১ম সংখ্যা ] বটে, কিন্তু, শান্তি পেলে না। রাজার দানে প্রজার সম্ভোষ হয়, কারণ প্রজা সে-দান প্রাপ্য মনে করে । কিন্তু, এই নূতন রাজা ত সে রাজা নন। কথাটা মনের ভিতরে রইল, প্রজা জানতে পারলে না। কাজেই অর্ণবদার বাড়তে লাগল। প্রজ চাপকান এট্যে সামলা মাথায় পর্যে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে ব’ললে, “আমরা এখন তোমাদের বিদ্যা শিখেছি, দেশ শাসন ক’বৃতে দাও।” রাজা খুগ্ৰী হ’লেন, ব’ল্লেন “তা ত ঠিক ; এজন্যেই এদেশে আমাদের আসা, কিন্তু, একবারে পারবে না, আমরাই পারি নি?” ক্রমে প্রার্থনার ভঙ্গি বদলে গেল। এখন স্টেকোট পরে ইংরেজ সেজ্যে শস্ক ইংরেজী ভাষায় প্রজা ব’ললে, “দেখ এখন আমরা তোমাদের সমান হয়েছি, দেশও আমাদের ; এখন রাজ্যের ভার সমানে সমানে নিলেই ভাল হয়।” কথাটা শুন্যে কোন কোন ইংরেজ হাস্লেন ; কেহ বা মিষ্ট কথায় বুঝিয়ে দিলেন, যুগযুগান্তর তপস্তা করলেও এ-বর লাভের যোগ্য হবে না । ইহাতেও যখন ভারতী ক্ষান্ত হ’ল না, দুবিনীত পুত্রের ন্যায় দিবারাত্র ঘেন-ঘেন করতে লাগল, তখন চিরন্তন লাঠি বীর ক’বৃতে হ’ল। কেহ কেই স্পষ্টবক্তা বললেন, “মণে কর্যেছিলাম তোমাদের কিছু বোধ জন্মেছে! কেহ কখনও নিজের জমিদারি ছাড়ে কি ? আমরা সন্ন্যাসী নই, বৈরাগী নই, বিষয়সম্পত্তি রক্ষা করতে অসমর্থও নই।” কেহ কেহ আরও স্পষ্ট কর্যে বললেন, “তোমরা রাজভোগে থাকবে, আর আমরা তোমাদের বাড়ী পাহারা দিব, এমন আশ্চর্ষা কথা বলতে লজ্জা হ’চছে না ? কয়েকজন প্রজা খুব বুদ্ধিমান ; তারা ব’ললে, “তোমরাই যে বলেছিলে রাজ্যভার আমাদিকে দিবে ? তোমাদের এ কি অন্যায়, যুদ্ধবিদ্যা না শিখিয়ে এখন ব’ল্ছ কে পাহারা দিবে ? দু’শঅ বছর ধর্যে আমাদিকে মানুষ ক’ৰ্বছ ; এখনও ব’লছ মানুষ হই নি ? তোমাদের অধ্যাপনার কলঙ্ক রটাতে চাও ?” এইরুপ যখনই বলি, রোগে দেশ উৎসন্ন হ’ল, লোকে না খেতে পেয়ে মর্যে গেল ; তখনই স্বীকার করি, তোমরা বড় আমরা ছোট, তোমরা রাখলে রাখতে পার, মারলে ছোট ও বড় ১২১ মাৰ্বতে পার। এই দীনতা-স্বীকারে পশুর মনেও সন্তোষ জয়ে না। ইংরেজের দর্প, দেশের অশাস্তির কারণ নয়। বরং ভেবে দেখলে বুঝি, দৰ্পের বহু হেতু থাকৃতেও যেজাতি ব্যবহারে শিষ্ট, সে-জাতি বাস্তবিক মহৎ । আমরা মুখে ব’লছি সমান, কিন্তু অস্তরে বুঝছি সমান নই। চাই সমান হাতে, কিন্তু পারছি না। একদিকে আকাজ, অন্যদিকে তৃপ্তির যোগ্যতার অভাব ; এই দ্বন্দ্বেই ভারতীর অসন্তোষ । আমি বড় তুমি ছোট, আমরা বড় তোমরা ছোট, —এই যে ভাব ইহা মানব-স্বষ্টির আরম্ভ হ’তে আছে। আমি বড়, আমি যা-কে আমার বলি সেও বড়, একথা স্থলবার জো নাই । . কারণ ভুলতে গেলেই আমার বাচবার হেতু থাকে না। স্বষ্টিমধ্যে আমার থাকবার প্রয়োজন আছে, নইলে স্থষ্টির অভিপ্রায় অহেতুক হ’য়ে পড়ে। বড়ই থাকবে, থাকৃতে পারে। ছোট যে আছে, তা আমাকে বড় স্বীকার করতে আছে, তার থাকবার এই হেতু বই অন্য হেতু নাই। ইয়ুরোপে যে মহাযুদ্ধ হ’য়ে গেল, কে বড় কে ছোট তারই পরীক্ষা । এই পরীক্ষা চিরকাল চলবে। যখন চলবে না, তখন স্বষ্টিও থাকৃবে না। কে বড় কে ছোট, এই যুদ্ধে বাহুবলের সহিত বুদ্ধিবল যুক্ত হ’লে সোনায় সোহাগা হয়, ছোটকে আত্মসাৎ ক’বৃতে কষ্ট হয় না। কিন্তু আমরা নাকি পশুনামে গণ্য হতে চাই না। তাই বেঁচে থাকবার যুক্তি দেখাই । হিন্দু বলছেন, দেখ, তোমরা কতদিনের বা মানুষ । তোমরা যখন পশু ছিলে, তার কত আগে হতে যে আমরা মানুষ তা গণতে গেলে কাগজ পেনসিল চাই । এই যে এত কাল আছি এতেই প্রমাণ হ’চছে আমরা বড়। আমাদের যে অতুল বিভব আছে, তা পৃথিবীময় বিতরণ না কর্যে কি লুপ্ত হতে পারি? আমাদিকে থাকতেই হবে, নইলে সে-সব নষ্ট হয়ে যাবে। মুসলমান বলছেন, যে-ইসলামের বিজয়-বাদ্য পৃথিবীর অৰ্দ্ধাংশে নিনাদিত হয়েছিল, মুসলমানের যে-কীৰ্ত্তি পেয়ে বর্তমান ইয়ুরোপের প্রতিষ্ঠা, যার অমিত তেজ এখনও ভূখণ্ডে জাজল্যমান, তাকে বড় স্বীকার করতেই হবে। জন
পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।