পাতা:প্রবাসী (চতুর্দশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দেখিতে পাই ? দেখিতে পাই, একজনের মাত্র একটিমাত্র " বা না কথায় দর্শনশাস্ত্রের পাতা শেষ হয় না। পক্ষ প্রতিপক্ষ করিয়া মান মতের উল্লেখে নান। বিচারচাতুরী ও যুক্তিনৈপুণ্য প্রদর্শন করিয়া কোন বিষয়ের মীমাংসা, করা হইয়াছে। দর্শন সম্বন্ধে যিনি যখন আলোচনা করিয়াছেন, তিনি তখনকার প্রচলিত সকলের কথাই উল্লেখ করিয়া আলোচনা করিয়া দেখিয়াছেন। তাহাতেই জাহার আলোচনা সম্পূর্ণ ও উপাদেয় হয়। ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা ও যুক্তির সমাবেশে দর্শনশাস্ত্র ক্রমশই পরিপুষ্ট হইয়া উঠিয়াছে, বৃহৎ হইয়া বৃহত্তর হইয়াছে ; ইহাই তাহার স্বভাব, ইহাই তাহার অলঙ্কার । এক এক জন দার্শনিক এক একটুি বিযয়কে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারে আলোচনা করিয়া দেখিরাছেন । ইহাতেই দর্শনপাঠকের রসায়ু তব হইয়া থাকে। তাহাই যদি হয়, তবে কেন আমাদের সংস্কৃতে দার্শনিক পণ্ডিতগণ দেশান্তরীয় দর্শনাদির আলোচনা না করিবেন ? ভারতবর্ষের দার্শনিক মস্তিষ্কে পাশ্চাত্য দর্শন শাস্ত্রের মনোবিজ্ঞানের আলোচন যে অতি সহজে হইতে পারবে, তাহ বগা বাহুল্য। কেন ইহারা বঞ্চিত থাকিবেন ? ইহঁদের নিকট যে, তাহা হইলে একটা নুতন চিস্তক্ষেত্র উপস্থিত হইবে, ইহারাই যে তাহ হইলে ঐ দেশান্তরের বিদ্যাটিকে যবন জ্যোতিষের মত নিজের শাস্ত্রে বাfধয়া ফেলিয়া একবারে নিজের করিয়া লইতে পরিবেন। পরকে নিজের করাই যে, হিন্দুর স্বভাব । সে ত বহু স্থানে হহার পরিচয় দিয়াছে। তবে কেন আমরা ঐ শস্ত্রাটিক এখনো পর করিয়া রাখিব ? তাহাকে যে একবারে আত্মসাৎ করিয়া জীর্ণ করিয়া সমাজের রক্তমজ্জার সহিত মিশাইয়। দিতে হইবে । হিন্দু যে বিদ্যাকে গ্রহণ করিয়াছে, এইরূপেই তাহ সমাজে প্রচার করিয়াছে, এইরূপেই হিন্দুর বেদান্তের কথ। দর্শনের কথা অতিনগণ্য পল্লীরমণীরও মুখে শুনিতে পাওয়া যায়। পাশ্চাত্য দর্শনবিদ্যা, দেশে ত বহুদিন হইল ঢুকিয়াছে, কৈ তাহ ভারতীয় আকার ধারণ করিল কৈ ? ঐ সব বিদ্যার আলোচনা কি ভারতে বাঞ্ছনীয় নহে ? যদি সত্য সত্যই বিদ্যাকে দেশে আনিতে হয়, তাহা হইলে এই সংস্কৃতেরই সাহায্যে জানিতে হইবে, সংস্কৃত হইতেই প্রাদেশিক সংস্কৃতশিক্ষা ও গুরুগৃহ ዓ¢ ভাষায় করিতে হইবে । দেশে সংস্কৃতজ্ঞের অভাব নাই। কোন বাঙালী পণ্ডিত হিগেলের সংস্কৃত করিলে দ্রাবিড়ী, কর্ণাট, মহারাষ্ট্র সব পণ্ডিতই তখন ভাল বুঝিবেন আর নিজের নিজের ভাষায় করিবেন। দেশের পরিশ্রম বাচিবে, অর্থ বাঢ়িবে, কাণ বাচিবে, অল্প সময়ে অধিক কাজ হইবে । કરે একটা প্রকাও নূতন ক্ষেত্রে কেন আমরা সংস্কৃত পণ্ডিতগণকে কৃযি করিবার জন্ত আহবান করিব ন ? ইহঁদের অপেক্ষ ধোগ্যতর কৃষক কোথায় মিলিবে ? এই জন্তই, র্যাহারা সংস্কৃত শিক্ষার অভু্যদয় কামনা করেন, তাহাদিগকে এদিকে বিশেষরূপে লক্ষ্য রাখিতে হইবে । সংস্কৃত পণ্ডিতগণের পক্ষে আপাতত এই পশ্চাত্য দর্শনাদির আলোচনাই অতি সুন্দর হইবে বলিয়া প্রথমে এই দিকেই মনোভিনিবেশ করা উচি৩ । পরে অন্যান্য বিদ্য। সদ্বন্ধেও এই প্রণালীতে কশৰ্য্য কর। যাইতে পারে । এই ত হইল বাহিরের কথা, কতকগুলি পুখুী পড়া । ভিতরের কথা কি ? কোন ভিত্তির উপর, কোন আদর্শে: এই সংস্কৃত শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইঝে ? ইহ। শক্ত প্রশ্ন নহে । ধে ভিত্তির উপরে ও যে আদর্শে দেশে প্রাচীনকালে ইহা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং কালবিপৰ্য্যাসে দুৰ্ব্বল দুর্বলতর হইলেও এখনো যাহাতে ইহা প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছে, তাহাতেই ইহাকে রাখিতে হইবে, সেই আদশে ইহাকে চালাইতে হইবে। কেবল সংস্কৃত শিক্ষর কথা নহে, ভারতের সাধারণ শিক্ষারই গোড়ার কথা হইতেছে, “মন্ত্রবিৎ” ও “আত্মবিৎ” উভয়ই হইবে, “পরা” ও “অপরা” উভয় বিদ্যাই শিখিতে হইবে । উভয়েরই যোগ রক্ষা করিতে হইবে, সামঞ্জস্ত” বিধান করিতে হইবে । অপরাবিদ্য—মন্ত্রবিদ্য!—ব্যাবহারিক বিদ্যাকে এরূপ পদ্ধতিতে পরিচালিত করিতে হইবে যে, যাহাতে তাহ বিদ্যার্থীকে পরা বিদ্যায় আত্মবিদ্যায় লইয়া যাইতে পারে। এবং সেই প্রণালীটি আর কিছুই নহে, শিক্ষার সহিত আচারের সামঞ্জস্য বিধান করা ; তাহারই ব্যবস্থ করা, যাহাতে বিদ্যার্থী “সত্য কথা বলিবে” শিখিলে সত্য কথাই বলিতে পারে, মিথ্যা যেন তাহার মুখ দিয়া বহির্গত না