পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪৮ বলিয়াছেন । বাস্তবিক, নদী, পৰ্ব্বত, গ্রাম, নগর, দুর্গ, বন্দর জড় পদার্থ মাত্র ; ঐতিহাসিক স্মৃতিই তাহাদিগকে সজীব করে, শক্তিশালী করে । টেম্স্ কত মাইল লম্বা, কত গজ চৌড়া, কত হাত গভীর, উহার জল নিৰ্ম্মল বা ময়লা, তাহার দ্বারা উহার গৌরবের পরিমাণ নির্দেশ করা যায় না। উহার বক্ষে, উহার তীরে, উহার মোহানায় কত পুরুষ, কত নারী কত কীৰ্বির স্মৃতি রাথিয়া গিয়াছেন । এই-সকল স্মৃতিই টেমূসের প্রাণ । কিন্তু কেবল টেম্সই কি “তরল ইতিহাস ?” আমরা জলময়া গঙ্গাকে চোখে দেখি, হাতে স্পর্শ করি, তাহাতে স্বান করি ; কিন্তু ইতিহাসরূপিণী গঙ্গার কথ। ভবি কি ? গঙ্গার জল স্পর্শ করিবামাত্র ঐতিহাসিক স্মৃতির বিদ্যুৎ শিরায় শিরায় থেলিতে থাকে কি ? গঙ্গোত্রী হইতে সাগরসঙ্গম পৰ্য্যন্ত নন তপোবনে, আশ্রমে, দুর্গে, ঘাটে, দেবালয়ে, সমাধিমন্দিরে, গ্রামে, নগরে, কত জ্ঞান, কত ত্যাগ, কত ধ্যান, কত স্বপ্ন, কত তপস্যা, কত শ্রম, কত শৌর্য্যের স্মৃতি জড়িত রহিয়াছে, সে-সব কথা আমাদের মনে পড়ে কি ? আবার, ঐ-সকল স্থানের কত বিলাসিত, কত আলস্ত, কত পশ্বাচার, কত কাপুরুষত, কত স্বার্থপরতা ও কত অমাতুষতার কালিম জাতীয় জীবন-গঙ্গাকে ধুইয়া ফেলিতে হইবে, তবে আমাদের ইতিহাস আবার শুভ্ৰ, শুচি, নিষ্কলঙ্ক হইবে, তাহ কি আমরা ভাবি ? গঙ্গাকে দেখিতে, গঙ্গার কথা শুনিতে, গঙ্গtয় মান করিতে নিতে হয় । গঙ্গাযমুনা সঙ্গম এই প্রয়াগে ভারতের ইতিহাসের স্রোত অনেকবার বঁকে ফিরিয়া নূতন পখে গিয়াছে। ঋগ্বেদে ইহার উল্লেখ আছে । বুদ্ধদেব এখানে প্রচার করিয়াছিলেন । অশোক প্রয়াগ দর্শন করিয়া এখানে স্ত,প নিৰ্মাণ করিয়াছিলেন, এবং বৌদ্ধধৰ্ম্ম বিস্তারের জন্য বুধমণ্ডলীর সভা আহবান করিয়াছিলেন। র্তাহার একটি স্তস্ত দুর্গের মধ্যে অবস্থিত আছে । রাজা হৰ্ষবৰ্দ্ধন এখানেই তাহার সাম্রাজ্যের প্রবাসী— পৌষ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড পাঁচ বৎসরের সঞ্চিত সমুদয় ধনসম্পত্তি দান করিয়া নিঃস্ব হইয়াছিলেন। চীন পৰ্য্যটক যুয়ান চাং উহার ভ্রমণবৃত্ত্বান্তে এই অপূৰ্ব্ব দানষজ্ঞের বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন। কুস্তমেলা প্রয়াগে যে কত শতাব্দী ধরিয়া হইতেছে, তাহায় ইয়ত্তা নাই। মুসলমান-রাজত্বকালেও প্রয়াগের প্রাধান্য স্বীকৃত হইয়াছিল। এখানে এথন যে দুর্গ আছে, সম্রাট আকবর তাহা নিৰ্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। এখানেই ১৭৬৫ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় শাহ আলম বাদশাহ ঈষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানীকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানী প্রদান করেন । তখন প্রকৃত প্রস্তাবে ইংরেজ-রাজত্বের আরম্ভ হয়। তাহার পর সিপাহী যুদ্ধের শেষে ১৮৫৮ খৃষ্টাব্দে মহারাণী ভিক্টোরিয়া ঈষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পাণীর হাত হইতে সাক্ষাংভাবে ভারত শাসনের তার গ্রহণ করেন । , ভারতবর্যের ইতিহাসের স্রোত যে যুগে যুগে নুতন নতন দিকে গিয়াছে, তাহাকে কেবল রাষ্ট্রীয় পরিবর্তন বা রাজবংশের পরিবর্তন মনে করা উচিত নয়। সঙ্গে সঙ্গে ধৰ্ম্মে, সমাজে, সাহিত্যে, শিল্পে, জাতীয় জীবনের গভীরতম প্রদেশে পরিবর্তন ঘটিয়াছে। উত্তরভারতে ও দক্ষিণভারতে কেবলমাত্র প্রাচীন হিন্দু সমাজের রীতিনীতি প্রথ। ব্যবস্থা লক্ষ্য করিলেই এই সত্যের উপলব্ধি হয়। ভারতবর্ষের ইতিহাসের স্রোত কেন নুতন নূতন দিকে প্রবাহিত হইল, প্রয়াগে আসিলে সে চিন্তা প্রাণে উদিত হয়। প্রত্যেক পরিবর্তনের সময়, পুরাতন কি দিয়া গেল, কি দিতে না পারায় তাহার অন্তধর্ণন হইল, নূতনের কি শক্তি কি প্রদাতব্য তাহাকে প্রতিষ্ঠিত করিল, আবার কি কারণে তাহাও পুরাতনের ভগ্নস্থ,পের মধ্যে গিয়া পড়িল, এ-সকল কথা অসুধাবনযোগ্য । নদী চিরকাল এক থাত দিয়া বহে না । পুরাতনে জল স্তির পঙ্কিল হয়, চড়া পড়ে, নূতন খাত দিয়া স্রোত বহিতে থাকে। জাতীয় জীবনের স্রোতেরও এই দশা। প্রাচীন কালের নানা পরিবর্তনের কারণ চিন্তা করিলে ভবিষ্যতে স্রোত কোনদিকে বহিবে, তাহ কতকটা অনুমান করিতে পারিলেও ঠিকৃ কিছু বলা যায় না। মনে হওয়ায় লর্ড মলী, টিভেলিয়ান ও তিনি স্ব স্ব পদ ত্যাগ করিয়া- * প্রয়াগের পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক বৃত্তাস্ত "Prayag or ছেম | Allahabad” নামক পুস্তকে লিখিত আছে।