পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] দিক হইতে একটি রমণী আসিতেছিল, সে পুরুষোত্তমকে ক্রতপদে আসিতে দেখিয়া দাড়াইল এবং পুরোহিত নিকটে আসিলে জিজ্ঞাস করিল “পুরুষোত্তম ঠাকুর নাকি ? এত প্রত্যুষে দ্রুতপদে কোথায় চলিয়াছ ?” পুরোহিত তাহার কথা শুনিয়াও শুনিলেন না, ব্রাহ্মণ চলিয়া ಗಳ দেখিয়া রমণী পুনরায় কহিল “ঠাকুর, বলি ও ঠাকুর ? এত তাড়তাড়ি যাও কোথায় ?” ব্ৰাহ্মণ বিরক্ত হইয়৷ দাড়াইল, কিন্তু কথা কহিল না । তখন রমণী পুনরায় কহিল “ঠাকুর কি চিনিতে পারিতেছ না না কি ?” ব্রাহ্মণ বিরক্তিব্যঞ্জক মুখভঙ্গী করিয়া জিজ্ঞাসা করিল “তুই কে ?” রমণী হাসিয়া উত্তর করিল “আমি গো আমি, এমন করিয়া কি মানুষকে ভুলিতে হয় ?” “কে তুই ? আমি ত কখনও তোকে দেখি নাই ? তুই প্রকাশু রাজপথের মাঝখানে দাড়াইয়া আমার সহিত অবজ্ঞাস্বচক কথা কহিতেছিস কেন ? তুই জানিস্ অামি কে ?” “জানি গো জানি, যখন বুড়া শিবের পূজা করিতে তখন তোমাকে দেখিয়া দেখিয়া আমার চোখ দুইটা ক্ষয় হইয়া গিয়াছে । তুমি ত সেই পুরুষোত্তম ঠাকুর ? মিনসে রাজবাড়ীতে পুরোহিত হইয়াছে বলিয়। অহঙ্কারে মাটিতে পা দিতেছে না। এখন মহারাজের পুরোহিত হইয়: আমাকে চিনিতে পারিতেছ না বটে ? এখন রাজপথে দাড়াইয়া আমার সহিত কথা কহিতে তোমার অপমান বোধ হয় ? তবে রে বামুন, থাক তুমি, আমি এখনই গৌড় নগরের পথে পথে তোমার বিদ্যা প্রকাশ করিয়া দিতেছি—”

  • আগে বলিতে হয় !—দোহাই তোমার—মাধবী— মাধু—বলি ও মাধি—আমার ভুল হইয়া গিয়াছে—বড়ই ভুল হইয়াছে—এই ভোরের বেল কি ন—এখনও ভাল করিয়া চোখের ঘুম ছাড়ে নাই—সেইজন্তই চিনিতে পারি মাই। মাধবী, তুমি রাগ করিলে ?”

“যাও—যাও—তোমার আর খোসামোদে কাজ নাই।” “মাধু—তোমার হাতে ধরি ; না না—তোমার দুটি পায়ে পড়ি,—এমন কাজ আর কখনও করিব না— ধৰ্ম্মপাল J WO8 × যাহা হইবার তাহা ত হইয়া গিয়াছে, তুমি দয়া করিয়৷ এইবারটি আমাকে ক্ষমা কর।” মাধবী তাহার অবস্থা দেখিয়া মনে মনে হাসিল, কিন্তু প্রকাশে অতি গম্ভীর ভাবে কহিল “ঠাকুর, সকাল বেল ছুটিতে ছুটিতে কোথায় চলিয়াছিলে ?” ব্ৰাহ্মণ দশন পঙক্তি বিকাশ করিয়া’ সৰ্বাস্যে কহিল তুমি কি নূতন সংবাদ শুন নাই ? মহারাঞ্জের যে বিবাহ, আমাকে এখনই সশীর্ষ নারিকেল লইয়। গোকর্ণে যাত্রা করিতে হইবে । গঙ্গাস্নান করিয়া আসিলাম, এখন মহাদেবীর নিকট পত্র আনিতে যাইতেছি, প্রথম প্রহর উত্তীর্ণ হইবার পূৰ্ব্বেষ্ট যাত্রা করিব।” মাধবী দাসী কহিল “আবার কবে আসিবে ?” “দশ দিনের মধ্যে ফিরিয়া আসিব ।” দাসী কুটিল কটাক্ষপাত কfরয় কহিল “এখন কি প্রাসাদে যাইবে ?” "έ! " “এক যাইতে পরিবে ত ?” “কেন ?” “পথে যে ভয় অাছে, তাহ। বুঝি গিয়াছ ?” “কোথায় ? আমি ত তাহ জানি না ?” “তবে আর তোমার শুনিয়া কাজ নাই ?” “ম না—বল বল বল ; মাধবী, মাধবী, আমার মাথ। খাও, ভয়ের কথা শুনিয়া আমার মাথা ঘুরিতেছে।” “ভয় এমন আর কি, তবে লোকে বলে যে চণ্ডার মন্দির-শিখরে যমজবটাখখের গাছে এক ব্রহ্মদৈত্য বাস করে।’ রমণীর কথা শেষ হইবার পূৰ্ব্বেই পুরুষোত্তম শৰ্ম্ম৷ তাহার নিকটে আসিয়া সবলে তাহার হস্তদ্বয় ধারণ করিল এবং কহিল “মাধবী, ও মাধবী !” “কেন ?” “আমি ষে যাইতে পারিতেছি না।” “আমি কি করিব ?” “তুমি আমাকে পৌছাইয়া দিয়া আইস ।” “আমি শিবমন্দিরে যাইব না ?” “তুমি না হয় একটু বিলম্বে যাইও ।”