পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>○ 3 তার এক চৈতন্য ত্যাসিল, তাহাও আবার বিলোপ প্রাপ্ত হইল—কিন্তু একই গুণকৰ্ম্ম চলিয়া আসিতেছে । সুতরাং এ মতে গুণগ্রামই নিত্য এবং চৈতন্যই আগন্তক । জড়বাদীগণও ঐ কথাই বলেন তাহাদিগের মতে জড় ও জড়ের গুণ নিত্য চৈতন্য কখনও আসে, কখন চলিয়া যায় । সুতরাং উল্লয় মতেই চৈতন্য আগন্তুক ও অনিত্য । জড়বাদীগণই যে কেবল চৈতন্যের অনিত্যত সমর্থন করে তাহা নহে, জন্মাস্তরবাদেরও এই পরিণাম । অার একশ্রেণীর কৰ্ম্মবাদী বলেন “ঐ দ্বিতীয় চৈতন্য কৰ্ম্ম হইতে উৎপন্ন হয় নাই, এ চৈতন্য ব্রহ্ম হইতে আসিয়৷ ঐ গুণগ্রামের সহিত সংযুক্ত হইয়াছে।” চৈতন্তগুলি যেন কতকগুলি মাথা, আর গুণগ্রামগুলি যেন কতকগুলি কবন্ধ । মাথাগুলি জগতে ঘুরিয়া ঘুরিয়৷ বেড়াইতেছে আর সুযোগ দেখিতেছে কোন কবন্ধের ঘাড়ে চাপিব । যে যাহাকে পাইল, সে তাহার ঘাড়ে চাপিয়া বসিল । ধড় ও মাথা সম্মিলিত হইয়া মানবরূপে জন্মগ্রহণ করিল । একটি পরিচিত দৃষ্টান্তও দেওয়৷ যাইতে পারে । পূজার জন্য মূৰ্বি গঠন করা হয়। তাঙ্গর পপ হয় ইহার প্রাণপ্রতিষ্ঠা । গুণকৰ্ম্ম যেন ঐ দেবমূৰ্ত্তি, আর চৈতন্য যেন ঐ মূৰ্ত্তির প্রাণ। মূৰ্ত্তিতে যেমন প্রাণ প্রতিষ্ঠা, গুণকৰ্ম্মের সহিতও তেমনি চৈতন্সের সংযোগ । এস্থলে আমাদের বক্তব্য এই—অtষ্মীর সহিত আস্থার গুণের দ্বন্ধ অতি ঘনিষ্ঠ। এক অপর হইতে পৃথক থাকিতে পারে না। জ্ঞানী হইতে জ্ঞানকে, প্রেমিক হইতে প্রেমকে পৃথক করা যায় না। দেহের সহিত স্বাস্থ্যের যে সম্বন্ধ, আত্মার সহিত আত্মার গুণেরও তেমনি সম্বন্ধ । এক দেহ হইতে স্বাস্থ্য বাহির হইয়। যেমন অপর দেহে প্রবেশ করিতে পারে না, তেমনি জ্ঞান প্রেমাদি এক আত্ম হইতে বাহির হইয়। অপর আত্মীয় প্রবেশ করিতে সমর্থ হয় না। আজ তুমি এক পোষাক ব্যবহার করিলে, কাল আমি সেই পোষাক ব্যবহার করিলাম, তৃতীয় দিন তৃতীয় একব্যক্তি সেই পোষাক ব্যবহার করিল, এপ্রকার হয়। কিন্তু জ্ঞান প্রেম প্রভূতিকে পোষাকের মত বদল করা যায় না। গুণের সঙ্গে আত্মার প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩২১ . [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড • অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। আত্মা অবিভাজ্য ; চৈতন্য একস্থলে রহিল এবং ইহার গুণগ্রাম অন্য স্থলে রহিল, এরূপ হয় না । জন্মাস্তুরবাদীগণ অবিভাজ্য আত্মাকে বিভাগ করিয়া পুনর্জন্মের কল্পনা করেন । গুণগ্রাম হইতে চৈতন্তের উৎপত্তি হয় এ মত যেমন গ্রহণ করা যায় না, তেমনি চৈতন্য আসিয়া কোন গুণকৰ্ম্মে প্রতিষ্ঠিত হইল ইহাও গ্রহণের উপযুক্ত নহে । (5) গুণকৰ্ম্মের পুনর্জন্মবিষয়ে আমাদিগের আর একটি বক্তব্য এই ঃ– একজনের মৃত্যু হইল, তাহার গুণ ও কৰ্ম্ম রহিয়৷ গেল । এই গুণকৰ্ম্মেরই যে পুনর্জন্ম হইতেছে ইহা প্রমাণ করা আবশ্যক । শনির জীবিতাবস্থায় তাহার কতকগুলি গুণ দেখা গিয়াছিল ; যদি দেখা যায় রবির জন্মের সময়েই এইসমুদয় গুণ তাহার জীবনে প্রকাশিত হইতেছে, তবেই বল! শুদ্ধ যে শনির গুণ রবিতে পুনর্জন্ম পাইয়াছে। কিন্তু জগতে এ প্রকার কি ঘটিয়া থাকে ? এ প্রকার যখন দেখা যায় না তখন কেমন করিয়া বলিব যে শনির গুণ এবং কৰ্ম্মই জন্মান্তর লাভ করিয়াছে ? জন্মান্তরবাদী হয়ত বলিবেন “সেইসমুদয় গুণকৰ্ম্মই যে রবির জীবনে প্রকাশিত হইবে তাহা নহে, যে-পরিমাণ শক্তি থাকিলে ঐসমুদয় গুণকৰ্ম্ম উৎপন্ন হইতে পারে কিংবা ঐ সমুদয় গুণকৰ্ম্ম হইতে যে-পরিমাণ শক্তি লাভ করা যাইতে পারে, রবির জীবনে সেই-পরিমাণ শক্তিই প্রতিভাত হয় ।” আমাদের বক্তবা এই—মনে কর ঐ শক্তির মূল্য ২০ । মরিবার সময় শনির শক্তি ছিল ২০, জন্মিবার সময় রবির শক্তি হইল ২০ । দেখা গেল রবির জন্মের পূৰ্ব্বে রাহু নামক একজন লোকের মৃত্যু হইয়াছিল, তাহারও শক্তির পরিমাণ ছিল ২০ । এখানে জিজ্ঞাস্য, কাহার শক্তি অর্থাৎ গুণকৰ্ম্ম রবিতে পুনর্জন্ম লাভ করিয়াছে ? কেহ বলিবে নির কৰ্ম্মই রবিতে জন্ম লাভ করিয়াছে, অপর কেহ হয়ত বলিবে রাহুর কৰ্ম্মই রবির্তে প্রকাশিত হইয়াছে। এই দুইটি মতের কোনটি সত্য? একটা দৃষ্টান্ত গ্রহণ করা যাউক। রবি এক মহাজনের নিকট