পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>> o প্রবাসী-কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড জেলা অপেক্ষ বীরভূমেই ম্যালেরিয়া-জরে মৃত্যুর হার বেশী। ১৯১৪ হইতে ১৯১৮ এই চার বৎসরের গড় ছিল হাজারে ৩৪৭; এই কয় বৎসরে একমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলার মৃত্যুর হার ইহা অপেক্ষ বেশী ছিল। পরবর্তী ১৯১৯ সালে, বীরভূমের মৃত্যুর হার ৩৪৭ হইতে বাড়িয়া ৫১৭ হইয়াছিল। ১৮১৮-১৯ সালে বাংলা দেশের প্রায় সৰ্ব্বত্রই ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে অনেক লোকের মৃত্যু হইয়াছিল। এই রোগে কত লোক মরিয়াছিল, তাহার সঠিক সংবাদ জানা যায় না, কারণ অনেক স্থলে সাধারণ লোক ও গ্রাম্য চিকিৎসকগণ প্রকৃত রোগ নির্ণয় করিতে পারেন নাই। কিন্তু পূৰ্ব্ব বৎসর জর-রোগে যত লোকের মৃত্যু হইয়াছিল, ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর বৎসরে তাহার অতিরিক্ত যে-সকল মৃত্যু ঘটিয়াছিল, ইনফ্লুয়েঞ্জাই যে তাহার কারণ, এরূপ মনে করা অসঙ্গত হয় না। সরকারী স্বাস্থ্য-বিভাগের রিপোর্টেও সেই মত ব্যক্ত করা হইয়াছে। ১৯১৮ সালের সরকারী ৯ রিপোর্টে প্রকাশ যে, বীরভূমে সাধারণতঃ হাজারে যত লোক মরে, ঐ বৎসরের শেষ ছয় মাসে তাহার অপেক্ষা আর ৫৯ জন হারে বেশী মরিয়াছিল। ১৯১৯ সালের অবস্থা আরও ভয়ানক । ঐ বৎসরের প্রথম ছয় মাসে, হাজার-করা ১৪৯ জন লোক বেশী মরিয়াছিল। সেই বৎসর অতিরিক্ত মৃত্যুর হার বাংলার অপর সব জেলা অপেক্ষ বীরভূমেই বেশী ছিল। * * সাধারণ জরই হউক বা ইনফ্লুয়েঞ্জাই হউক, উপযুক্ত খাদ্য এবং পরিধেয় বস্ত্র পাইলে এবং চিকিৎসা ও ঔষধের ৰ্যবস্থা থাকিলে যে ইহাদের মধ্যে অনেক লোকের প্রাণ রক্ষা হইত, তাহাতে সন্দেহ নাই । স্বাস্থ্য-বিভাগের পূৰ্ব্বোক্ত রিপোর্টে যে-সকল চিত্রাবলী আছে, তস্কৃষ্টে বীরভূমের অবস্থা যে কত শোচনীয় হইয়াছে তাহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়। যে-সকল জেলায় শিশুগণের মৃত্যুর হার সর্বাপেক্ষা বেশী, বীরভূম তাহাদের অন্যতম। ১৯১৯ সালে কলেরা-রোগে বাংলাদেশের মধ্যে সৰ্ব্বাপেক্ষ বেশী মৃত্যু হইয়াছিল দুইটি জেলায়—বীরভূম ও চব্বিশ পরগণা। কলেরায় মৃত্যু নিবারণ করা যাইতে পারে ; কিন্তু তাহা শিক্ষার-বিস্তার ও চিকিৎসার ব্যবস্থার উপর নির্ভর করে । বসন্ত ও আমাশয়-রোগের প্রকোপ এখানে কিছু কম ; কালাজর ও যক্ষ্মারোগ এখনও তত বিস্তৃতি লাভ করে নাই। কিন্তু আন্ত্রিক জর ও নিউমোনিয়াতে বীরভূম প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছে। কুষ্ঠ-রোগের প্রাদুর্ভাব এই জেলায় অত্যন্ত বেশী । বাকুড়ায় প্রতি লক্ষে ২৭০ জন লোক কুষ্ঠ-রোগগ্ৰস্ত। বীরভূমে ১৪৮ জন। বাংলার আর কোনও জেলায় এত কুষ্ঠা নাই । এই জেলার কোন থানায় প্রতি লক্ষে কত কুষ্ঠী, তাহার তালিকা নিম্নে দেওয়া হইল— শিউড়ী ՖՀ Գ আহম্মদপুর, ৯৬ সাইথিয়৷ ১৩৯ নানুর ՖՀbমহম্মদবাজার ২৬৮ লাভপুর ১৩১ রাজনগর ৩৬৫ রামপুরহাট ১০৬ দুবরাজপুর ২৬৭ ময়ূরেশ্বর ›ፃፃ খয়রাসোল ৩১২ নলহাটী ግ8 শাহপুর S&b- মুরারই У о о বোলপুর br8 ইলামবাজার ৮০ বাকুড়া, বৰ্দ্ধমান ও বীরভূম জেলায় কুষ্ঠ-রোগের এত প্রাদুর্ভাব কেন,তাহার কারণনির্দেশ করা আমাদের সাধ্যাতীত । মানুষ-গুনতির সময় যে-সকল লোক কুষ্ঠা বলিয়া পরিগণিত, প্রকৃত সংখ্যা বোধ হয় তাহা অপেক্ষা অনেক বেশী। কুষ্ঠ-রোগীর সংস্পর্শ হইতে মুস্থকায় ব্যক্তিদিগকে রক্ষা করিবার জন্য এবং দরিদ্র সহায়হীন কুষ্ঠ-রোগীদের সেবা-শুশ্রুষার জন্য শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের উন্নতি প্রয়োজন । বীরভূমে এত অধিক কুষ্ঠা থাকা সত্ত্বেও এখানে কুষ্ঠাশ্রম নাই । বাকুড়ায় যে আশ্রম আছে, তাহ খ্ৰীষ্টীয়ান মিশনারীগণের দ্বার স্থাপিত ও পরিচালিত। ইহা আমাদের লজ্জার বিষয়, সন্দেহ নাই । যে-জেলায় লোক-সংখ্যা ক্রমশঃ ক্ষয়প্রাপ্ত হইতেছে, সেখানে জন্মের হার অপেক্ষ মৃত্যুর হার বেশী হইবেই। বীরভূমেও তাহাই হইতেছে। ১৯১৯ সালের স্বাস্থ্যবিভাগের প্রচারিত রিপোর্টে জ্ঞানা যায় যে, জন্মের হার সৰ্ব্বাপেক্ষা বেশী কমিয়াছিল বীরভূম জেলায় এবং এই জেলার জন্ম ও মৃত্যুর হারের পার্থক্য সৰ্ব্বাপেক্ষ বেশী