পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రినీ సి অসম্ভব । আমি যদি পরিবারে ও সমাজে প্রতিপালিত ল। হইয়া কোন অরণ্যে পশু কর্তৃক প্রতিপালিত হইতাম তাহ। হইলে আমি কি পশুই হইতাম না ? আমি যে মাতুষ হইয়াছি ইহা পরিবার ও সমাজেরই জন্য । আমার আধ্যাত্মিক উন্নতি যাহ। কিছু হইয়াছে, তাহ পিতা মাত ভাই ভগিনী, আত্মীয় স্বজন এবং সমাজের প্রত্যেক নরনারীর জন্য । সমাজের সহিত আমার যদি এতই নিকট সম্বন্ধ হয়, আমি যদি সমাজের হই এবং সমাজ যদি আমার হয়, তবে আমার জন্য সমাজ দুঃখতোগ করিবে এবং সমাজের জন্য আমি দুঃখ ভাগ করিব ইহা কি অবিচার ? এই যে ইউরোপে ভীষণ যুদ্ধব্যাপার চলিতেছে, ইহার জন্য এই যে সহস্ৰ সহস্র পরিবার অনাথ হইতেছে, অযুত অযুত রমণী বিধবা হইতেছে, লক্ষ লক্ষ লোক বিপদাপন্ন হইয়া জীবন কাটাইতেছে, সুদূর ভারতবর্যেও যেজন্য কত পরিবারকে হাহাকার করিতে হইতেছে— এসমুদয় নরনারীষ্ট, ইহাদিগের প্রত্যেক নরনারীই কি পূৰ্ব্বজন্মের কৰ্ম্মফল ভোগ করিতেছে । ইহা হইলে ত ব্যাপার বড়ই অস্তৃষ্ঠ । আর কোন যুগের এত নরনারী এত অপরাধ করিল না, আর হঠাৎ এই যুগের নরনারীই এতট। অপরাধে অপরাধী হইল ! আমরা এস্থলে পূৰ্ব্বজন্মের কৰ্ম্মফল দেখিতেছি না, আমরা দেখিতেছি প্রকৃতপক্ষে সমুদয় নরনারী, সমুদয় পরিবার, সমুদয় সমাজ, সমুদয় &ન একস্থত্রে আবদ্ধ। যাহা একের সুখদুঃখ, তাহ। অপরের ও সুখদুঃখ, একের কল্যাণ যাহা, অপরের কল্যাণও তাহা । এক অপর ভিন্ন থাকিতে পারে না । হস্ত পদ চক্ষু কৰ্ণ উদরাদি যেমন একই দেহের অঙ্গ, তেমনি সকল জাতি ও সকল নরনারী একই দেহের অবয়ব । ইহা বুঝিলেই কল্যাণ, না বুঝিলে চক্ষুকৰ্ণ উদরাদির কলহের পুনরাবৃত্তি হইয়া থাকে । সকলেই যখন এক, তখন একের পাপপুণ্যের জন্য অপরের দুঃখসুখ হইবে না কেন ? শিশুসন্তান সম্পূর্ণরূপে মাতার উপর নির্ভর করে, মাতার বিপদ হইলে সন্তানকেও ভূগিতে হয় । মানবসমাজ না হইলে আমাদিগের চলে না, সেইজন্য আমাদিগের ব্যাধিতে সমাজের ব্যাধি এবং সমাজের প্রবাসী—পৌষ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড এক অঙ্গে ব্যাধি হইলেও অামাদিগকে সেই ব্যাধির জন্য যন্ত্রণ ভোগ করিতে হয়। একটা অদ্ভূত ও অসম্ভব কল্পনা দ্বারা ইহা আরও একটুকু স্পষ্ট কর! যাইতে পারে । আমরা ব্রহ্মের সত্তায় সম্ভাবান ; ব্রহ্মের ব্যাধি হইলে আমাদিগকেও ব্যাধিগ্রস্ত হইতে হইত ; সমাজের এক অঙ্গের ব্যাধিতে যে অপর এক অঙ্গ ব্যাধিগ্রস্ত হইতেছে তাহার কারণ এই একত্ব । জগতে সৰ্ব্বত্রই শুল্ক দিতে হয়--অর্ণমাদিগকেও যেন এই শুল্কই দিতে হইতেছে । শুষ্ক দেওয়া যদি এতই কষ্টকর হয়, আফ্রিকার মরুভূমি কিংবা মধ্যএসিয়ার বিজন প্রদেশে যাইয়া যদি সম্ভব হয় এই একত্বের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবার চেষ্টা কর । ( હતા ) একত্ব স্বীকার করিয়৷ লও দেখিবে, একজনের সুখদুঃখ অপরের সুখদুঃখ হইয় গেল। তেমনি একের সুখদুঃখ অপরের হইতেছে ইহা হইতেও প্রমাণিত হয় যে সকলেই এক, সকলেই একস্থত্রে বাধা । মনে কর একজন লোকের কেবল কর্ণই আছে, আর কোন ইন্দ্রিয় নাই ; অপর একজন ব্যক্তি আছে যাহার কেবল চক্ষুষ্ট আছে এবং আর কোন ইন্দ্রিয় নাই । এই দুইজন ব্যক্তির মধ্যে কি ভাবের বিনিময় হওয়া সস্তব ? সম্ভব নয় এইজন্স, যে উভয়ের মধ্যে কোন সংযোগ নাই । একজন এক জগতে বাস করে, অপরজন বাস করে অপর এক জগতে ; একজনের জগৎ শব্দময়-অপরের জগৎ রূপময় । শব্দ, রূপের ভধ। বুঝে মা এবং রূপও শব্দের ভাষা বুঝে না ; তাই দুজনে পৃথক হইয়া রহিয়াছে। কিন্তু যদি দুজন মানুষ কল্পনা না করিয়া কল্পনা কর যে একই লোকের ঐ দুই ইঞ্জিয়, তাহা হইলে রূপও শব্দের ভাষা বুঝিবে, শব্দও রূপের ভাষা বুঝিবে। জগতে এই যে সুখদুঃখ, পাপপুণ্যের আদানপ্রদান হইতেছে, ইহা হইতে এই শিক্ষালাভই করিতেছি যে কেহ কাহারও ‘পর’ নহে । সাধারণ লোকের ভাষা এই ‘এক অপরের জষ্ঠ কষ্ট পায়” । কিন্তু জ্ঞানীর নিকটে ‘অপর’ বলিয়া কিছু নাই, আপন এবং পর একই জিমিষের এপিঠ ওপিঠ ।