পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২২ সাম্য ঘোষণার আর কে বা আছে ? খ্ৰীষ্টান বলছেন, আমরা যে বড় তাও কি প্রমাণ করতে হবে ? তোমাদিকেও বড় ক’বৃব, সভ্য করব বলেই ত আমরা আছি । এসব বাইরের লোকের সঙ্গে তর্ক । ভিতরের লোক যা দিকে আপনার বলি,তাদের সঙ্গেও কলহ চলছে। ব্রাহ্মণ বলছেন, “আমার তুল্য শ চিজাতি ভূমণ্ডলে নাই। আমি মুক্তি-প্রয়াসী ; আর মুক্তিপথে প্রথম পা ফেলতে গেলেই বাহে ও অভ্যন্তরে শুচি হ’তে হবে। এই-হেতু অহিন্দু কেহ ছুলে আমায় স্নান করতে হয়।” তখন এক শূত্র বললে, “আমিও যে হিন্দু আমায় ছতে ডরান কেন ?” ব্ৰাহ্মণ বলছেন, “কি করি বল, সকলের আচার ত সমান নয়। যার ভাল নয়, তাকে কি কর্যে ছুই ? কার ভাল কার নয়, তা শাস্ত্রে লেখা আছে ; জাতি-নাম শনলেই বুঝতে পারি, কার ছোয়া জল গ্রহণ করতে পারি।” শূত্র স্মরণ করিয়ে দিলে, “সে যে দু-চার হাজার বছর আগের কথা ! ব্রাহ্মণের সেবা এতকাল করে আসছি, সদাচার কি শিখতে পারি নি ?” শাস্ত্রবাদী নিরুত্তর, কারণ প্রত্যক্ষ দেখছেন সদাচার। শাস্ত্র ও যুক্তিবাদী বলছেন, “তুমি বা ব’লছ তা ঠিক। শাস্ত্রেও আছে শূত্র ভূত্যের অন্ন গ্রহণ করতে পারা যায়, কারণ সংসর্গ-গুণে তার শৌচাচার হয়। কিন্তু তুস্থিত একানও । তোমার স্ত্রীপুত্র আছে, জাতি-বন্ধু আছে। তারা শৌচাচার শেখে নাই, কিন্তু তোমার সমান অধিকার চাইবে । এতে বিরোধের স্বষ্টি হবে।” শাস্ত্র-ও প্রত্যক্ষবাদী বলছেন, “তুমি যা বলছ, তা ঠিক। আপৎকালে আপদ-ধৰ্ম্ম শাস্ত্রেও আছে। কিন্তু এই কাল আপৎকাল কি না, বুঝতে পারছি না। না বুঝ্যে কেমন কর্যে তোমার জল খাই ” শাস্ত্র যদি এত বলবান, শূদ্র বলছে, “ঠাকুর, শাস্ত্র আমিও দেখেছি, জামরা শূত্র নই, ব্রাহ্মণ লক্ষণ মিলিয়ে দেখুন।” কেহ বললে আমরা ক্ষত্রিয়, কেহ বললে বৈপ্ত। “বলতে পারেন আমাদের উপনয়ন হয় নাই । তাতে বাধা কি, যজ্ঞোপবীতধারণ করছি, অশৌচ-কাল কমিয়ে দিচছি।” ব্ৰাহ্মণ দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ছেন, রাজা বিধৰ্ম্মী, কলি প্রবল। এত কাল এইরূপ বিবাদ ছিল না। যে ছোট সে প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড আপনাকে ছোট বল্যে স্বীকার ক’বৃত। যে বড় সেও ছোটর প্রতি সদয় ও উদার ব্যবহার করত। কিন্তু ইংরেজ রাজার কাছে কেহ ছোট, কেহ বড় রইল না, সকলের আসন সমান হয়ে গেল । ট্রেনে ও ট্রামে, জাহাজে ও শহরে, ব্রাহ্মণ শূন্দ্রের গা-ঘেঁষাঘেষি হ'তে লাগল। আদালতে অপরাধের দণ্ড হ’ল, অপরাধীর বিচার হ’ল না। সমাজ এইসবও সইতে পারে ; কারণ অপরাধ করা আর ট্রেনে চড়া লোকের ইচ্ছাধীন। ভয়ানক এই, যারা ছোট ছিল তার রাজার দৃষ্টির গণে বড় হ’ল, সম্মানিত হ’ল, দণ্ডমুণ্ডের কৰ্ত্ত হ’ল । যারা বড় ছিল, তারা সকলে বড় থাকৃতে পারলে না । ছোট দেখলে, বুঝলে, তারা ছোট নয়, বড়র সমান। ভারতীর জন্মাবধি এমন সমাজ-বিপ্লব কখনও হয় নাই। অল্পস্বল্প যা হয়েছে তা ধৰ্ম্মের দুয়ার দিয়ে। কদাচিৎ রাজার হুকুমে ছোট, বড় হয়েছে, প্রজা স্বীকার কর্যেছে । কিন্তু বড় কখনও ছোট হন নাই । ধৰ্ম্মের বাধনে যে-সাম্য ধটে, তার গ্রস্থি অন্তর্যামীর হাতে ; সমাজ-বিপ্লবে যে-সাম্য ঘটে, সেটা মনের ভিতরে নয়, বাইরে। বিদেশী, বিধর্মী রাজা সমাজ-সংস্থাপক হতে পাবুলেন না, ইচ্ছা কর্যে হলেন না। কিন্তু প্রবল রুদ্ধ ইচ্ছার কপাট খুল্যে দিলেন। বহ কালের বৃহৎ বীক-স্তুপ ভগ্ন হ’ল, ঝণকে ঝণকে পুত্তী উড়্যে পুরাতন ধর্ম-কম আচার-ব্যবহার অন্ধকারে ছেয়ে ফেললে । হিন্দু, নামে মাত্র হিন্দু রইল ; নিজের দ্বীপের আলো দেখতে পেলে না, পশ্চিমের প্রখর দীপে আলো ও আঁধার বিকট হয়ে দাড়াল । বিকট দৃপ্ত কেউ দেখতে পারে না। রাজা কে, যে, প্রজার কাছে এত বড় হয়ে দাড়াবেন ? পিতা কে, যে, পুত্র তার আজ্ঞা পালন করবে ? প্ৰভু কে, যে, ভূত্য পদসম্বাহন ক’বৃবে ? সে নর কে, যে, নারীকে দাসী হতে হবে ? কেহ বড় নয়, কেহ ছোট নয়, সবাই সমান। ভারতী প্রজা রাজার কাছে সমান হ’তে গিয়ে দেখলে পশ্চিমের পক্ষে পশ্চিম সত্য, পূর্বের পক্ষে নয়। রাজাও ব’ললেন, তাদের পোষাক এদেশে পারলে সগিৰ্ম্মি হবে। ভারতী দেশে-বিদেশে বাড়ীর বাইরে কোথাও মান পেলে না, কাজেই বাড়ীর ভিতরে সে