পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] মান আদায় করতে বস্যে গেছে । বড় হবার ইচ্ছা নয়, বড় প্রমাণ করবার ইচ্ছা প্রবল হয়েছে। কোথাও গলার জোরে, কোথাও লাঠি ঠেঙ্গা নিয়ে, কোথাও ধরণ দিয়ে, কোথাও রাজার দোহাই চেয়ে, কোথাও রাজার পোষাক পর্যে, বড় প্রমাণ করতে লেগে গেছে । কিন্তু মানুষের স্বভাবও এই, সে বড়কে সইতে মানতে পারে, কিন্তু বড়াই দেখলে জল্যে উঠে। এই যে, ঘরে-বাইরে বিরোধ, তা রাষ্ট্রবিপ্লব হতেও দারুণ । নিম্নজাতির উচ্চ হবার ইচ্ছা বুঝতে পারি। ইহাতে আত্ম-সম্মান জন্মে। সে যে ছোট নয়, এই জ্ঞান জন্মিলে হিন্দু সমাজেরই মঙ্গল । কিন্তু উচ্চজাতিও যে উচ্চতর, উচ্চতম, প্রমাণ করতে ব্যগ্র, তার কারণ ঘরে মানের আশা, যেহেতু বাইরে নাই। র্তার বলেন, যেটা সত্য সেটা গ্রহণ করছেন ; কিন্তু বলেন না, এতকাল সে সত্য কোথায় ছিল, এত কাল সত্যাম্বেষণ হয় নাই কেন । পূৰ্ব্বকালে আর্য্যের চারি বর্ণে বিভক্ত ছিলেন । তার পর বর্ণসঙ্কর হয়ে নানাজাতির উৎপত্তি হয়েছে। এখন যদি জাতিভেদ গিয়ে বাস্তবিক চারিবর্ণ ফির্যে আসে, সমাজের পক্ষে মঙ্গল । যদি চারিবর্ণ গিয়ে আর্য্য বা আর কোন নামে হিন্দুসমাজ ঘরে ও বাইরে পরিচিত হতে পারে, তা হ’লে দেশের পক্ষে আরও মঙ্গল। হয়ত শাস্ত্রের কথা ফলতে আরম্ভ হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি না,—কলিকালে লোকে এক-আকার এক-বর্ণ হবে । কিন্তু জড়রাজ্যে যেমন, যেটা চলে সেটা চলতে থাকে, থামে না ; মনের ভাবও তেমন, যেটা আছে, সেটা থাকে। অন্যদিকে প্রবল আকর্ষণ না হ’লে গতি বা গতিপথ পরিবর্তিত হয় না। এতকালেও হিন্দু বুঝতে পারে নাই, সেদিন আর নাই। বণিকের বাড়ীতে ডাকীং পড়েছে ; গায়ের লোক ভাবছে ডাকাতে খংগলা পুড়িয়ে দিয়ে গেলে কালী মায়ের পূজা দিব। রাক্ষস এসে ব্রাহ্মণের কন্যা হরণ কর্যে নিয়ে যাচছে, কিন্তু রাক্ষসবধ রাজার কাজ, প্রজার নয়। মনের এই যে অবস্থান, তার পরিবর্তন না হ’লে বড় কি ছোটই বা কি ? শুনি, পুরাকালে এদেশে কেবল কৃষ্ণবর্ণ অনার্ধ্যের বাস ছিল। কতকাল পরে শ্বেতবর্ণ অার্য্যের এস্যে দেশের ছোট ও বড় చ్చెరీ এক কোণে বস-বাস আরম্ভ ক’বুলেন। ক্রমে তাদের পরিবার বাড়তে লাগল, পূর্বের ভিটা-মাটিতে কুলাল না, নূতন নূতন স্থানে গা পত্তন করতে হ’ল। প্রথম প্রথম অনার্ধ্যেরা এই নূতন মানুষগুলির রীতি-নীতি কৌতুহলদৃষ্টিতে দূর হতে দেখত। কিন্তু এরা ত মাহুষ ভাল নয়, গাঁকে গা জুড়্যে বস্ছে, মাঠকে মাঠ চষ্যে ফেলছে। আমরা যাই কোথায়, কেনই বা পৈত্রিক ভিটা ছাড়ব । তখন যা হয়, তা হতে লাগল। আর্ধ্যেরা বললেন, “তোদের মতন দস্সি কোথাও দেখি নি ? তোদের কোনও ক্ষতি ক’বৃছি না, তবু তোরা আমাদের ক্ষতি ক’বৃবি ? বানরমুখো কি না, কৃষ্ণবর্ণ কি না, অসভ্য কি না ; তোদের ভাল মন্দ জ্ঞান কি আছে ?” কিন্তু, গর্জনে ফল হ’ল না । অসভ্যগুলা তীরধকুক নিয়ে লড়াই ক'বৃতে এল, দুর্ভেদ্য দুর্গে লুকাতে লাগল। তখন গোত্রে গোত্রে ডাক্‌ হাক সাড়া পড়ে গেল, লোক জমায়েৎ হ’ল, যগ,গি"কাও হ’ল। একত্র ভোজন হ’ল । "হে ইন্দ্ৰ, তোমার বজ্ৰ শত্র গুলার মাথায় নিক্ষেপ কর; হে বরুণ, শজুগুলাকে রশি দিয়ে বেঁধ্যে ফেল হে অগ্নি, ওদের ঘর দুয়ার পুড়িয়ে ফেল । তোমরা সবই জান, দস্সিরা অন্যায় করছে, আমাদের যাগযজ্ঞে বাধা দিচছে।” দেবতারা স্তুতি শুনলেন, অনাৰ্য্যের পরাজয় হ’ল, উৎসব চলিল । ঠিক এই ভাব নিয়ে গত মহাযুদ্ধে প্রত্যেক জাতি বলেছিল, আমাদের যুদ্ধ ধৰ্ম্মযুদ্ধ, ঈশ্বর তা নিশ্চয়ই জানেন । যখন ব্রহ্মদেশের অসভ্য রাজা নিজের সিংহাসন ভালয় ভালয় ছাড়তে চাইলে না, তখন সভ্য ইংরেজ তাকে ডাকৗৎ বলতে লাগল। আর যখন ডাকাংটা বন্দী হ’ল, তখন কলিকাতার গির্জায় গির্জায় ঈশ্বরের মহিমা গান হয়েছিল। যখন মুসলমান এদেশে ঢক্যে দেখলে, হিন্দুরা বহুত মানতে চায় না, তখন শাস্ত্র বাহির হল, কাফেরের সঙ্গে মৈত্রী নিষিদ্ধ। আর্ধ্যেরা অনার্ধ্যদিকে ঘৃণা করতেন। অনার্য্যদের লেখা ইতিহাস থাকুলে দেখতাম, তারাও আর্য্যদিকে ঘৃণা করত। কারণ কোন জেতা তার বিজিতকে ভালবাসে এবং কোন বিজিত তার জেতাকে বন্ধুকুানে পূজা করতে