পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२ আজ কিন্তু বাহাদুরের কাছে নানী একটাও কথার উত্তর পাইল না। সে ভারী দুঃখিত হইয়া বলিল“বাবা ! তোমার কোর্তা চাই না।” বাহাদুর কি ভাবনায় অস্তমনস্ক ছিল, এ কথা শুনিয়া বলিল--- “না নানী ! কাল কোর্তা আনব।” নানী বলিল “ঠিক, সচ, বাত ?” g বাহাদুর বলিল “সচ, বাত ?” ( , ) বাহাদুর যখন চায়ের বাগানে কুলীর সর্দার ছিল তখন সে কিছু কিছু করিয়া টাকা জমাইতে আরম্ভ করিয়াছিল। ইহার উদ্দেশু, এজগতে সে ছাড়া তাহার নানীর আর কেহ নাই, তাহার অবর্তমানে নানীর জন্য একটা কিছু সম্বল করিয়া যাওয়া উচিত এই বিবেচনায় সে যাহা পারিত কিছু কিছু জমাইত। বাহাদুরের প্রতিবেশী জেঠমল দার্জিলিং এ ব্যবসা করে। বাহাদুর অনেক ভাবিয়া তাহার টাকাগুলি জেঠমলের কাছে রাখিয়ছিল। জেঠমল সেজন্য তাঁহাকে সুদ দিত এবং যখনই চাহিবে তখনই ফেরৎ দিবার অঙ্গীকারও করিয়াছিল। বাহাদুরের টাকা বেশী হয় নাই, কতই বা মাহিনা ? তবে মোটামোটি ৪৷৫শ টাকা হইবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। নীরদ বাবুর আকস্মিক বিপদ যখন বাহাদুরকে ব্যস্ত করিয়া তুলিল তখন সে নানা রকম উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা করিতে লাগিল। কোন কিছু স্থির করিতে পারিল না। তাহার মনে হইতে লাগিল যদি সে তাহার বাবুকে এ বিপদ হইতে উদ্ধার করিতে পারে তবেই তাহার জীবন সার্থক । রাত্রি, তখন কত কেহ জানে না । তখন ঘোর অন্ধকার। হঠাৎ বাহাদুরের মনে পড়িল "জেঠমলের কাছে ত তাহার টাকা অাছে।” একবার মনে হইল “সে টাকা ত তাহার নহে। সে ত মানীর !” আবার মনে হইল “নানীর ভগবান আছেন।” বাহান্থর চমকিয়া উঠির শয্যা ত্যাগ করিল। রান্ত্রির অন্ধকার ভখন ঘনাইয়া কালে কালির মত হইয়া উঠিয়াছে। সে মনে ভাবিল যদিই এ টাকা দিয়া বাবুকে প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩২১ [ ১৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড জেল হইতে বাচাইতে হয় তযে ত আর সময় নাই । ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিবার কথা । টাকা ত দার্জিলিংএ, এখান হইতে ১৮ মাইল দূরে। আজ রাত্রিতে ন রওনা হইলে আর কাল যথাসময়ে টাকা পাওয়া যাইবে না। বাহান্থর তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়িয়া উঠিল । একটা সালে জালিল, দেখিল তাহার নানীর ঘুমন্ত মুখখানি যেন হাসিতেছে। সে কি ভাবিয়া সেই অবস্থাতেই নীচু হইয় তাহার ঘুমন্ত শিশুর মুখে একটা চুমা খাইয়া লইল এবং মনে মনে বলিল “বেটীর জন্য দুইটা ভাল কোর্তা আনিব ।” বলিষ্ঠ পাহাড়ীর ভয় কাহাকে বলে জানে না । কোমরে একখানা কুকরী বেশ করিয়া বাধিল । একবার কোয হইতে খুলিয়া দেখিল ঠিক আছে কিনা। কুটরের স্নান প্রদীপের আলোয় সেট ঝক ঝক করিয়া উঠিল। বাহাদুরের নিজের শানিত অস্ত্ৰে যেন বাৎসল্যস্নেহ জন্মিয়াছিল—কুকরীখানা চক চক করিয়া উঠিল দেখিয়া আপন মনেই বলিল—“সাবাপ ! বেটা ! তোমসে হাম দুনিয়া লেনে সকতা হ্যায়।” মাথায় একটা পাগড়ী বাধিল । ছাত লইল না । পাহাড়িয়া কি বৃষ্টিকে ভয় করে, বিশেয যখন সে এমন কাজে যাইতেছে। সমস্ত সাজ ঠিক করিয়া সে সেই মুহূর্তেই দার্জিলিং যাইবার জন্য প্রস্তুত হইল। বাহাদুরের বাটীর কিছু দূরে এক বৃদ্ধ বাস করিত। বাহাদুর তাহাকে ডাকিয়া আনিয়া রাত্রিট নানীর কাছে থাকিতে বলিয়া গেল। পাহাড়ের ঘোর অন্ধকার পথে যখন বাহাদুর হন হন করিয়া চলিয়াছে তখন বেশ বৃষ্টি নামিয়াছে। ( . ) রোজ সকালে বাহাদুর আলিয়৷ বাবুর মাখার কাছে দাড়াইয়া থাকিত। আজ ঘুম ভাঙ্গিয়া নীরদ বাবু দেখেন বাহাদুর নাই। মনে হইল নিশ্চয় একটা কিছু গোলমাল হইয়াছে। মনটা অত্যন্ত খারাপ। নীরদ বাবু ধীরে ধীরে আফসে গেলেন। আফিসে গিয়া যথাযথ সমস্ত অল্পসন্ধান করিলেন, সে টাকা কোথায় গেল। তহবিলের