পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

`ෙVෂ প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড স্থমিত্র তদবস্থ থাকিয়াই বলিল, “ভাবছি, এদের অনেকেরই ত অনেক-রকম মত, তুমি অনুসরণ করবে কা’কে ?” “মত অনেক নয় ভাই, মত একই ; পথ ভিন্ন। সে ভিন্ন-ভিন্ন পথ আবার কি-রকম ভিন্ন জান " . “কি-রকম ?” বলিয়া স্থমিত্রা মাধবীর দিকে ফিরিয়া मैंॉप्लांदेल । “কোনও রাজপথ দেখেছ ?” “দেখেছি।” -

  • রাজপথের মাঝখানটা পাথর-বাধানো হয়, তার দু’ধারে কাচা পথ থাকে ; তার পরে দু’ধারে গাছের সারির তলায় ঘাসের উপর দিয়ে হাট পথ থাকে ;

তার পর নালা-নর্দামাও থাকে। এই এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন পথের যেটা ধরে’ই তুমি চল না কেম, সেই একই দিকে তুমি এগোবে। এদের বিষয়েও ঠিক সেই কথা খাটে। এদের মধ্যে যাকেই অনুসরণ কর না কেন, গতি তোমার একই দিকে অর্থাৎ নীচু থেকে ওপর দিকে হবে। দেশ ত এক-রকমে বড় হয় না ভাই, দশ রকমে দেশ বড় হয়। তুমি কাছে গিয়ে দেখ প্রত্যেক ছবির নীচে কি লেখা আছে, তা হ’লে বুঝতে পারবে ।” দেওয়ালের নিকুটে গিয়া স্থমিত্রা দেখিল মধ্যবৰ্ত্তী মহাপুরুষের চিত্রের নীচে ক্ষুদ্র অক্ষরে লেখা রহিয়াছে 'ধৰ্ম্ম ; এবং সেই চিত্রকে ঘেরিয়া . অন্যান্য চিত্রের কোনটির তলায় ‘কৰ্ম্ম’, কোনটির তলায় "মৰ্ম্ম, কোনটির তলায় "মিলন’, কোনটির তলায় "জ্ঞান’, কোনটির তলায় “ত্যাগ’ ; এইরূপ ভিন্ন-ভিন্ন কথা লেখা রহিয়াছে। মাধবী বলিল, “এক-একটি কথা দিয়ে দাদা প্রত্যেকের বিশেষ রূপ প্রকাশ করতে চেষ্টা করেছেন। সকলের আগে ইনি হচ্ছেন ধৰ্ম্ম! এর মূলমন্ত্র হচ্ছে অহিংসা ; এর মতে অহিংসা যেদিন পৃথিবীর সমস্ত মাহুষকে ধারণ করবে সেদিন থেকে আর মানুষের মধ্যে বিবাদ থাকবে না ।” তাহার পর অপর একটি চিত্র উদ্দেশ করিয়া মাধবী বলিল, “ইনি হচ্ছেন কৰ্ম্ম ; আজীবন কর্থের সাধনা করে’ ইনি অদ্বিতীয় কৰ্ম্মবীর। ত্যাগের মধ্য দিয়ে ইনি কৰ্ম্ম করেন বলে’ এর কৰ্ম্মের শেষ হয় সফলতায় ।” “ইনি হচ্ছেন কবি, তাই মৰ্ম্ম। কল্পনা এর সহচরী, তার সাহায্যে ইনি বিশ্বের মৰ্ম্ম প্রকাশ করে দেখেন ! “মাধুৰ্য্যের মধ্য দিয়ে ইনি নিখিল মানবের মিলনপ্রয়াসী ।” তৎপরে একজন মুসলমান মহাপুরুষের চিত্র নির্দেশ করিয়া মাধবী বলিল, “ইনি হচ্ছেন মিলন, কারণ একে আশ্রয় করে গঙ্গা-যমুনার মত হিন্দু-মুসলমান মিলিত হবার উপক্রম করেছে।” “ইনি হচ্ছেন জ্ঞান। বিদ্যা বুদ্ধি আর প্রতিভার বলে ইনি সিংহের মত শক্তিশালী, তাই লোকে সিংহের সঙ্গে এর তুলনা করে।” “ইনি হচ্ছেন ত্যাগ। আজীবন ত্যাগের সঙ্গে চিরব্ৰহ্মচর্য্যের যোগ থাকায় ইনি ঋষির স্থান অধিকার করেছেন।” শুনিতে-শুনিতে স্বমিত্রার মুখ প্রদীপ্ত হইয়া উঠিল! হৰ্ষোৎফুল্ল-মুখে সে বলিল, “কি স্বন্দর ভাই । আর, কি স্বন্দর করে তুমি বলছ! কত তুমি জান, তাই এমন সুন্দর করে’ বলতে পার!” হাসিমুখে মাধবী বলিল, “আমার স্মরণ-শক্তি যদি আরও ভাল হ’ত, তা হলে আরও ভাল করে বলতে পারতাম। দাদার মুখে শুনে-শুনে’ এ-সব আমার প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। দাদার বলবার ধরণ এমন স্পষ্ট যে তার মুখ থেকে কোন কথা একবার শুনলে মনের মধ্যে তা একেবারে গেঁথে যায়। কেন, তুমিও ত—” কথাটা শেষ না করিয়াই মাধবী থামিয়া গেল। যদিও সে যাহা বলিতে যাইতেছিল তাহার মধ্যে বিমানবিহারীর সহিত স্বমিত্রার মিলনের পক্ষে প্রতিকুলত কিছুই ছিল না, তথাপি, স্বরেশ্বরের নিকট প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়াই, সে-কথাটুকু বলাও সে সমীচীন মনে করিল না। - স্বমিত্রা কিন্তু মাধবীর অসমাপ্ত কথার স্বত্রটুকু অবলম্বন করিয়া বলিল, “আমিও তার কাছে অনেক কথা শুনেছি ; .কিন্তু আমার বোধ হয় তেমন আগ্রহ নেই বলে সব