পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩০১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড কেবল পুৰ্ব্বকালে নয়, একালেও—সে কথা এখন থাকু। কিন্তু দেখা যাচছে, যে ছোট সে কন্যা দ্বারা ক্রমশঃ বড় হয়, আর যে বড় সে পুত্র দ্বারা ক্রমশ: ছোট হয় না, চিরকাল বড়ই থাকে। এইরূপে হিন্দু-সমাজ যে কত কাল কাটিয়েছে, কে জানে। তখন বিদেশী বিধর্মী বড়-একটা এদেশে আসত না, অল্পস্বল্প যে বা আস্ত, এদেশে থাকৃতে থাকৃতে হিন্দুসমাজভুক্ত হয়ে পড়ত। শাক্যসিংহ এক প্রবল ধাক্কা দিলেন । আমার বোধ হয়, তিনি তার বল বাছির হতে পেয়েছিলেন । রাজা হ’লেই ক্ষত্রিয়, শাক্যবংশও ক্ষত্ৰিয় । কিন্তু সেবংশের আদি কোথায়, না জানলে সত্য মিথ্যা ব’লতে পারা যায় না। সে যা হ’ক, সে ধাক্কা সাম্লাতে গিয়ে পূর্বের হিন্দুসমাজ যে ওলট-পালট হয়ে গেছল, তা সকলেই বলেন । এত গোজামিল দিতে হ’ল যে, পুরান চালের পুরানা খড় থাকুল কি না, সন্দেহ । আবার নূতন কাঠাম হ’ল, কিন্তু পুরান কাঠখড় দিয়েই হ’ল। এমন সময় বিদেশী বিধর্মী দলে দলে যুদ্ধবেশে আসতে লাগল, চালের উপর চড়তে লাগল, লাঠির উপর লাঠি পড়তে লাগল। পরাধীন জাতির অধীনতা কেবল দেহে ত নয়। আর, মন যদি পরাধীন হয়, তা হ’লে আপনার বলতে কিছুই থাকে না । যে জাতিই হ’ক, তার আত্মরক্ষার বম মাত্র একটি, তার স্মৃতি । আচারে ও ব্যবহারে হিন্দুস্তুক পৃথক থাকতে হ’ল, জাতি-বিভাগ দুরতিক্রমণীয় হ’ল, বর্ণাশ্রমধর্মের মাহাত্ম্য বেড়ো গেল । ক্রিয়া যত প্রবল হয়, প্রতিক্রিয়াও তত প্রবল হয় । বৰ্ত্তমান কালেও পাশ্চাত্য ক্রিয়ার বিপরীত ক্রিয়া চলছে। আমরা বুঝতে পারছি, পাশ্চাত্য সভ্যতা আমাদের স্মৃতি ডুবিয়ে দিয়ে আমাদের চিত্ত অধিকার করতে বস্তেছে, ইংরেজ রাজা আমাদের যাবতীয় কাৰ্য্যে সৰ্ব্বময় কৰ্ত্তা হওয়াতে আমরা কলের পুতুল হয়ে প’ড়ছি। আমরা পাশ্চাত্য সভ্যতার ভালর দিক দেখতে পারছি না, তা নয়; কিন্তু নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করতে পারছি না। আশঙ্ক, পাছে আমরা হারিয়ে যাই। তাই মহাত্মা গন্ধী বলছেন, তোমার রেল চাই না, কল চাই না। প্রাচীন স্মৃতি-কার এইরূপ দুঃসময়ের নিমিত্ত লিখ্যে গেছেন, “বাপু, আপনাকে হারিও না, অঁাকড়্যে থেকো।” এই উপদেশ না দিলেও ফল তাই হ’ত। হিন্দুত্বের এই সঙ্কট-কালে চিত্তের যাবতীয় বহিমুখী ক্রিয়া স্তৰীভূত হ’ল। পূর্বের , অমুলোম বিবাহ উঠে গেল, মুরা-নামক অনার্ধ্যজাতির কঙ্কা-হেতু মোৰ্য্যবংশের উৎপত্তি অসম্ভব হ’ল। পারসিকের প্রথম যখন এদেশে এসেছিলেন, তখন র্তারা মঘী-নামে হিন্দুজাতি-বিশেষে পরিগণিত হয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন এলেন, তখন ভারতের সেদিন নাই, বোম্বাইর পাসীরা আর মধী ব্রাহ্মণ হ’তে পাবুলেন না। কারণ হিন্দু বিশ্বাস করেন, কাল অনস্ত, পরলোকে মুক্তির পথ অগণ্য । যে যে-পথই ধরুক, সকলের গন্তব্য এক ৷ কে কোন পথে চলবে, সে তার ইচ্ছা । কিন্তু যদি সমাজে থাকৃতে চাও পরের অধীনতা স্বীকার করতেই হবে । সে অধীনতাও আর কিছুতে নয়, আচারে। এই উদার মত হিন্দুকে একদিকে যেমন উৎকৃষ্ট, অগুদিকে তেমন নিকৃষ্ট কর্যেছে। ‘তুমি স্বাধীন, ‘তুমি স্বাধীন, বলতে গিয়ে পরস্পর সংহতি-শক্তি হারিয়েছে। তোমার শক্তি তোমার হাতে, কেউ দিতে পারবে না ; তোমার মুক্তি তোমার ইচ্ছায়, কেউ চালাতে পারবে না। এই যে বিশ্বাস,হিন্দুর এই যে সংস্কার,—ইহাই তার স্বরাজ্য হারাবার মূল । জগতে অনেক আশ্চর্ষ্য ব্যাপার আছে । পরমাশ্চৰ্য্য এই যে, সর্বত্র দ্বন্দ্ব ; ভৌতিক জগতে দ্বন্দ্ব, মানসিক জগতেও দ্বন্দ্ব ; দুই বিমুখী শক্তির ক্রিয় ও প্রতিক্রিয়া । একটু চিস্তা করলে, ইহার ভূরি ভুরি উদাহরণ পাওয়া যাবে। যে হিন্দু সর্বজীবে সমদৰ্শী, যার কাছে ভয় বল্যে কিছু থাকৃতে পারে না, সে হিন্দুই জাতিবিচারে অগ্রগামী, সকল কাজে ভয়ে আকুল ! শৌণ্ডিকনন্দন—তার কোন পুরুষে স্বরা-ব্যবসায় ছিল, তার ঠিকানা নাই—শিবমন্দিরে প্রবেশ করবে, এই দুশ্চিন্তায় ব্রাহ্মণ কাতর ; কিন্তু স্বরাপান যে-ব্রাহ্মণের মহাপাতক, সেই মহাপাতকীর প্রবেশে কোনও চিন্তা হয় না ! ইহা উপহাসের কথা নয়। দু-দশ জনের কপটতা থাকতে পারে, কিন্তু, হীন জাতির স্পর্শে ব্রাহ্মণের আততা সত্য । যেটা সত্য, তোমার কাছে না হক, তার কাছে