পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩8 দত্তের “প্রাচীন ভারতীয় সত্যতার ইতিহাস” এই প্রণালীতে লিখিত । তিনি মেগাস্থেণীস, হুয়েনসাং ফাহিয়ান, প্রভূতি বৈদেশিক লেখক হইতেও অনেক তত্ত্ব সঙ্কলন করিয়াছেন, কিন্তু জাতীয় সাহিত্য হইতে তিনি যে উপকরণ সংগ্ৰহ করিয়াছেন, তাহার তুলনায় উহার পরিমাণ অল্প । প্রাচীন ভারতের সাহিত্য—উহার তিন বিভাগ । প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ভাষাভেদে সংস্কৃত, পালি ও প্রাকত, এবং ধৰ্ম্মভেদে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন এই তিন ভাগে বিভক্ত হইতে পারে । ইতিহাস রচনার দিক্ হইতে আমরা উহাকে অপররূপে তিন ভাগে বিভক্ত করিতেছি। ( ১ ) বেদ, উপনিষদ, ধৰ্ম্মপদ, ভগবদগীতা, মনুসংহিত। প্রভূতি ধৰ্ম্মগ্রন্থ । (২) রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, ললিতবিস্তর, মহাবংশ, জাতক ও স্থাবলি, রাজতরঙ্গিণী প্রভূতি অল্পাধিক ঐতিহাসিক ভিত্তিবিশিষ্ট গ্রন্থ । (৩) রঘুবংশাদি কাব্য, অভিজ্ঞানশকুন্তলাদি নাটক, কাদম্বরী প্রভূতি গদ্য সাহিত্য । এতষ্ঠির দর্শণ, ও স্থ, আয়ুবেদ প্রভূতির পরোক্ষ ঐতিহাসিক মুল্য আছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কামন্দকীয় নীতিসাব প্রভূতি রাজনীতির আলোচনায় প্রয়োজনীয় । গ্রস্থের কাল ও স্তর । কি স্তু এই-সকল গ্রন্থ হইতে প্রাচীন তারতের ইতিহাস সঙ্কলন করিতে হইলে সৰ্ব্বাগ্রে দুইটি কার্য্য একান্ত আবশ্যক । প্রথমতঃ, প্রত্যেক গ্রন্থের রচনা-কাল নির্ণয় ; দ্বিতীয়তঃ, উহার স্তর-নির্ণয় ; অর্থাৎ উহ। একজনের রচিত কি না, এককালে রচিত কি না, উহাতে প্রক্ষিপ্ত কিছু আছে কি না, থাকিলে তাহা কোন সময়ের রচনা --- ইত্যাদি প্রশ্নের মীমাংসা । ( ১ ) ইয়ুরোপীয় পণ্ডিতের প্রসিদ্ধ প্রসিদ্ধ পুস্তকগুলির কালনির্ণয়ে প্রয়ামী হইয়াছেন, কিন্তু তাহাদিগের সিদ্ধান্তগুলি সকলের মনঃপূত হয় নাই । যেমন ঋগ্বেদ। মোক্ষমূলর প্রভৃতি উহার রচনাকাল খৃঃ পূঃ তিন সহস্র বৎসরের পুৰ্ব্ববৰ্ত্তী বলিয়া স্বীকার করিতে চাহেন না ; শ্ৰযুক্ত বালগঙ্গাধর তিলক ওরায়ণ ( Orion ) গ্রন্থে প্রবাসী--পৌষ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড প্রমাণিত করিতে চেষ্টা করিয়াছেন যে ঋগ্বেদ ঈশা অন্ততঃ ছয় হাজার বৎসর পূৰ্ব্বে রচিত হইয়াছিল উভয়কালের ব্যবধান অনেক । কেহ বলেন, ঋগ্বে মানবের আদিম সাহিত্য ; কেহ বলেন, উহা চীনদেশীয় মিসর দেশীয়, আসীরীয়, এমন কি ইহুদী সাহিত্যেরও পরবর্তী। যতদিন এদেশীয় পণ্ডিতেরা ইয়ুরোপীয় প্রণাল অনুসারে এই-সমুদয় বিসংবাদী মতের মীমাংসা ন করিবেন, ততদিন ভারতীয় সাহিত্য হইতে সৰ্ব্বজনসম্মত ঐতিহাসিক তত্ত্বনির্ণয় সুদুরপরাহত থাকিবে । (২) ঋগ্বেদ, রামায়ণ, মহাভারত প্রভূতি গ্রন্থগুলির স্থর-নির্ণয়-কাৰ্য্যটি এখন পর্য্যন্ত আরব্ধই হয় নাই, একথ বলিলে কিছুমাত্র অত্যুক্তি হয় না। দুই একটা দৃষ্টা ২ দেওয়া যাইতেছে । মহাভারতখানি যে-আকারে আমরা প্রাপ্ত হইয়াছি, তাহাতে উহা খুলিলেই দেখা যায়, উহাতে অনেক কৰ্ম্মীর হাত আছে। উহার বহু অংশই যে প্রক্ষিপ্ত, তাহ একান্ত শাস্ত্রান্ধ ব্যক্তিকেও বুঝাইয়। বলিতে হইবে না। কিন্তু প্রকৃত, আদিম ও অকৃত্রিম মহাভারত কতখানি, তাহ। আজ ও কেহ প্রদর্শন করেন নাই, করিতে যত্নবানও হন নাই। উহাতে কত বিভিন্ন স্তরের সভ্য তার নিদর্শন রহিয়াছে, কিন্তু আজও এদেশে আপামর সাধারণের বিশ্বাস, উহ। আগাগোড়াই বেদ ব্যাসের রচনা । তারপর রামায়ণের কথা । মহা ভারতের অনেক স্থল প্রক্ষিপ্ত, ইহা বরং চিরস্মরণীয় বঙ্কিমচন্দ্র প্রভৃতি স্বীকার করিয়াছেন, কিন্তু রামায়ণে কিছু প্রক্ষিপ্ত আছে কিনা, সে প্রশ্নই এতদিন এদেশে উত্থাপিত হয় নাই । * ইয়ুরোপীয় পণ্ডিতেরা ইলিয়ডের সহিত রামায়ণের তুলনা করিয়া থাকেন। ইলিয়৬ সম্বন্ধে কি দেখিতে পাই ? উহাতে ১৫৬৮১ পংক্তি । উহার প্রত্যেকটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পরীক্ষিত হইয়াছে । কোন পংক্তি হোমারের লিখিত, কোন পংক্তি পরে প্রক্ষিপ্ত হইয়াছে, ইলিয়ডের কোন কাহিনী প্রথমে রচিত হইয়াছিল, কোন কাহিনী পরে ষোজিত হইয়াছে, ইত্যাদি প্রশ্নগুলি নিঃশেষে

  • রামায়ণের উত্তর কাও যে পরে সংযোজিত তাহ শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি অনেকেই ইঙ্গিত করিয়াছেন ।

-প্রবাসীর সম্পাদক ।