পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ] ঘনশ্যাম ভিতরে গিয়া আবার ফিরিয়া আসিয় বলিলেন-কর্তা বললেন, তা তুমি যদি কোচমান সহিসদের মতন থাকতে পার তা হলে আস্তাবলের একটা দুটো ঘর তোমাকে খালি করে দেওয়া যেতে পারে । এমন উত্তর অভিলাষ আশা করে নাই। সে অপমানে, স্তম্ভিত হইয়া ক্ষণেক দাড়াইয়া থাকিয়া এক লাফে গাড়িতে উঠিয়া বসিল এবং সশব্দে গাড়ীর দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া জোরে কোচমানকে বলিল—চলো, গোল তালাও চলো । অভিলাষের গাড়ী যেমন মোট মাথায় করিয়া আসিয়াছিল আবার তেমনি মোট মাথায় করিয়া বাগনের বঁাকা রাস্ত ঘুরিয়া ফটক পার হষ্ট তে চলিল । গাড়ীবারান্দী হইতে বাহির হইতেই উপরকার জানলায় অভিলাষের চোখ পড়িল ; অভিলাষ দেখিল তাহার ম৷ তাহাকেই একটিবার দেখিবার আশায় চোখের জলে ভাসিতে ভাসিতে জানলায় আসিয়া নীরবে দাড়াইয়াছেন, তাহাকে দেখিয়া লইবার জন্য দুইহাতে তিনি ঘন ঘন অশ্রুজাল সরাইয়া সরাইয়া দিতেছেন, কিন্তু তখনই আবার অশ্রুজাল ষ্টি ঝাপসা করিয়া তুলিতেছে। অভিলাষ গাড়ীর জানল। দিয়া অৰ্দ্ধেক শরীর বাহির করিয়া হাকিয়া বলিল—কোচমান, গাড়ী ঘুমাও, গাড়ী রোকে৷ ! গাড়ী আবার গাড়ীবারান্দায় আসিয়া লাগিল । অভিলাষ নামিয়া পড়িয়া বলিল—ঘনশ্রাম কাকা, আমি আস্তাবলেই থাকব, আমি এ বাড়ী ছেড়ে যেতে পারব না । ঘনশু্যাম আবার বাড়ীর ভিতর চলিয়া গেলেন । ক্ষণেক পরেই কোচমান সহিস প্রভৃতি মুসলমান ভূত্যের। আসিয়া অভিলাষকে সেলাম করিয়া গাড়ী হইতে জিনিসপত্র নামাইতে লাগিয়া গেল, এবং ঘনশ্যাম ফিরিয়৷ আসিয়া বলিলেন—বাগানের মধ্যে মালীর ঘরট পরিস্কার করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কৰ্ত্ত। বল্লেন যতদিন এ বাড়ীতে থাকবে হিন্দু চাকর তোমাকে নিরামিষ খাবার দিয়ে আসবে, স্নেচ্ছের ছোয়। অখাদ্য খেতে পাবে না । অভিলাষ বলিল—ঘনশু্যাম কাকা, একবার বাবাকে মাকে প্রণাম করতে পাব না ? বজাহত বনস্পতি ᏬᎼ☾ —পাবে বৈকি বাবা, পাবে বৈকি। এখন মুখহাত पूंछ একটু জিরিয়ে টিরিয়ে কিছু খাও টাও, তারপর সে হবে ধন ৷ —ন কাকা, প্রণাম না করে আমি কিছু খাব না। ঘনষ্ঠাম যেন বিপদে পড়িয়া ইতস্তত অমিতা-আমত। করিতে লাগিলেন । অভিলাষ তাহকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়া কহিল—যে দরজা দিয়ে মেথরাণী অন্দরের উঠান পরিষ্কার করতে যায়, সঙ্গি স দান আনতে যায়, আমি সেই দরজা দিয়ে উঠানে গিয়ে দাড়াব ; বাবা ম৷ রকের উপর দাড়াবেন, আমি দূর থেকে প্রণাম করে চলে আসিব । অভিলাষ উঠানে গিয়া দাড়াইতেই ক্লধ্বগোবিন্দ মুখ ফিরাইলেন ; অভিলাযের মাতা অঞ্চলে মুখ ঢাকিয়া কঁদিতে লাগিলেন ; অভিলাষ ভূমিষ্ঠ হইয়। প্রণাম করিল। ক্ষণেফ চুপ করিয়া দাড়াইয়া থাকিয় অভিলাষ বলিল —ম, বড় ক্ষিদে পেয়েছে, কিছু খেতে দাও । ম। তাড়াতাড়ি চোখ মুছিয়া অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলিলেন— তুই বাইরে যা, খাবার এক্ষুণি পাঠিয়ে দিচ্ছি। অভিলাষ বুলিল-মা, তোমার হাত থেকে প্রসাদ না পেয়ে ত যাব না। এইখানে আমায় একখানা পাতা দাও । অভিলায উঠানে মাটিতে বসিয়া পড়িয়া বলিল— তুমি ওপর থেকে আলগোছে খাবার ফেলে ফেলে দিয়ে, আমি খেয়ে গোবর দিয়ে ঠাই পরিষ্কার করে দিয়ে যাব। ধনশ্ৰাম বলিলেন–ছি বাবা, পাগলামি করে না । বাইবে চল, তোমার সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি... অভিলাষ নড়িবার নাম ও করিল না । নীরবে মায়ের মুথের দিকে চাহিল। তাহার মাত। কৰ্ত্তার দিকে চাহিলেন । কওঁ। মুখ ঘুরাইয়া সেখান হইতে চলিয়। গেলেন । কৰ্ত্ত বারণ করিলেন না দেখিয়া নিত্যকিশোরী বলিলেন—ওলো ও মাধি, যা যা ঝপ করে একখানা পীড়ি আর একখানা পাতা নিয়ে আয়, আর বামুনদিদিকে বলগে ভাড়ারঘরে আমি থাবার সাজিয়ে রেখে এসেছি, চট করে নিয়ে আসবে।