পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৯২ তুই যদি আগে আমায় জানাতিস তবে আমি ওকে যেতে দিতাম না ; কথা না শুনত ঘরে বন্ধ কবে রাখতাম। তবু যদি পালিয়ে যেত, জানতাম তুই বিধবা হয়েছিস... তুলসীর চোখ দিয়া টপটপ করিয়া বড় বড় ফোটায় জল পড়িতে লাগিল । যে স্বামী তাহার কত দুর বিদেশে, তাহার অমঙ্গল-আশঙ্কায় তুলসীর নারীহৃদয় আলোড়িত হইয়া উঠিল । সে জলভরা চোখ দুটি তুলিয়া বাপের মুখের দিকে চাহিল। কৃষ্ণগোবিন্দ নিজের ক্ষণিক চাঞ্চল দমন কfরয়া বলিলেন—তুই আমার মেয়ে হয়ে জেনে শুনে তোর স্বামীকে বিলেত যেতে সাহায্য করেছিস, আমার উচু মাথা তুই হেঁট করে দিয়েছিল, আমার কুলে কালি দিয়েছিস । আমার এ ঠাকুরদেবতার বাড়ী—এ বাড়ীতে আর তোর ঠাই হবে না। শীগগির প্রস্তুত হয়ে নে, পান্ধী আসছে এখনি তোকে যেতে হবে । বাবা !—ডাকের মধ্যে তুলসী হৃদয়ের সমস্তখানি মিনতি ঢালিয়। দিয়া কৃষ্ণগোবিন্দের পায়ে ধরিতে গেল ! তাহার হাত শূন্ত মেঝেতে গিয়া পড়িল, কৃষ্ণগোবিন্দ তাড়া তাড়ি সেখান হইতে প্রস্থান করিয়াছেন । নিত্যকিশোরী অসিয়া নীরবে চোখের জলে ভাসিতে ভাসিতে কস্তাকে মাটি হইতে তুলিয়া বুকে কারলেন ; তুলস্ট্র মায়ের বুকে মুখ গুজিয়া ফুলিয়া ফুলিয়া কাদিতে কঁাদিতে বলিল—ম, তবে আজ এই শেষ দেখা ! ম। কস্তার এই কথার প্রতিবাদ করিতে পারিলেন না। আকৈশোর তিনি কৰ্ত্তার কড়া হুকুমে এমন অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছেন যে এতবড় ব্যাপারটাও নারবে মানিয়া লওয়া ছাড়া তাহার আর কোনো সাধ্য হইল না । ক্ষণেক পরেই সমস্ত বাড়ীকে চোখের জলে ভাসাইয়। তুলসীর পাল্পী আন্তঃপুর হইতে চিরদিনের জন্য বাহির হইয়। গেল । বেহারীদের কোলাহল তখনে অন্দর হইতে শোন৷ যাইতেছিল। কৃষ্ণগোবিন্ধকে আসিতে দেখিয়া নিত্যকিশোরী তাড়াতাড়ি জানল। হইতে সরিয়া আসিয়া চোখ যুছিয়া দাড়াইলেন। উচ্ছসিত বেদন কন্ধ রাখিবার প্রবাসী—মাঘ, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড দারুণ শ্রমে কৃষ্ণগোবিন্দকে ভয়ানক দেখাইতেছিল । তিনি ঘরে আসিয়াই জোর দিয়া বলিলেন–গিন্নি, তুলসী বলে আমার কোনো মেয়ে ছিল না। কেউ যেন আমা কাছে তার নাম না কৰে। s নিত্যকিশোরী ফ্যালফ্যাল করিয়া স্বামীর মুখে দিকে চাহিয়া নীরবে দাড়াইয়৷ রহিলেন। তাহা বুকফাটা অশ্রুনিবার স্বামীর হুকুমের পাথর দিয়া চাপ রহিল । কৃষ্ণগোবিন্দ পুত্রের ঘরে গিয়া দেখিলেন অভিলt টেবিলের উপর হাতের মধ্যে মাথা গুজিয়া বসিয় বসিয়া কাদিতেছে। কৃষ্ণগোবিন্দ ফিরিয়। দরজা পৰ্য্যং আসিয়া থমকিয়। দ{ড়াইলেন ; তারপর আবার ঘে ফিরিয়া গিয়া ডাকিলেন—অভিলাষ । অভিলাষ, পিতার আহবানে বেশি করিয়া ফুলিয় ফুলিয়া কাদিয়া উঠিল—দিদির জন্য বেদনার সহিত পিতা প্রতি । ক্রাধ ও অভিমান তাহার সমস্ত ভিতর বাহির ক্ৰন্দনের আবেগে কাপাইয়। তুলিতে লাগিল । কৃষ্ণগোবিন্দ বলিলেন— অভিলাষ, তোমার ইংরিংি পড়া আজ থেকে বন্ধ ! অভিলাষ তাড়াতাড়ি চোখ মুছিয়া মাথা তুলিয় বলিল--বি-এ এগজামিনের আর দুমাস আছে...... কৃষ্ণগোবিন্দ গজ্জন করিয়া উঠিলেন—চুলোয় যাব তোমার বি-এ এগজামিন । ইংfরজি আর পড়তে পাবে না । —তবে কি আমি মুর্থ হয়ে থাকব ? —পড়তে হয় সংস্কৃত পড়বে, ভাগবত পড়বে তোমার ইংfরজি সব বই আমি পুড়িয়ে ফেলতে হুকু দিয়েছি...... বিদ্যুৎবিদ্ধ লোকের মতো অভিলাষ চমকিয় দাড়াইয় উঠিল । সে আপনার চারিদিকের ব্যাপারটা ঠিক যেন বুঝিতে পারিতেছিল না । কৃষ্ণগোবিন্দ ধীরে ধীরে সেখান হইতে চলিয়া গিয়া ঠাকুরঘরে ঢুকিয়া থিল দিলেন অভিলাষ ছুটিয় আপনার বইয়ের ঘরে যাইতে গিয় দেখিল উঠানে রঘু থানসাম। প্রকাও অগ্নিকুণ্ড জালিয় তাহাতে তাহার বড় সাধের বই গুলি আহুতি দিতেছে । কৰ্ত্তার হুকুম !