পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেটা সত্য, সেটাকে ছুৎমার্গ’ বল্যে ধিক্কার দেওয়া, আর ভূতগ্রস্তকে ভীর, বলে উপহাস কর, একই, একই প্রকার নিষ্ঠুরতা । বেত্রাঘাতে ভূত ভাগানা যায় বটে, কিন্তু, ভূতগ্রস্তের মানসিক বৈকল্যের পরিণাম শুভ হয় না। যার কণামাত্র কারণ্য আছে, সে এই দুঃসাহসে যাবে না। বিদ্যালয়ের বালক যখন পড়া শিখতে না পারে, তখন যদি গরমশায় বালককে ‘নিবোধ গাধা বল্যে বেত্ৰাঘাত করেন, তিনি বালকের নিকট পরাজয় মুকার করেন। আর যেটা স্বীকার করেন না, সেটা না বলাই ভাল। সমাজসংস্কারক ব’লছেন, কু-সংস্কার । কু-সংস্কারই ত। সে কথা কেহ অস্বীকার করে না। কিন্তু, একথাও স্বীকার করতে হবে, কু-সংস্কার কেবল ভয়াত ব্ৰাহ্মণের একার অধিকার নয়। সকলেরই আছে, কারও এ বিষয়ে, কারও সে বিষয়ে। শনি বৃহস্পতির বারবেলায় যে কমনিষ্ফল হয়, কিংবা মঘানক্ষত্রে যাত্রা করলে যে বিপদ ঘটে ইহার কোনও যুক্তি আছে কি ? কিন্তু, যে কারণেই হক, যারা মানতে শিখেছে, তারা কি সহজে মানে,মেন্যে স্থখ পায় ? কত লোক জানে ভূত নাই, তবু তারা ভূতের ভয় করে । কত হিন্দু ছাগ ও মেষ ও মহিষ বলি দিচছে ; কিন্তু গোর, বলির নাম শুনলেই ক্ষেপে ওঠে। গো-বধে পাপ লেখা আছে স্মরণ করতে হয় না। পাপও গরতর নয়, তার প্রায়শ্চিত্তও আছে। তেমনই মুসলমান যখন বরাহ-মাংস দেখলে পাগল-পার হয়, কোরানের নিষেধ তার সম্পূর্ণ কারণ নয়। এই নিষেধ যদি বলবান হ’ত, তা হ’লে কোনও মুসলমান কখনও স্বরাস্পর্শ ক’বৃতে পাবৃত না । সবৰ্ণ অবর্ণের অল্প, ব্রাহ্মণ শূদ্রের অন্ন, শূদ্র হীন জাতির অন্ন ভোজন করতে পারে না। কেন পারে না 7 ভয়ে। কি ভয় । ভয় এই,ভোজন করলে সবর্ণ অবর্ণেব্ৰাহ্মণ শূত্রে,পূত্র হীনজাতিতে প-রি-ণ-ত হয়। নিজের জাতি নষ্ট হয়, অন্নদাতার জাতিপ্রাপ্ত হয়। যিনি সবর্ণ বা ব্রাহ্মণ ছিলেন.তিনি অবর্ণ বা শূত্র, যে শূত্র ছিল, সে হীন হয়ে পড়ে। ইহার তুল্য দুর্ভাগ্য বাস্তবিক আর কি আছে ? ইহার দৃষ্টান্ত গোবধ ক'লে দেখতে পাওয়া যায়। জেন্যে শ ন্যে মাৱলে ত কথাই নাই ; অপালন হেতু কারও গোর ম’রলে, (झे ७ वफु ১২৭ সে গোর, হয়ে যায় ; গলায় দোড়ী, দাতে তৃণ নিয়ে, বাক্ রোধ কর্যে গোর ডাক ডাকৃতে থাকে। অথচ শাস্ত্রে এই দারণ দুর্দশা লিখিত নাই, পাপের প্রায়শ্চিত্ত তত কঠোরও নয়। এই বিশ্বাসের নিশ্চয়ই মূল আছে। তেমনই, শূত্রের অল্পগ্রহণে ব্রাহ্মণের যে শূদ্রত্ন-প্রাপ্তি ঘটে, এই বিশ্বাসেরও মূল আছে। এই মূল বহ, বহ, প্রাচীন। এত প্রাচীন যে, ঋগবেদও তত প্রাচীন নয়। সে-কালের ঘটনা অতীতের সাগরতলে ডুব্যে গেছে, কিন্তু, জলের রঞ্জন অদৃপ্ত হয় নাই। জীব-জাতি মাত্রেই জাতিস্মর, নইলে পক্ষী পক্ষী থাকৃত না, পশু, পশু, থাকৃত না, মানুষ মানুষ থাকৃত না, আম ও জাম আম ও জাম থাকৃত না । জাতিস্মর বটে, কিন্তু সে স্মৃতি কারও জানা নাই। যখন আর্য্য ও অনার্য্য, দুই রঃ সমুখে সমুখে হয়েছিল, তখন উভয়েই জানত, উভয়ে এক রয় নয়, এক জাতি নয়, একে অন্তের বি-রয়, বি-জাতি । এই ‘বি’ উপসর্গ সংসারে যে কত কাও ক’বৃছে, তা লিখতে হ’লে সাতকাণ্ড রামায়ণেও কুলাবে না। অথচ বৈষম্যেই হুষ্টি ও স্থিতি। আর্ষ্যের নাম ব্রাহ্মণ হ’ক সবর্ণ হ’ক, আর অনার্যের নাম শূদ্ৰ হ’ক অবর্ণ হ’ক, সেই প্রাচীন কালের ‘বি’ অবিশ্বাসের খনি, সেটা আজাড় হয় নাই। সেই যে কালকে ‘কু’ মনে করা মানব-স্বষ্টির আদ্যকাল হ’তে গোরার মনে জাগছে,যাকে আশ্রয় কর্যে ভূত-প্রেতের লক্ষঝঙ্ক, তেল-চকচক্যে কাল-কুচকুচ্যে ডাইনীর কুদৃষ্টি, সেই কাল জুট্যে’বি’কে ভুলতে দিচছে না। বর্ণ আর কিছু না হ’ক, কাল রং নয়। গিল্পী বউএর ‘রং চান ; সে রং কাল নয় শুাম নয়, উজ্জল শু্যাম নয়, ফর্সাও নয় ; সে রং গোরা ! সম্বাদ-পত্রে বিবাহের বিজ্ঞাপনে, পাত্রী সুন্দরী হওয়া চাই, নাক মুখ চোখ যেমনই হ’ক, কাল চলবে না। আশ্চৰ্য্য এই, যে-পাত্র গোরা নয়, যে-পাত্র শূত্র, সেও গোরা কন্যা চাচছে। অথচ লেখাপড়া-জানা পাত্র মহাভারতে পড়েছে, কাল স্রৌপদীকে লাভ ক’বৃতে গিয়ে সেকালের রাজন্যবর্গ অস্ত্রী-অন্ত্রি করেছিলেন । ইহাতে বোধ হচছে, শ্বেত ও কৃষ্ণের বিরোধ লোকে ভুলতে চাচছে। কতকাল গেছে, বর্ণে বর্ণে কত মেলামেশাঘটেছে, অদ্যাপি ব্ৰাহ্মণ গোরা, শূদ্র কাল ব’লতে পারা যায়।