পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] পিঞ্জরের বাহিরে ( গল্প ) > ভাই ললিতা, অনেক দিলু তোমার কোনো খবর পাই নি ; আমিও তোমায় চিঠি লিখতে পারি নি। অামার, জীবনের ওপর দিয়ে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে ; আমি অনেক রকম নুতন অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। সেই-সমস্ত খবর তোমায় ছাড়া আর কাকেই বা বলি ? তাই তোমায় সব কথা খুলে বলবার জন্তে মনটা আমার ব্যাকুল হয়েছে। জামার বাবার মৃত্যু হয়েছে। এখন আমার মা, আর ছোট ভাই-বোন দুটির অভিভাবক আমিই। এখন বুঝতে পারছি মেয়েমানুষ বাস্তবিকই অবলা। কবির। তাদের লতার সঙ্গে তুলনা করে—সদাই দুৰ্ব্বল, পরনির্ভর ; একটু তাত লাগলেই , আমূলে নেতিয়ে পড়ে, একটু আঁচ লাগলেই মুষড়ে যায়, একটু ধাক্কা খেলেই ধূলায় লুষ্ঠিত হবার আশঙ্কা । আমি তাদের নদীর স্রোতের সঙ্গে তুলনা করি—তটের বন্ধনের মধ্যে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণই তার গতি শোভন মুন্দর ; ততক্ষণই প্রাণের ও প্রাচুর্য্যের, আনন্দের ও সৌন্দর্য্যের হাস্যধারা ; ততক্ষণই তার সম্মুখে অনন্তের সঙ্গে মিলনের সস্তাবনা ; কিন্তু যেই সে কুল ছাড়িয়ে উপচে ছড়িয়ে পড়ে, অমনি সে নিজেকে ত হারায়ই, পরকেও ডোবায়,—চারিদিককার আনন্দ, সৌন্দর্য্য, প্রাণের থেলা নষ্ট ভ্রষ্ট করে ফেলে। এমনই অক্ষমতা নিয়ে আমরা জন্মেছি, বিশেষ ত এই বাংলা দেশে । আমার মতন এমন একজন অক্ষমার ঘাড়ে একটি অসহায় সংসারের ভার ভগবান চাপিয়ে দিয়েছেন । আমাকে সংসারের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হবে, পরের উপর নির্ভরের আশা ছেড়ে পরের ভর সইতে হবে । অল্পের সন্ধানে আমাকে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরুতে হয়েছে। কিন্তু কোথায় অন্ন, কেমন করে সংগ্রহ করতে হয়, আমি কি ছাই জানি ? আমরা অন্নপূর্ণ ততক্ষণই যতক্ষণ পুরুষেরা অন্নে ভাণ্ডার পূর্ণ করে রাখে। আমরা চিরকাল পিঞ্জরের ভিতর বন্ধ থাকি, যারা আমাদের পিঞ্জরের বাহিরে SNe(t পোষে তার তাদের খেয়াল-মত যখন খুসি একটু ছাতু ছোলা দুধ জল দিয়ে যায়, আর আমরা দিব্য নিশ্চিন্ত হয়ে মধ্যে মধ্যে শিশ দিয়ে গান করি আর গানের সমের ঘরে চুমকুড়ি দি । পিঞ্জরের ভিতর বন্ধ থেকে প্রাণটা যে ইপিয়ে না ওঠে এমন নয় ; শিকের ফঁাকে ফঁাকে মুক্ত আকাশের নীল চোখের ইসারা আর তরুপল্লবের হাতছানি দেখে মনট। খুবই ಕಿಳ್ನಕಿಲ್ಲ করে । কিন্তু কোনো দিন খাচার দরজা খোলা পেলেও উড়তে সাহস হয় না, বুক দুরদুর করে, পাখা যেন অবশ হয়ে আসে। যিনি আমাদের খাচার মালিক, তিনি যদি কোনো দিন দয়া করে থ"াচার দরজা খুলে ধরে’ উড়ে যেতে বলেন তখন মালিকের উদেষ্ঠ সম্বন্ধেও সন্দেহ হয় । ভয় হয় অত বড় ফাকা জায়গায় আমি এতটুকু ভীরু প্রাণী কোথায় পাব একটু আশ্রয়, আর কোথায় পাব ক্ষুধার অল্প তৃষ্ণার জল । অপরিচয়ে সোজা পথটাকেও বাক৷ লাগে, নিরীহ জিনিসটাকে দেখে ও ভয় লাগে, স্বাভাবিক ঘটনাকেও বিপদের সুচনা বলে আশঙ্কা হয় । তাই যদি কোনো দিন আমাদের মালিকের অভাব হয় আমনি আমরা পিঙ্গরের ভিতর বসে বসে’ঠায় শুকিয়ে মরি, বাইরে বেরিয়ে বঁচিবার চেষ্টা করতেও পারিনে । আমি ভাই, অসাধ্যসাধন করে ফেলেছি, বাইরে বেরিয়ে পড়েছি। বাইরে বেরিয়েই আমার সব চেয়ে বেশী ভয় লেগেছিল ঐ পুরুধগুলোকে দেখে। নিঃসম্পর্ক পুরুষের সঙ্গে ত আমাদের মোটেই পরিচয় নেই। বাপ-খুড়োদের কোলেই আমরা জন্মাই, আর ভাই-ভাইপোদের আমরা কোলেই পাই ; তাদের সঙ্গে পরিচয় আমাদের পাতাতে হয় না। পরিচয় পাতাতে হয় যে-একটি অচেনা লোকের সঙ্গে, তাকে দেখে প্রথম-প্রথম ভয় লাগলেও সে একলা বলে’ সাহস থাকে । কিন্তু একেবারে পুরুষের হাটের মধ্যে ছেড়ে দিলে আমাদের শোটা হয় সিংহের খাচার মধ্যে রোমান মাডিয়েটরের মতন—যত বড়ই বীর আর সাহসী হোক, মৃত্যু তার অনিবাৰ্য্য, পরাভব তার জানা কথা। আমার ভারি 'আশ্চৰ্য্য লাগে যে সেকালের রাজকন্যার কেমন করে’ স্বয়ম্বর-সভায় নিজেদের বর