তাহার দৃষ্টি ধখন ছায়ায় ঢাকিয়া আসিতেছে, তখনও সে হাপাইতে হাপাইতে বলিতে লাগিল, “ঠাকুরুণ, আমি ওটা নিইনি, কারণ চামচটা—” কথা শেষ হইবার আগেই তাহার প্রাণবিয়োগ হইল। শেষ যুক্তিটা আর তাহার বলা হইল না । কুহুধনি ঐযতীন্দ্রমোহন বাগচী মুকুলিত আম্রকুঞ্জে ডাকে পিক সারা দ্বিপ্রহর ন মানি’ ’য্যের রুদ্র দীপ্তিমান ভ্ৰকুটিবিক্রমে ; দশদিশি ঘেরি সেই একাক্ষর শব্দভেদি স্বর অমুতের পিচিকারী হানিতেছে সৃষ্টির মরমে ! ক্ষুধা নহে, তৃষ্ণ নহে, অক্ষত রয়েছে চূতাঙ্কুর, অদূরে সরীবক্ষে শুষ্ক চঞ্চু যাচে না সদ্ধান ; অজ্ঞাত বেদন বহি’ নাহি ক্ষুব্ধ অভিযোগ-স্বর, স্বদুর সঙ্গীরে ডাকি' নহে তাহা প্রণয়-আহবান। অনাবিল আনন্দের মধুস্ৰাবী মোহন পঞ্চম শূন্তপথে গেথে চলে স্বত্রহীন স্বরের মালিকা— প্রহর-প্রহরীদলে ক্ষণে ক্ষণে লাগায়ে বিভ্রম ; প্রতিধ্বনি করি’ চলে গিরিপথে বনের বালিকা ! তারি নীচে যন্ত্ৰকণ্ঠে অবিশ্রাপ্ত উঠে গরজনি ছাপিম সহশ্ৰমুখী জনতার মিশ্র কোলাহল ; পীড়িত মন্দিত পৃথ্বী কাতরে জানায় আৰ্ত্তধ্বনি,— ভারো উদ্ধে সেই কণ্ঠ বিস্ময়েরে করিছে বিহবল ! গৃহে গৃহে জলে অগ্নি-চালে চালে নাচে উচ্চ শিখ, কুহুকুহু মুহুমুহু ঢালে তাহে স্বরধুনিধারা ; ধূসর মরুর বক্ষে মিলে পথ তৃণাক্ষরে লিখা, বন্ধ্যার বুভূক্ষু বক্ষে নবাগত সস্তানের সাড়া ! স্মৃতির কুহকমন্ত্রে প্রিয়স্পর্শ যথা মনোরথে, দুবৎসরে দুর্গোৎসব ভরি’ তোলে ব্যথার আরতি ; কণ্টকে আকীর্ণ এই শুষ্ক রুক্ষ সংসারের পথে তেমনি সে কুহুধবনি আকস্মিক স্বরসরস্বতী । দওক অরণ্যতলে কবে শুনেছিন্থ ঐ স্বর, চমকিয়া মৃগশিশু চেয়েছিল বৈদেহীর পানে ; কত যুগ বয়ে গেছে, আজো তার অতৃপ্ত অন্তর— স্বৰ্গস্থধা পিয়াইয়া কালের নয়নে স্বপ্ন আনে ।