পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রবাসী – পৌষ, ১৩২১ পোষ্টকার্ড ( গল্প ) হন্দুলেখা মাসিকপত্রিকার সম্পাদক মনমোহনের সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্ব হইয়া গিয়াছিল। লোকটিকে আমার বড় ভালো লাগে ; বিনয়ী অমায়িক অনাড়ম্বর নিরাহ লোকটি, তপস্বীর মতো সৰ্ব্বদা লেখাপড়ার মধ্যে যেন নিমজ্জিত হইয়াই থাকে ; একান্ত নিষ্ঠার জোরে সীমান্য আরম্ভ হইতে ইন্দুলেখাকে আজ একখানি শ্রেষ্ঠ মাসিকপত্র করিয়া তুলিয়াছে, মনমোহনের গল্প উপন্সাস পড়িবার জন্য ঘরে ঘরে বহু নরনারা প্রতিমাসের ইন্দুলেখার প্রতীক্ষায় উদ্‌গ্ৰীব হইয়া থাকে। আমি মাঝে মাঝে তাহার বাড়ীতে গিয় তাহার সহিত সাহিত্য-আলোচনা করিতাম ; কিছু-না-কিছু নূতন শিখিয়া বাড়ী ফিরিতাম । সেদিন মনমোহনের বাড়ীতে বেড়াইতে গিয়াছিলাম । মনমোহন বিবাহ করে নাই, বাড়ীতে অঙ্গ কোনে। স্ত্রীলোক আত্মীয়ও থাকেন না, কাজেই আমি আসঙ্কোচে বরাবর ত{হার থাস কামরাতেই চলিয়া যাইতাম । মলমোহনের টেবিলের অপর দিকে বসিয়াই সেদিন আমার নজর পড়িল একখানি অতি সুন্দর সোনারূপীর মিশালা কাজ করা হা তাঁর দীতের ফটোফ্রেমের উপর । এমন বহুমূল্যবান সুন্দর ফটোফ্রেমে মনমোহন কাহার ফটোগ্রাফ রাধিয়াছে জানিতে অত্যন্ত কৌতুহল হইল। আমি fঞ্জ জ্ঞাসা করিলাম-—ও কার ফটো গ্রাফ ? মনমোহন লfজ্জ ত হইয়। বলিশ —ফটোগ্রাফ নয় । —তবে কি ? মনমোহন অধিকতর কুষ্ঠিত হইয়া বলিল –ও বিশেষ কিছু নয়, ও আমার একটা পাগলামি । আমি উঠিয়া হাত বাড়াইয়। ফ্রেমখানিকে ঘুরাইয়া আমার দিকে মুখ করিয়া বসাইয়। দিলাম। দেখিলাম— ফ্রেমে ফটোগ্রাফ নয়, রঙে-আঁক। চিত্র নয় , আছে একথানি ডাকে-আসা পোষ্টকার্ড ! আমি কৌতুহলী হইয়। পড়িলাম--পোষ্টকার্ডধানিতে প্রেমের কথা নাই, কোনে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তা নাই ; আছে অপরিচিতকে সম্বোধন করিয়া দুটি মাত্র কাজের কথা ! tেiষ্টকার্ড পানিতে লেখ৷ আছে-- [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড હે শ্ৰীযুক্ত ইন্দুলেখা সম্পাদক মহাশয়েধু— সiবণয় নিবেদন, আমি কাৰ্ত্তিক মাসের ইন্দুলেখা পাইয়াছি । কিন্তু তাহাতে 1০৪ পৃষ্ঠার পরই ১৬ পৃষ্ঠা রহিয়াছে, মাঝের কয় পৃষ্ঠা নাই ; এবং শেষের দিকে ২৮ হইতে ৩৬ পৃষ্ঠা দুবার আছে । ইহাতে “সোনার কাঠি” গল্পটি অসম্পূর্ণ হইয়াছে। ষে কয়েক পৃষ্ঠা নাই সেই কয়েক পৃষ্ঠা অনুগ্রহ করিয়া সত্বর পাঠাইয়া দিলে বাধিত হইব । ইতি— নিবেদিকা শ্ৰীইন্দুলেখা সেন । কেয়ার অফ বাবু তারকেশ্বর সেন, ডেপুটি ম্যাঙ্গিষ্ট্রেট । ভগবানপুর । ॐltश्द-न श्रृंद्र $' && ! আমি হাসিয়। বলিলাম-এত ওlাহুক গ্রাহিকা থাক৩ে এই চার হাজার সাত শ পয়ষট্টি নম্বরের বিশেষ গ্ৰাহিকাটির ওপর তোমার এমন পক্ষপাত কেন আমায় বলতে হবে । মনমোহন লজ্জার হাসি হাসিয়া বলিল—ও কিছু নয়, আমার একটা খেয়াল মাত্র । এর মধ্যে যতটা রোমান্স আছে ভাবছ তার কিছুই নেই । আমি নাছোড় হইয়া ধরিয়। বসিলাম –এ রহস্ত প্রকাশ করে’ বলতেই হবে ? ইন্দুলেখা তোমার কে ? মনমোহন গম্ভীর বিষণ্ণ হইয়। উঠিল । কিছুক্ষণ মাথ। নাচু করিয়৷ চুপ করিয়া বলিয়। থাকিয়া মনমোহন তাহার জীবনের করু | কাহিনী বলিতে লাগিল— ইন্দুলেথা আমার কেউ না । ইন্দুলে ধ। আমার সব । প্রথম যৌবনে যখন আমি নিব ব্ধিধ এক লা হইয় পড়িয়।ছিলাম তখন এই ইন্দুলেখাকে দেখিয় বড় আপনার বলিয়। মনে হইয়াছিল । ইন্দুলেখাকে ধেদিন আমি প্রথম দেখি সেদিনকার স্মৃতিটি বড় সুন্দ বৈশাখ মাসের বিকাল বেলা ; বাগানের গাছে পথে তখনি জল দিয়া গিয়াছে ; জলপাওয়া তাঙ্গ ফুলের, আর ভেজা মাটির গন্ধে বাতাসটি স্নিগ্ধ হইয়। উঠিয়াছে ; সেই বাগানের কেয়ারির মধ্যে দাড়াইয়। একটি কিশোরী মেয়ে ফুল তুলিতেছিল । সে ফুলেরই মতো সুন্দর, চতুর্দশ বসপ্তের একগাছি মালার মতো। সেই অচেনা জায়গায় অচেন মেয়েটি অামায় দেখিয়া চিরপরিচিতের ন্যায় যে স্নিগ্ধ হাসিটি হাসিল তাহ। আমার মৰ্ম্মে আজও বিদ্ধ হইয়া আছে । তাহার সহিত আলাপ হইতে বিলম্ব হইল না।