কিন্তু আমাদের দেশে তেমনভাবে ইষ্টার উপর দৃষ্টি পড়ে নাই । পূৰ্ব্বে যেরূপ ভাবে গালার কাজ চলিত এখনও সেরূপ ভাবেই গালার কাজ খুব লাভজনক ব্যবস । চলিতেছে—ইহার উন্নতির জন্য বেশী চেষ্টা হইতেছে না। বিশ্বভারতীতে শ্রীনিকেতনের কারুবিভাগে ইহার কিছু পরীক্ষা চলিতেছে, এবং তাহার ফলে এই ব্যবসায়ের ক্ষেত্র কিয়ং পরিমাণে বিস্তুত্ত হইয়াছে । মূলধনের অল্পতাহেতু যথেষ্ট পরিমাণে জিনিয প্রস্তুত হইতেছে না, এবং বাজারে ইহার চালান তেমন করিয়া হইতেছে না। বাংলা দেশে একমাত্র বীরভূম জেলার অস্তগত ইলামবাজার গ্রামেই ( বোলপুর ষ্টেশন হইতে এগার মাইল দূরে ) গালার ব্যবসায় প্রচলন আছে । বাংলার বাহিরে পঞ্জাব, গুজরাট ও সিন্ধু প্রদেশে গালার কাজ হয় । গালার কাজকে ইংরেজীতে বলে ল্যাকার ওয়ার্ক । চীন ও জাপানের গালার কাজ খুব উন্নত—এই কাজ ভুল নামে অভিহিত, কারণ আমাদের দেশ হইতে এ কাজের তফাৎ এই—আমাদের গাল! বা ল্যাক জৈবিক পদার্থ, আর ও দেশের গালা উদ্ভিজ্জ হইতে প্রস্তুত—গাছের রস হইতে উদ্ভূত। জাপানে ইহার নাম উরিশি, যে-গাছ হইতে এই রস পাওয়া যায় তাহার নাম উরিশি নো কি । . ব্ৰহ্মদেশে উরিশি থিশি নামে পরিচিত । বহু প্রাচীনকাল হইতে ভারতবর্ষে গালার কাজের প্রচলন আছে, কিন্তু ইউরোপে ইহার ব্যবহার প্রাচীন নয়। ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আহ্ম হইতেই ভারতবর্ষ হইতে ইউরোপে গালার চালান ধাইতেছে, আসবাবপত্রের বাণিশে ইহা ব্যবহৃত হয় । মেথিলেটেড় স্পিরিটে গাল। গলাইয়া “ফেঞ্চ পলিশ” প্রস্তুত হয় ; আলতা গালা হইতে প্রস্থত হয়, আলতা ইউরোপের বস্থব্যবসায়ে বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়, রেশম ও পশম রং করিতে আলভার প্রয়োজন । আলতার ইংরেজী নাম “ল্যাক ডাঙ্গ’ । হিন্দুরমণীর পদরাগ হিসাবে আমাদের দেশে আলতা সমাদৃত । মহাভারতের জতুগৃহ-দাহনের আখ্যায়িকায় গালার উল্লেখ আছে । জতুগৃহ ছিল কাঠের ঘর, তাহা গালার কাজে স্থশোভিত ছিল । গাল! সহজদাহ্য পদার্থ। ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমলে ইলামবাজার খুব সমৃদ্ধিশালী গ্রাম ছিল । ‘তুরি’ জাতীয় বহু পরিবার গালার কাজ করিয়া যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করিত । গালার ব্যবস। ‘তুরি’ জাতির মধ্যেই কেবল আবদ্ধ ছিল । পরিবারের স্ত্রীপুত্রকন্যা সকলেই এই ব্যবসায়ে কারিগরকে সাহায্য করিত। বহু সহস্র টাকার গালার কাজ ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সাহেবরা ইউরোপে চালান দিতেন । প্রায় ৪০৷৫০ বৎসর পূর্ব পয্যন্তও এই ব্যবসা কোন রকমে টিকিয়া ছিল । শেষাশেষি ইন্দ্রনাথ খাণ্ডাইল নামে সাহেবের এক কৰ্ম্মচারী গালার ব্যবসা এবং রপ্তানী চালাইয়াছিলেন, কিন্তু তাহার মৃত্যুর পরে এই ব্যবসা কেহই গ্রহণ করে নাই, কাজেই ইলামবাজারের গালার ব্যবসা ধ্বংসোপ্ত হইয়াছে। বাঙ ’দের উদ্যোগের অভাবে একটি চৈয়ারী ব্যবসা নষ্ট হইয় গেল। ইউরোপের
পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৭১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।