পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা 1 কিন্তু জীব-জন্তুর প্রলোভনেও বিমানবিহারী বশীভূত হইল না ; বলিল, “আমার খাওয়া আর-এক শুভদিনের অপেক্ষায় থাক। স্বরেশ্বর যেদিন বাড়ী আসূবে, সেদিন আমরা দু-জনে পাশাপাশি বসে মার হাতের রান্না খাব ? 尋 বিমানবিহারীর কথায় তারামুন্দরীর চক্ষু অশ্রভারাক্রান্ত হইয়া আসিল ; বস্ত্রাঞ্চলে চক্ষু মার্জিত করিতে গিয়াই তাহার দৃষ্টি পড়িল স্বমিত্রার চক্ষুর উপর , দেখিলেন স্থমিত্রার দুটি চক্ষু বাষ্পাচ্ছন্ন হইয়া চক্চক্‌ করিতেছে। নতনেত্র হইয়া বিপন্ন স্থমিত্রা অশ্রুনিরোধ করিবার চেষ্টা করিতেছিল, কিন্তু মাধবীরও দৃষ্টি সে অতিক্রম করিতে পারিল না। পরক্ষণে তারান্বন্দরীর দিকে চাহিতেই মাধবী দেখিল যে তারাস্বন্দরী তাহার প্রতি একাগ্র ঔংস্থক্যে চাহিয়া রহিয়াছেন । এক-একটা শব্দে যেমন এক-একটা ভাবের রাজ্য খুলিয়া যায়, তেমূনি স্বমিত্রার চক্ষে অশ্রু এবং মাধবীর চক্ষের দৃষ্টি দেখিয়া তারামুন্দরী অকস্মাৎ অনেক কথা, যাহার আভাস পূৰ্ব্বে কথন-কখন সন্দেহ করিতেন, বুঝিতে পারিলেন । তাহার ইচ্ছা হইল যে, এই আহত আৰ্ত্ত তরুণীটির মুখখানা নিজ বক্ষের মধ্যে একবার চাপিয়া ধরেন । সহানুভূতির নিবিড়তায় স্বমিত্রার প্রতি একটা অনিৰ্ব্বচনীয় স্নেহ-রসে তারান্বন্দরীর চিত্ত পূর্ণ श्ब्रा ऍडठेिल । বিমানবিহারী বলিল, “এখন আমি তা হ’লে চললাম বউদিদি, দুটে তিনটের সময়ে এসে তোমাদের নিয়ে যাব।” স্বরমা বলিল, “আচ্ছা ।” বিমানবিহারী চলিয়া গেল, কিন্তু স্বরেশ্বরের উল্লেখ করিয়া যে-কথা সে বলিয়া গেল, তাহাতে আহার করিবার জন্য তাহাকে পুনরায় অনুরোধ করিতে কাহারও প্রবৃত্তি রহিল না। [ os I দ্বিপ্রহরে স্বরমা তারান্বন্দরীর সহিত গল্প করিতেছিল, মাধবী স্থমিত্রাকে লইয়া তাহার চরকা-ঘরে প্রবেশ করিল। - . . . .జి ... :aడు. রাজপথ d • ذ যে কয়েকদিন স্বমিত্র এ-গৃহে আসিয়াছে, তাহার মধ্যে একদিনও এঘরে প্রবেশ করিবার তাহার স্বযোগ হয় নাই। আজ প্রবেশ করিয়া গৃহের ভিতরকার ব্যবস্থা এবং সজ্জা-সম্ভার দেখিয়া সে বিস্মিত হইল। প্রবেশ-পথে চৌকাঠের মাথায় পড়ে থাকা পিছে মরে থাকা মিছে? লাল স্থতা দিয়া লেখা, পূৰ্ব্বে কয়েকবারই বাহির হইতে সে দেখিয়াছিল, আজ ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়া বুঝিতে পারিল যে, কক্ষের অধিকারী এবং অধিকারিণী উভয়েই, .সেই স্বক্তটি অনুসরণ করিয়া পিছন হইতে কতটা আগে চলিয়া গিয়াছে ! ঘরের ভিতর সেইরূপ আর-একটি স্বত্তের উপর দৃষ্টি-পাত করিয়া স্থমিত্রার দেহ রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিল –‘আবার তোরা মানুষ হ ! গতিহারা হইয়া স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া স্বমিত্রা মনে-মনে বলিতে লাগিল, “সত্যি ! ওগো, সত্যি ! আবার আমাদের মানুষ কর । তোমার আদর্শ দিয়ে, তোমার দৃষ্টান্ত দিয়ে, অমানুষের গওঁী থেকে আমাদের উদ্ধার করে মনুষ্যত্বের মধ্যে নিয়ে যাও ! দেশের অন্নে আর দেশের বস্ত্রে প্রতিপালিত হবার শক্তি আর সাহস আমাদের দাও।” সুমিত্রার স্তব্ধ-নিবিড়ভাব নিরীক্ষণু করিয়া মাধবী মৃদ্ধ হাসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি ভাবছি, স্থমিত্ৰা ?” মাধবীর প্রশ্নে যোগভঙ্গ হইয়া লজ্জিতভাবে স্থমিক্স বলিল, “ভাবছি কতদিনে আবার আমরা মানুষ হব।” মাধবী শাস্তু-স্মিতমুখে বলিল, “এ-সমস্তার সমাধান দাদা ত করে রেখেছেন। তোমার পিছনে ফিরে’ দেখ !” সকৌতুহলে পশ্চাতে ফিরিয়া স্বমিত্রা দেখিল, দেওয়ালের মধ্যস্থলে বড়-বড় অক্ষরে লেখা "রাজপথ’ এবং তাহার নিয়ে জাতি-ধৰ্ম্ম-নির্বিশেষে দশজন দেশনায়কের চিত্র বিলম্বিত । তাহার নীচে পুনরায় বড়-বড় অক্ষরে লেখা ‘শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রীতি, অনুসরণ’ । বিমুগ্ধ-নিৰ্ণিমেষ-নেত্ৰে স্থমিত্রা ক্ষণকাল সেই মহাজনসঙ্ঘের প্রতি চাহিয়া রহিল ; তাহার পর যুক্তকরে নত-মস্তকে ধীরে ধীরে প্রণাম করিয়া পুনরায় গভীর মনোযোগের সহিত দেখিতে লাগিল । “আবার কি ভাব,ছ, ত্বমিত্র৷ " •