পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] দৃষ্টান্ত পাচ ছি। দেখছি,যারা ইংরেজী-শিক্ষিত ও কুসংস্কারবর্জিত, জাতিবিচার মানেন না, কার ছোয়া জল কে গাচছে, কোনও চিন্তা নাই ; তাদের এ ভাব শহরে, পোষাকী ভাব। কিন্ত গ্রামে যেমনই পদার্পণ, অমনই সেই বাল্যকালের সেই রাস্তার ধারের বটগাছ ভূতের বাসা হয়ে দাড়ায়। শহরে সে গাছ নাই, যদি বা থাকে সে রাস্তা নাই। গায়ে গেলেই সেই গাছ ডালপালা মেল্যে ঝাপুড়া হ’য়ে দাড়ায় । তলা দিয়ে যায় কার সাধ্য, গ ছমূ-ছম্ ক’বৃতে থাকে। সাহসী বলছেন, “এই দেখ না, আমি যাচছি, ভূত-টুত কিছু নাই।” যে দাড়িয়ে আছে সে ভাবছে, “তোমাকে ধ’রলে না বল্যে কি আমাকেও ধ’বৃবে না ? ভূত যে আছে, তার সন্দেহ নাই। ন৷ থাকলে আমার ভয় হবে কেন ?” গায়ের ভূত শহরে যায় না, বিদেশে সঙ্গ নেয় না, রীত দুপরে শ্মশান মাড়িয়ে গেলেও কিছু বলে না। মুসলমান ও খ্ৰীষ্টান সে বটগাছ নয়, কু করবার যে শক্তি আছে, তা’রও প্রমাণ পাওয়া ধায় নাই । তারা হিন্দু নয়, কোনও দিন মন্দিরে ঢুকো ঠাকুর পূজা ক’বৃতেও ব’সবে না। মনের ভিতর ছোয়া-ছুয়ির ভয় না থাকলেও সামাজিক শাসনের ভয় থাকে । সমাজ পতিত’কে এক-সঙ্গে খেতে দেয় না, এক-ঘর্যে কর্যে রাখে । কারণ, তাকে চালিয়ে নিলে অপরেরও পতিত হবার ভয় থাকবে না, ফলে শেষে অনেকেই পতিত হ’য়ে সমাজ ভেঙ্গ্যে দিবে। শাস্ত্রে নাকি সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ আছে। কিন্তু, কোন দিকে কতখানি গেলে সমুদ্রযাত্রা হয়, বোপ হয় তা লেখা নাই । এই কারণে বঙ্গ ও আরব-সাগর পাড়ি দিলে, এমন-কি চীনসমূদ্র বেড়িয়ে এলে বাধা হ’চছে না । কিন্ত ইংলণ্ডে গেলেই যে হয়, তার কারণ ইংরেজ দেখছি ! হিন্দুসমাজ এক বিশাল বটবৃক্ষ । কত ক্লান্ত পথিক এর তলায় এসে আশ্রয় ও শান্তি পাচছে, মুখ-দেখা-দেখি হ’চছে, কথা কহা-কহি চলছে, কিন্তু রান্নার চৌকা’ আলাদা আলাদা । বাঙ্গালী, ব্রাহ্মণ হ’লে কি হয়, মিছলী খাতা" ; ঢেলার বেড়াতে কু আটকাতে পারা যাবে না, দূরে গিয়া চৌকা কর! পূর্ববঙ্গে মুসলমানেরদোহা গাই দ্বধ অবিচারে ব্রাহ্মণের ভোজনে লাগছে, কেন S on ছোট ও বড় >ఇS না গব্যরসে জল নাই, জল মিশিয়ে বেচা হয় না। উড়িষ্যায় কেঅট’ নামক এক ধীবর জাতি স্পর্শ করলে ব্রাহ্মণের মনস্তাপের অবধি থাকে না, কিন্তু তার কোটা চিঁড়া ব্রাহ্মণের ও দেবতার ভোগে চলছে। চিড়া অগ্নিপঙ্ক নয়, ঘৃত-পক ও নয়, পয়ঃ-পক । এইরূপ যে কত আচার ভারতের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে চলছে, সে-সব একত্র করলে মানব-চরিত্রের নিভৃত কন্দর অসঙ্গতিপূর্ণ দেখা যাবে। কালে দেশাচারও স্থতির তুল্য বলবান হ’য়ে ওঠে। এমন জাতি নাই যে দেশাচারের দাস নয়। এক উচ্চ-শিক্ষিত ও উচ্চ-পদস্থ ইংরেজ একবার আমায় জিজ্ঞাঙ্গেছিলেন, তিনি মাছমাংস ভোজন ছেড়েছেন, হিন্দু হ’তে পারেন না কি ? আমি বলেছিলাম, এ জন্মে নয়, চৌদ্দ জন্মে ও হ’তে পারবেন না। তিনি বুঝতে পারলেন না, অবাক হ’য়ে আরও শুনতে চাইলেন। “আপনি কাটা চামচ ছেড়েছেন ?” “কি, আঙ্গুল দিয়ে খেতে ব’লছেন? আঙ্গুল দিয়ে কিছুতেই পেতে পারব না।” আঙ্গুল শব্দ উচ্চারণ করা, আর তার সৰ্ব্বাঙ্গ আতঙ্কে কেঁপ্যে ওঠা ? “আমাদের মতন ধুতি পরতে পাবেন ?” “আমি উলঙ্গ থাকৃতে পারব না।” বলা বাহ ল্য যুক্তিতে সাহেব হারেন নাই, আমিও হারি নি । সমাজ-সংস্কারক অধীর হয়ে বলছেন, “বট-গাছটার ডাল-পাল কেটে দাও, ভূতের বাসা ভেঙ্গ্যে যাবে।” সমাজ ব’লছেন, “ডালে ডালে এমন জড়িয়ে গেছে, বেছ্যে বেছে কাটুবার জো নাই ।” ধর্মসংস্কারক ব’লছেন, “গাছটাই আপদ, গাছটাই কেটে ফেল, ভূতের বাস৷ ঘুচে যাক।” ধৰ্ম্ম বলছেন, “তা হ’লে আমি কোথায় থাকুব ?” শিক্ষক ব’লছেন, “কেউ কার্টুতে পারবে না, কারও সাহস হবে না । বিলাতে তৈয়ারী এই তীক্ষু স্বচী দিয়ে মূল বিদ্ধ কর, গাছটা আপনি শ থিয়ে ম'বৃবে, কাকেও কিছুক’রতে হবে না।” কিন্তু ছাত্র বলছেন, “আর সে শিক্ষা দিবেন না, আমি অম্নিই শখিয়ে ম’বৃছি।” রাষ্ট্রনীতিক বলছেন, “ভাই হে, ভাই ভাই ঠাই ঠাই কর্যে তোমর অধঃপাতে গেছ, এখন ক্ষমা দেও, ভাইয়ে ভাইয়ে কোলাকুলি কর।” ভাইরা কাতর হ’য়ে বলছে, “কোলাকুলি ক’বৃতে পারছি না যে ।”