পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ বাণিজ্যিক ঈর্ষn, ঐতিহাসিক প্রতিহিংসার ভাব ইত্যাদি কোন একট। যুদ্ধের কারণ ভবিষ্যতে ঘটিতে পারে না ? তাহাদের কেহই কি, বর্তমান যুদ্ধের ফলে হীনবল কোন দেশের কিছু সম্পত্তি কড়িয়া লইবার জঙ্গ কিম্ব প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিবার জন্য ভবিষ্যতে যুদ্ধ করিতে পারে না ? কিছুকাল পূৰ্ব্বে বন্ধান রাজ্যগুলি দু বার যুদ্ধ করিয়াছে ; একবার তাহদের সাধারণ শক্ৰ তুরস্কের বিরুদ্ধে ; আর একবার, তুরস্ক পরাজিত হইবার পর, পরস্পরের মধ্যে । বৰ্ত্তমান যুদ্ধ শেষ হইবার পর্ব এরূপ কিছু একটা হওয়া সম্পূর্ণ অসস্তব, কে বলিতে পারে ? বর্তমান যুদ্ধে একদিকে জামেনী ও অষ্ট্রিয়। হাঙ্গেরী, এই দুটি সাম্রাজ্য ; অপর পক্ষে সার্ডিয়া, মণ্টিনিগ্রে', বেলজিয়ম্, ফ্রান্স, জাপান, রুশিয়া, ও ইংলণ্ড, এষ্ট সাতটি রাজ্য ও সাম্রাজ্য । তুরস্ক সম্প্রতি যোগ দিয়াছে ; উহা ধর্তব্যের মধ্যে নয় ; ধরিলে ও একদিকে তিন ও অন্ত দিকে সাত । সুতরাং যুদ্ধের শেষে যখন জামে নী পরাজিত হইলে ( ষেরূপ সংবাদ আসিতেছে তাহাতে তাহাই স্ত্র খুব সস্তব মনে হইতেছে ), তখন জামেনরা কখনই এরূপ মনে করিবে ন! যে তাহার। তাহাদের শত্রুপক্ষীয় কোনও একটি জাতির চেয়ে যুদ্ধে নিকৃষ্ট । কারণ এক একটি জাতির বিরুদ্ধে ত এক একটি জাতির যুদ্ধ হইতেছে না ; জলযুদ্ধেও কোন কোন স্থলে ইংলণ্ড ও জাপান একযোগে জার্মেনীকে হারাইতেছে । সুতরাং আপাততঃ পরাস্ত হইলেও জর্মেনী মনে মনে কখনও আপনাকে বিশেয কোন একটি জাতির চেয়ে ছোট মনে করিবে না । এখন যেমন দল বা ধিয়া অন্তের তাহার দর্প চূর্ণ করিবার চেষ্টা করিতেছে, ভবিষ্যতে সেও তেক্ষুনি দল বালিয়। নিজের নষ্ট শক্তির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা পারে। কারণ কোন রাষ্ট্রীয় দলই চিরস্থায়ী নহে । ভাঙ্গ গড়া বরাবর চলিয়া আসিতেছে । একটা কথা উঠিতে পারে, যে, জার্মেনীর স্বতন্ত্র অস্তিত্বই লুপ্ত হইতে পারে । কিন্তু তাহা সম্ভবপর মনে হয় না। ইউরোপের বাহিরে দেশকে-দেশ কবলিত করা এখনও ইউরোপের মতে বৈধ হইলেও, ইউরোপে এখন আর সেট (জার্মেনী রুশিয়া ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে পোলাগু ভাগের মত ) ঘটিলে বলিয়। মনে হয় না। জার্মেনীর উপনিবেশগুলি এবং তাহার অধিকৃত পোলাণ্ডেল অংশ এবং এলসাস-লোরেন বেদখল হইতে পারে বটে। অতএব জার্মেণীর স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকিবার সস্তাবনা, এবং তাহ থাকিলে এই যুদ্ধই শ্যে যুদ্ধ হইবে না, বলিয়। মনে করি । ইউরোপীয়ের যে-সকল দেশের আদিম বা বৰ্ত্তমান অধিবাসী বা প্রভু নহে, সেগুলি সব লা-ওয়ারিশ প্রবাসী—পৌষ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড সম্পত্তি, প্রবলের ভোগ্য, এই বিশ্বাস যতদিন ইউরোপে থাকিবে, ততদিন এইসব ল-ওয়ারিশ দেশের রাজত্ব ও বাণিজ্য লইয়াও যুদ্ধের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা থাকিবে। যুদ্ধের আসল কারণ মানুষের মনে । লোভ, ঈর্ষ্যা, হিংসা, বিজ্ঞাতি-ও-বিদেশবিদ্বেষ, ভিন্ন ধৰ্ম্মীর প্রতি অবজ্ঞা ও তাহদের জন্য নরকে স্থাননির্দেশ, স্বদেশপ্রেমের মানে অন্য জাতিকে খাট করা বা তাহাকে বিদ্বেষের চক্ষে দেখা এইরূপ ধারণ,—এই-সব মানুষের মধ্যে থাকিতে যুদ্ধের বিলোপ কেমন করিয়া হইবে ? আগুনের দ্বারা আগুন নিবাণ যেমন অসম্ভব, যুদ্ধের দ্বারা অপ্রেমের দ্বারা যুদ্ধের বিনাশসাধন তেমনি অসম্ভব । মুখে নয়, কাজে, আচরণে, যদি প্রবল ও দুৰ্ব্বল জাতির। প্রেম ও মৈত্রীর সাধনা করেন, তাহার জন্য যদি রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক প্রাধান্সের মত বিশাল স্বাথও ত্যাগ করিতে প্রস্তুত থাকেন, তবেই জাতিতে জাতিতে যুদ্ধের সম্পূর্ণ বিলোপ কল্পনা করা যাইতে পারে। যুদ্ধের ব্যঙ্গচিত্র (৩১৫-৩১৬ পৃষ্ঠা ) যুদ্ধ এত সামাই কারণে ঘটে যে মনে হয় আপনি আপনিই ঘটিল ; কিন্তু যুদ্ধ থামান বড় কঠিন। অপ্রেমের আগুন জ্বালান খুব সোজা ; আগুন নিবান শক্ত। প্রথম ব্যঙ্গচিত্রের ইহাই ইঙ্গিত । দ্বিতীয় ব্যঙ্গচিত্রের ভালুক রুশিয়া এবং শিকারী জার্মেনীর সম্রাট । মার্কিন জাতিকে পরিহাস করিয়া আঞ্চল সাম্ বা সাম্ চাচা বলা হয়। বর্তমান যুদ্ধে, উভয় পক্ষই তাহার অনুমোদন পাইতে চেষ্টা করিতেছে । এইজন্ত বিবদমান জাতিদিগকে বালক সাজাইয়া, তাহারা সামূচাচার কাছে, “ও ঠিক নিয়মমত খেলছে না,” পরস্পরের নামে এইরূপ নালিশ করিতেছে বলিয়। ৩য় ব্যঙ্গচিত্রে দেখ ন হইয়াছে । পঞ্চম ব্যঙ্গচিত্রে ইঙ্গিত করা হইয়াছে ধে যুদ্ধশেষে সব রাজাই সৰ্ব্বস্বাস্ত হইয়। কাণেগীপ্রদত্ত বিনি পয়সার ভোজ থাইবার জন্য কাড়াকড়ি কfরবে । যুদ্ধট। সে বাওবিক স্বভাবতই ভীষণব্যাপার, হাজার চেষ্টা করিলেও তাহাকে সভ্য সুন্দর করা যায় না, তাহাই ষষ্ঠচিত্রে ব্যক্ত হইয়াছে। সব্বশেষ পৃষ্ঠার নীচে যে ছবিটি দেওয়া হইয়াছে তাহাতে জামেনী ও তাহার সম্রাটকে এই বলিয়া ব্যঙ্গ করা হইয়াছে যে তাহাদের অভিপ্রায় সমুদয় পৃথিবীকে জামে নগ্ৰস্ত করিয়া তাহার উপর জামেন সম্রাটের ছাপ মারিয়া দেওয়া। এইজন্ত পৃথিবীটা ক্রমবিকাশক্রমে জার্মেন সম্রাটের চেহারা পাইয়াছে, এইরূপ ছবি আঁকা হইয়াছে।