গোপাল কৃষ্ণ গোখলে । সামাজিক কুপ্রথা, শিক্ষা ও পরীক্ষণ প্রণালীর দোষ, দূষিত জলবায়ু ও স্বাস্থ্যের প্রতিকূল অন্যান্স অবস্থা, এ সবই আমাদের অল্পায়ুতার কারণ । কিন্তু মনের উপর রাষ্ট্রীয় অবসাদ, দুরবস্থা ও নৈরাষ্ঠের চুপও যে অন্যতম কারণ, তাহাতে সন্দেহ নাই । গোখলে মহাশয়ের মৃত্যু যে এবম্বিধ একটি কারণে অপেক্ষাকৃত শীঘ্ন ঘটাইয়াছে, একথা মান্দ্রাজের দৈনিক পত্র নিউ ইণ্ডিয়া লিখিয়াছেন । তাহাতে লিখিত হুইয়াছে যে পত্রিকৃ সার্ভিস কমিশনের সত্যরূপে তাহাকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, ইংরেজ সাক্ষীদের মুখে সমস্বরে উচ্চারিত এইকথা শুনিতে হইয়াছে যুে তাহার স্বদেশবাসীরা অতি অকৰ্ম্মণ্য, কোন দায়িত্বের, সাহসের, শক্তির কাজের ভার নির্ভর করিয়া তাহাদের উপর দেওয়া যায় না । ইহা যে র্তাহার মত স্বদেশপ্রেমিকের পক্ষে কিরূপ কঠিন পরীক্ষা, তাহ অকুমান করা যাইতে পারে । বাস্তবিক মামুষের দিকৃ দিয়া দেখিলে, বা মামুষের কাছে কিছু পাইব এইরূপ আশার উপর নির্ভর করিতে গেলে আমাদের নিরাশ বিবিধ প্রসঙ্গ—-গোপাল কৃষ্ণ গোখলে ৬০৭ হুইবারই কথা। কিন্তু আত্মশক্তি ও ভগবৎপক্তিতে বিশ্বাস্ট হইলে অবস্থার প্রতিকূলত যত বেশী হয়, অন্তরের উৎসাহ তত বাড়ে, লাহিরে আকাশ যত ঘনঘটাচ্ছেন্ন হয়, অন্তরে আশার দীপ ততই উজ্জ্বল হইতে থাকে। উনপঞ্চাশ বৎসর বয়সে গোখলের মৃত্যু হইয়াছে বটে, কিন্তু জীবনের মূল্য দৈৰ্ঘ্য দিয়া নিরূপণ করা যায় না । কোন মানুষের জীবনের মূল্য• স্থির করিতে হইলে বুঝিতে হয়, তিনি কি হইয়াছিলেন, কি করিয়াfছলেন, এবং কি উদ্দেশু্যে করিয়াছিলেন । গোখলে দোষক্রটিশূন্ত ছিলেন, কখন কোন ভুল করেন নাই কিম্বা তাহার রাষ্ট্রীয় মতে সকলে সায় দিতে পারেন, বা তাহার কার্য্যপ্রণালীর অনুসরণ করা সকলেরই কৰ্ত্তব্য, একথা কেহ বলিবেন না, বলিবার প্রয়োজনও নাই। কিন্তু তিনি যে রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, প্রভৃতি বিযয়ে জ্ঞানী, স্বদেশপ্রেমিক ও দেশভক্ত, পরিশ্রমী ও শ্রমোৎসুক, দেশের জন্স অপমানসহিষ্ণু, দেশবাসীর ঔদাসীন্তসত্বেও দেশের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশাশীল, এবং মিতবাকৃ ছিলেন তাহা বলিলে বিন্দুমাত্রও অত্যুক্তি হয় না। আঠার বৎসর বয়সে তিনি বি এ পাস করেন, কুড়ি বৎসর বয়সে গ্রাসাচ্ছাদনের বিনিময়ে অধ্যাপক হন । এইরূপে ত্যাগে ও আত্মোৎসর্গে যে কৰ্ম্মজীবনের আরম্ভ হয়, আত্মবলিদানে•তাহার সমাপ্তি হইয়াছে । তিনি কাজ করিয়াছেন অনেক । কিন্তু কাজ অপেক্ষা বেশী মূল্যবান এইটুকু যে তিনি কোন * স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করেন নাই, দেশের জন্য থাটিতে থাটিতে মরিয়াছেন । গোখলে ছাড়া রাজনীতিক্ষেত্রে আর র্যাহারা কাজ করেন, তাহার। সব মেকী মানুয, স্বার্থপর, একথা আমরা বলি না, মনেও করি না । কিন্তু অন্য সকলের মধ্যে যাহারা ভাল, র্যাহার। দেশভক্ত, যাহারা অন্তঃসারশূন্য নহেন, র্তাহাদেরও নিজের মুখস্বাচ্ছন্দ্যের নিমিত্ত, পরিবারবর্গের সুখসম্পদের জন্য, সঞ্চয়ের জন্য অনেক সময় ও শক্তি ব্যয়িত হয়। তাহাদের মধ্যে গোখলে অপেক্ষ শক্তিমান লোক থাকিতে পারেনু । কিন্তু র্তাহারা গোখলের সমকক্ষ দেশসেবক নহেন—একাগ্রতা ও একনিষ্ঠার অভাবে, এবং ত্যাগের আয়তায় । to
পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।