পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ঘর জালিয়ে দেবে বলছে । Fil ?” হরিশ একটা উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিল,—“পরাণ, তোমরা মনে কর আমি ঘরের মধ্যে পড়ে আছি কাজেই কিছুই বুঝতে পারি না, দেখতে পাই না, যত দেখ বোঝ তোমরা......হারে বোকী ! তোমরাই বরং দেখতে পাওনা, প্রতিহিংসা যে তোমাদের কাণ ক’রে রেখেছে, দেখবে কি ? তোমরা দেখতে পাও শুধু পরের দোষটা, নিজেদের দেখবার তোমাদের সামর্থ্য নেই! লোকে পরের কুঁজ দেখে হাসে কিন্তু দেখতে পায় না আপনার পিঠে কত বড় কুজ রয়েছে । জগতের নিয়মই এই, শুধু তুমি আমি নই, জগত সুদ্ধ এমনি কাণ, একচোখে ! তোমরা বল ‘অমুক এই অন্যায় করেছে ?—কি ক’রে যে বল তা বুঝতে পারি না। এক হাতে কখনও তালি বাজে ? তুমি যদি না কথা কও আ- সে একা কতক্ষণ বকবে ? দুজনের দোষ না থাকলে কখলও.একটা ঝগড়া হতেই পারে না। পরের মাথার টাকট। লোকের চোখে খুব শিগগির পড়ে কিন্তু নিজের মাথায় যে তার দ্বিগুণ টাক রয়েছে তা সে দেথতেও পায় না। রমেশ যদি এক মন্দ হত, আর তুমি আমি যদি তা না হতাম, তা হ'লে রমেশের সাধ্যি কি সে তোমার সঙ্গে ঝগড়া করে ? প্রথমে তার দাড়ি টেনে ছিড়লে কে বাবা ? আদালতের পথ দেখালে কে তাকে ? এত করেও তুমি তার ঘাড়ে সব দোষট। চাপাতে চাও পরাণ ? তোমরা সংসারের ভার নিয়েই একটা বিষম ভুল করেছ। আমাদের সময় কিন্তু এমন ছিল ন। —আমাদের শিক্ষণও এমন নয়। এ তোমরা ভুল পথে চলেছ। আমরা কেমন ক’রে সংসার করতুম শুনবে ? ঠিক প্রতিবেশীর সঙ্গে প্রতিবেশীর যেমন ব্যবহার হওয়া উচিত রমেশের বাপের সঙ্গে আমার তেমনি ব্যবহার ছিল । রমেশের বাপের কিছু দরকার হ'লে, রমেশকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিত ; রমেশ এসে বলত ‘কাক আমাদের অমুক জিনিষটার দরকার পড়েছে।’• আমি বলতুম নিয়ে যাও না বাবা তোমার খুড়িমার কাছ থেকে । আবার আমার কিছু দরকার হ’লে তোমাকে বলতুম 'য। ত পরাণ, তোর রমণ জ্যাঠার কাছ থেকে অমুক এততেও তার দোষ হ'ল আগুনের ফুলকি

  • > 8 X

জিনিষটা চেয়ে আন ত ।” তখুনি রমণদ। তা পাঠিয়ে দিত । কেমন কাটিয়েছি আমরা বল দেখি ? সংসারেও বেশ সুথ ছিল, রাতদিন এমন খিটিমিটি ছিলনা। আর এখন ?......লোকে বলে কুরুক্ষেত্রে নাকি একটা খুব বড় যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তোমাদের দুজনের মধ্যে নিত্যি এই যে লড়াই চলেছে কুরুক্ষেত্ত্বের যুদ্ধ এর চেয়ে আর বেশী বড় কি ? অারে ছ্যাঃ ছ্যtঃ ! আমনি ক’রে কি লোকে সংসার করে গা ?......পূৰ্ব্বজন্মের অনেক পাপ না থাকলে এমনটা হয় না। তুমি বড় হয়েছ, সংসারের কৰ্ত্তা, এখন য। কিছু করবে সবের ঝুকিই তোমার ঘাড়ে পড়বে। এমনি ক’রে বাড়ীর ছেলেমেয়েগুলোকে কি পথ দেথ{চ্চ ত। একবার ভেবে দেখেছ কি ? সে দিন দেথি তোমার নাতি স্বরে পাড়ার লোককে যাচ্ছেতাই গাল পাড়ছে, আর দোরের পাশে তার মা দাড়িয়ে মজা দেখছে আর হাসছে । এমন করে কি ছেলেমেয়ে মানুষ হয় ? তাদের ভাল মন্দ, মুকু'র জন্তে তুমি দায়ী তা জান কি ?......নিজের পরকালের কথাটা একবার ভেবে দেখছ কি ? পীরের জন্তে কি পারJণি ৰিচ্ছ ? কেবল কতকগুলো মিথ্যা কথা, প্রবঞ্চনা অার প্রতিহিংসা ! একটাও জিনিযের মত জিনিধ নিয়েছ কি ?......কি ; কথা কচ্চ না যে ? যা বলুম সেগুলো কানে গেল কি ?” পরাণ নীরবে পিতার কথা গুলা শুনিয়া যাইতেছিল। বৃদ্ধ হরিশ একসঙ্গে অনেকগুলা কথা বলিয়া হাপাইয়া গিয়ছিল। তাহার গলা শুকাইয়া গিয়াছিল, বহুক্ষণ ধরিয়া সে কাশিতে লাগিল । কতক্ষণ পরে কাশি থামিলে সে আবার বলিল,—“ভাব দেখি বাপু, এ বছর এই মামল মকদ্দমীয় কতগুলো টাক; জলের মত থরচ হ’য়ে গেল । সত্যি করে বল দেখি পরাণ, এ কুরুক্ষেত্র আরস্ত হবার আগে ভাল ছিল, না এট আরম্ভ হ'য়ে ভাল হয়েছে ? এ বছর যে আউস ধানটা রোয়ই হ’ল ন। তার কারণ কি বলত ? শুধু এই ঝগড়ার জন্যেই না ? в в в * * * * * * তাই বলচি বাপু, নিজের কাজে মন দাও ; আগেকার মত ছেলেদের,নিয়ে মাঠে কাজ আরম্ভ কর, মনে শান্তি পাবে। কেউ যদি অনিষ্ট করে, তবু ক্ষমা কোরে তাকে, ভগবান খুসি হবেন, প্রাণেও শান্তি পাবে।”