পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ না। যার চোখ আছে, তিনি দেখছেন, পূর্বকালের জন্মগত জাতিভেদ ভেঙ্গে যাচছে, নূতন বর্ণ গড়ে উঠছে। গণে, যার মধ্যে আচার প্রধান, নূতন বর্ণের প্রতিষ্ঠা হ’চছে। যখন কমে সে গণ প্রকাশিত হচছে, তখন পূর্বের সন্দেহ মনে আর উঠছে না। বিপুল হিন্দুসমাজের অধিপতি দুর্বল হওয়াতে সমাজও দুর্বল হ’য়ে পড়েছে, পুরাতন জুজু বিকট আকারে বিভীষিকা দেখাচ ছে | ব্রাহ্মণ সবল হ’লে, সমস্ত সমাজ সবল হ’য়ে উঠবে, সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, ধর্মের মানি দূর হবে। ধমের গ্লানি হেতু হিন্দুর অধঃপতন; যিনি সে প্লানি দূর করতে পারবেন, তিনিই ব্রাহ্মণ হবেন, আচাৰ্য্য হবেন । আচাৰ্য্য থাকুলে কি তারকেশ্বরের মহাস্ত অত্যাচারী হতে পাৰ্বত ? তিনি মহাস্তকে একঘর্যে কর্যে রেখ্যে হিন্দুর স্থণার পাত্র কর্যে অক্লেশে তাকে দেশ-ছাড়া ক’বৃতে পারতেন। ইহার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে বুঝাতে হবে,কর্মনীচ নয় উচ্চ নয়, কর্মকর্ম সে কর্ম জুতা সেলাই হ'ক আর চণ্ডীপাঠ হ’ক। কত ও কমের ভেদ ভুল্যে গিয়ে কতার হীনতা কমে আরোপিত হয়েছে। অধিকারী-ভেদ হিন্দুধর্মের মজ্জাগত। অথচ সে ভেদ অস্বীকৃত হ’চছে, ধর্ম রক্ষিত হ’চছে না। মহাত্মা গন্ধী হ’তে ছোট বড় সব রাষ্ট্রচিন্তক একবাক্যে বলছেন, অস্পৃশ্যতার ভূত তাড়িয়ে দাও । কিন্তু তাড়াবার উপায় কি, তার আলোচনা দেখতে পাই না। হীন জাতি ভূত নয়, মহিষ,—একথা শুনতে শুনতে কারও কারও বিশ্বাস ও সাহস জন্মিবে বটে, কিন্তু তাতে বহুকাল লাগবে । মহাত্মা কোল দিলে যে দেশস্কন্ধ কোল দিতে পারবে, তাও নয়। মহাত্মা পারেন, কারণ মহাত্মা মহাত্মা । তার অনুচর দশজন কি সহস্ৰ জন গ্রামে গিয়ে ইনজাতির প্রদত্ত জল ও সন্দেশ গ্রহণ প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ { ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড করতে পারেন ? কিন্তু বিপুল হিন্দুসমাজ চেয়ে দেখবে, গ্রামে ঠাদিকে পতিত কর্যে রাখবে। কিন্তু যে-দিন গ্রামের ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় জল-সন্দেশ গ্রহণ করবেন, সেই দিন অস্পৃশ্যতা দূর হবে, তার পূর্বে নয়। থাকৃতেন নদীয়ার গোরা ; তার কাছে শুদ্ধিবারি ছিল । তথাপি তার কর্মস্থানেই লক্ষ লক্ষ নর-নারী সে-বারি স্পর্শ করে নাই । - কংগ্রেসের কাছে কি মন্ত্র আছে, যাতে মনে করেন এই দুষ্কর কম ক’বৃতে পারবেন ? এত কাল হ’ল হিন্দু স্বরাজ্য হারিয়েছে, যে তার স্মৃতিও লুপ্ত হ’য়ে গেছে । সে হিন্দু ক’জন, যে স্বরাজ্যকে স্বৰ্গরাজ্য মনে করতে পারে ? আর, কেবল স্বরাজ্য স্বরাজ্য শোনালে অবুঝ ভাববে, পরের প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে না, নিজের প্রাপ্য চতুর্গ ণ হবে। কারণ লোকে চায় এই । যখন দেখবে, সে-সব নয় তখন কারও বাধা মানবে না। মহাত্মা বলছেন, সত্যাগ্রহ ও অহিংসা-ধম শেখাও । কিন্তু, কত তপস্তায় স্বাভাবিক কাম-ক্রোধ-লোভ দমন হতে পারে ? তার কাছে সত্য ত্যাগ ও সহিষ্ণুতা সহজ, কিন্তু, প্রকৃতিপুঞ্জ ইহার একটারও ধার দিয়ে যায় না। চরকাকে যোগ-সাধনের আসন-বিশেষে পরিণত ক’বৃলেও ক’ জনে তা ঘুরাবে ? চকু-পরিবর্তনের প্রবতক কই ? তাই মনে হয়, কুলকুণ্ডলিনী শক্তি, যেটা সকলেরই আছে, কিন্তু উপলব্ধি নাই, সেটা না জাগালে মনশ্চক জাগবে না। এই কর্ম কংগ্রেসের নয়, শক্তি-সাধকের। শক্তিমানে অহিংসা-ধম পালন করতে পারে, সত্যাগ্ৰহ ক’বৃতে পারে। কেবল মনের শক্তি নয়, দেহেও শক্তি চাই। দেহে শক্তি না থাকৃলে ক্লৈব্য হয় অহিংসা, মনে না থাকৃলে সত্যাগ্রহ হয় হত্য দেওয়া। প্রথমে হিন্দুতে-হিন্দুতে সহযোগ, তার পর অন্ত কথা । শিশু শ্ৰী যোগেশচন্দ্র দেওয়ানজী শিশুগণে দেখি মনে এই মোর হয়, তা’রা যেন ওপারের জানে পরিচয় । যে-দেশে আপন-পর ভেদাভেদ নাই, সে-দেশ হইতে তা’র এসেছে সবাই ।