পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] পূর্বাভিমুখে প্রবাহিত। কৃষি-কাৰ্য্যের হুবিধার জন্য ও অনাবৃষ্টির সময়ে শস্তরক্ষা করিবার জন্য বাকুড়ার কৃষকগণ যেউপায়ে জল-সেচনের ব্যবস্থা করে, বীরভূমেও তাহা দেখা যায় । প্রাকৃতিক গঠন ও অবস্থার এইসকল সাদৃশু লক্ষিত হইলেও অন্ত কয়েকটি কারণে অবস্থার অনৈক্য ঘটিয়াছে । মুসলমান-রাজত্বের শেষভাগে ও ইংরেজ-শাসনের প্রারম্ভে ভাগীরথী নদীই আমাদের দেশে যাতায়াতের প্রধান পথ ছিল। তাহার পর ইষ্ট-ইণ্ডিয়ান-রেলপথ প্রস্তুত হওয়া অবধি, দেশের অন্যান্য অংশের সহিত এই জেলার ঘনিষ্ঠ সংযোগ স্থাপিত হইয়াছে। প্রায় ২০ বৎসর পূৰ্ব্বে বাঁকুড়া জেলায় কোনও রেলপথ ছিল না। স্বতরাং শিক্ষা ও ব্যবসায়ে এই জেলার লোক বাঁকুড়াবাসী-অপেক্ষ অনেক অধিক - অগ্রসর হইবার স্বযোগ পাইয়াছে। রেলপথ নিৰ্ম্মাণ হওয়াতে যেমন বীরভূমের এইসকল স্বযোগ ঘটিয়াছে, তেমূনি ইহার দ্বারা জেলার স্বাস্থ্যের যথেষ্ট অবনতি হইয়াছে। ইষ্ট ইণ্ডিয়ান-রেলপথের লুপ, লাইন বীরভূম-জেলাকে সমান আকারে দুই খণ্ডে বিভক্ত করিয়া ভাগীরথীর সহিত সমান্তরাল-ভাবে চলিয়া গিয়াছে। স্বতরাং সাওতাল পরগণার পর্বত-শ্রেণী হইতে উৎপন্ন যে-সকল নদী-নাল দিয়া এই জেলার জল ভাগীরথীতে নিকাশ হইত, তাহার সবগুলিই এই রেল-লাইনে আটক পড়িয়াছে। জল-নিকাশের পথ বন্ধ হইলে যে স্বাস্থ্যহানি ঘটে, ইহা প্রমাণ হইয়াছে । বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন অংশে লোক-ক্ষয়ের হার তুলনা করিলে দেখা যায় যে, সদর মহকুমায় হাজার-করা ৭০ জন ও বিষ্ণুপুর মহকুমায় হাজার-করা ১৬২ জন কমিয় ছে । বীরভূমের বিভিন্ন অংশে এইরূপ পার্থক্য দেখা যায় না । কেবলমাত্র জেলার উত্তর-প্রাস্তবত্তী মুরারই থানায় হাজার-করা ১৫৬ জন লোক কমিয়াছে । অন্ত সব অংশের অবস্থা প্রায় সমান । এখানকার লোকের বসতি বাকুড়া অপেক্ষা ঘন । বাঁকুড়ায় প্রতি বর্গ-মাইলে ৩৮৮ জন লোক বাস করে ; বীরভূমে ৪৮৩ জন। জঙ্গল ও পাৰ্ব্বত্য-ভূমি এখানে বাংলার ক্ষয়িষ্ণু জেলাসমূহ—বীরভূম Seసి অনেক কম। অস্কান্ত অংশ অপেক্ষা জেলার উত্তর-ভাগে নলহাট ও মুরারই থানায় বসতি ঘন । এই জেলায় গড়ে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫৬০২ ইঞ্চি মাত্র। বাঁকুড়ায় বৃষ্টিপাত আরও কম, ৫৩১১ ইঞ্চি। বাংলার অন্ত জেলার তুলনায় এই বৃষ্টির পরিমাণ নিতান্ত কম। অধিকন্তু বর্ষার জল, অসমতল জমিতে পড়িয়া, অতি ক্ষণকালের মধ্যেই নদী-নাল দিয়া বাহির হইয়া যায় । এইপ্রকার ছোট ছোট জল স্রোতকে এখানকার লোকের “কাদড়” বলে, বাঁকুড়ার ন্যায় এখানেও কৃষিকার্ধ্যের উন্নতি ও বিস্তৃতির জন্য বৃষ্টির জল সঞ্চয় করিবার প্রয়োজন হয় । বৰ্ত্তমান সেন্সস রিপোর্টে টম্সন সাহেব যে-কয়েকটি জেলার ফসলের পরিমাণ-সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াছেন, তাহাতে বীরভূমের উল্লেখ নাই। স্বতরাং এই জেলার ফসলের পরিমাণের সঠিক খবর এই রিপোর্টে পাওয়া যায় না। কিন্তু এই জেলা-সম্বন্ধে যাহার লেশমাত্রও অভি • জ্ঞতা আছে, তিনিই জানেন যে, এখানে প্রায় প্রতিবৎসর জলাভাবে অনেক শস্য নষ্ট হয়। ইহাই বীরভূম জেলার দারিদ্র্যের প্রধান কারণ। কিন্তু এখানে বাকুড়া জেলার ন্যায় ভীষণ অন্নকষ্ট হয় না। ওম্যালি সাহেব প্রণীত এই জেলার বৃত্তান্তে প্রকাশ যে, ১৮৭৪ ও ১৮৮৫ সালে এই জেলায় দুর্ভিক্ষ হইয়াছিল। প্রথম দুর্ভিক্ষ অতিশয় ভয়ানক হইয়াছিল এবং ১৮৭২ সাল হইতে ১৮৮১ সালের মধ্যে যে এই জেলার জন-সংখ্যা হ্রাস হুঁইয়াছে, এই দুর্ভিক্ষই তাহার কারণ। ১৮৮৫ সালের দুর্তিক্ষে জেলার মধ্যে ২৫৮ বর্গমাইলে ১২৯০০০ লোক অভাবগ্ৰস্ত হইয়াছিল। সেই কারণে ১৮৮১ হইতে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা অতি সামান্তই বাড়িয়াছিল। তাহার পর আর গবর্ণমেণ্টের স্বীকৃত দুর্ভিক্ষ হয় নাই । বিগত দশ বৎসরের মধ্যে এই জেলার লোক-সংখ্যা অত্যন্ত কমিয়া গিয়াছে, ম্যালেরিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপই তাহার প্রধান কারণ বলিয়া নির্দিষ্ট হুইয়া থাকে। অনেকে বলেন যে, অণ্ডাল হইতে সাইথিয়া পৰ্য্যস্ত রেললাইন নিৰ্ম্মিত হুইবার অব্যবহিত পর হইতে ম্যালেরিয়া রোগের বৃদ্ধি হইয়াছে। বাংলা সরকারের ১৯১৯ সালের স্বাস্থ্য বিভাগের রিপোর্টে প্রকাশ যে, বাংলার অপর সকল