পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8პ br দেখে তাকে দোর করে টেনে নিয়ে পথের উপর এল । ইতিমধ্যে কিশোরীর সঙ্গিনীদের প্রসাধনক্রিয়া সম্পন্ন হল ; তখন তারাও তিনজনে এগিয়ে এল। পথের উপর একখানি সুসজ্জিত গাড়ী অপেক্ষা করছিল, আর দুইজন দ্বারবান গাড়ীর কাছে দাড়িয়ে ছিল । স্ত্রীলোকেরা । নিকটে আসায় দ্বারবান সসন্ত্রমে গাড়ীর দ্বার খুলে দিলে। তার। আরোহণ করলে গাড়ী বিদ্যুৎগতিতে অদৃপ্ত হয়ে গেল। জামীর ও আমীর পথের উপর দাড়িয়ে এই দৃশ্ব দেখলে । যখন গাড়ী আর দেখা গেল ন। তখন গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে আমীর জামীরের হাত ছাড়িয়ে সেইপানে বসে পড়ল । জামীর তখন বল্লে “তোমার কি হয়েছে ? এমন করছ কেন ?" আমীর কিছুই বলতে পারলে না । জামীর তখন ভীত হয়ে তাকে বার বার জিজ্ঞাসা করাতে অবশেষে আমীর গেয়ে উঠল— “জলমে স্থলমে তনমে মনমে আপয় রে সীমায়ারে বঁাকেয়া । স (ওলী স্বয়ত মোহিনী মুরত, হৃদে বীচে-মে সমীয়া হৃদে বীচে-মে সমীয়া রে ধীকেয়া, মন ভয়ে রে সামলিয়া, মন ভয়োরে বকেয়া ! জামীর বল্পে “সৰ্ব্বনাশ! ও যে এখানকার বিখ্যাত কুঠিয়াল মাধোপ্রসাদ শেঠের মেয়ে ” জামীর তার অবস্থা দেখে প্রমাদ গণলে। তার বন্ধুর প্রকৃতি সে বেশ ভাল রকমেই জানত। তার সেই সবল সুগঠিত দীর্ঘ দেহটির ভিতর যে এক খালি অতি কোমল প্রেমপ্রবণ হৃদয় ছিল তা সে বিশেষ ভাবে জানত বলেই আজ বন্ধুর এই ভাবান্তর তাকে বড়ই ভাবিয়ে তুলেছিল। তার পরে আর এক সপ্তাহ কেটে গেছে । এ কয়দিনে আমীরের ঘোর পরিবর্তন হয়েছে । সে আর তার বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারে না, গল্প করতে পারে না, কিছুই তার ভাল লাগে না । ক খায় কথায় তার প্রাণখোলা উচ্চহাসি আর সেই প্রণয়াতান,গান সব নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। মুখ শুষ্ক, দৃষ্টি উদাস লক্ষ্যহীন, কি সে চায় কি তার অভাব কেউ জিজ্ঞাসা করে কিছু উত্তর পায় না। তার দৃষ্টি সদাই চঞ্চল হয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়ায়, প্রবাসী—মাঘ, ১৩২১ { ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড কি যেন তার পরম প্রিয়ধন হারিয়েছে । তার মুখ দেখলে তার বন্ধুদের বুক ফেটে কান্না আসে। তারা ভাবে নিশ্চয় ওর কি রোগ হয়েছে । তার তাকে হাকিমের কাছে নিয়ে যেতে চায়, ওঝ। গুণী দেখাতে চায়, ঝাড় ফুক করাতে চায়, কিন্তু সে কথা সে কানেও তোলে না ! শুধু জামীর সব বোঝে, আর এর পরিণাম যে কি শোচনীয় হবে তা ভেবে ভেবে গুমরে গুমরে বুকফাটা কান্না কঁদে যখন অবসর পায় তখন সে আমীরকে কত বোঝায়, যে, এ দুরাশা মনে স্থান দিও না, কারণ এ আশা কখন সফল হবে না । সে হিন্দুকণ্ঠা, বিবাহিতা, মুসলমান যুবকের এ স্থরা কাজক্ষ। কেন ? আমীর তার কোন উত্তর দেয় না, কিন্তু তার মূখ দেখলে সে বুঝতে পারে যে তার কোন কথা আমীরের অন্তরে প্রবেশ করে নি। কি করলে তার বন্ধুর এ মনের বিকার কাটবে তা সে ভেবে পায় না ! একদিন সকালে আমীর তাদের বাড়ীতে একশ বসে আছে। মনে আর অঙ্গ কোনও চিন্তা নেই, কেবল সেই তরুণীর মুখখানি হৃদয়ে জ{গছে । এ এক সপ্তাহ সে অনেক ভেবেছে, অনেক উপায় স্থির করতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু তার কোনটাই ফলবতী হয় নি । যাকে সে ভ: পেসেছে তাকে যে পাবার কোন আশাই নেই তা সে বুঝেছে, কিন্তু তার নিজের মন ও অল্প তার শে নেই, অনিশ্চিত আশা ছেড়ে আবার আগের মত সদানন্দ ভাব ফিরে পাবার কোন সস্তাবনা নেই, তাও সে বেশ বুঝেছে। তবে এখন তার উপায় কি হবে ? কি করে তার সারা । জীবন কাটবে ? গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আমীর একবার চারিদিকে চেয়ে দেখলে কি সুন্দর এই পৃথিবী ! এই পত্রপুপে শোভিত। হাস্যময়ী বসুন্ধরা, মাথার উপরে এই সুনীল আকাশমণ্ডল, চারিদিকের এই আনন্দস্রোত, সবই কি সুন্দর । কিন্তু হয় ! তার প্রাণ কেঁদে কেঁদে বলে উঠল--এসব সুন্দর নয় সুন্দর নয় ! সুন্দর যে তাকে একটিবার দেখতে পাবারও কোনো সস্তাবনা নেই, কোনো উপায় নেই ! ঝর ঝর করে তার চোখের জল ঝরে পড়তে লাগল । কিছুক্ষণ পরে সে শান্ত হয়ে ভাবলে আমি যদি