পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জামাতা বাবাজীউ শ্ৰী শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় এক দু’দিকের বড়-বড় বাড়ীর চাপে নিশ্বাস বন্ধ হইয়া বেচার গলিটার যেন মারা পড়িবার জো হইয়াছে । অত্যাচারও কম হয় না –পাশের বাড়ীর যতপ্রকার আবর্জনা, এঠো পাত, বাসি ভাত, উকুনের ছাই, পচা ইদুর, ছেড়া স্বাকড়া, সবই এই গলির উপর আসিয়া পড়ে । এই দুৰ্গন্ধপূর্ণ পল ললিটার সঙ্গে বেশ মানানসই হইয়া তাহারই এক দিকের এক কোণে বহুকালের পুরাতন একটা বাড়ী। বাড়ীট যে কবে তৈরী হইয়াছে, হিসাব করিয়া ঠিক বলা যায় না। তবে, পাশ্ববৰ্ত্তী অন্যান্য বাড়ীগুলার বুদ্ধএপিতামহ বলিয়াই মনে হয় । গলির দিকে কাঠের রেলিং দেওয়া আধহাত-চওড়া বারান্দা, তাও আৰার অৰ্দ্ধেকথান। বুলিয়া পড়িয়াছে—সদর দরজায় না আছে কপাট, না আছে চৌকাঠ—ইট-বাহির-করা তাওলা-পড়া দেওয়ালগুলা অনেক বর্ষার অনেক বৃষ্টির জলে নোনা ধরিয়া এইবার পড়ি-পড়ি করিতেছে। বুড়া অথৰ্ব্ব গরু যেমন করিয়া গাড়ী টানে,এবাড়ীটাও তেমনি করিয়া এখনও পর্য্যস্ত ভাড়৷ টুনিতেছিল। বাড়ীর যিনি মালিক, তিনি জানিতেন, দেওয়াল ভাঙিয়া লোকই মরুক, আর ছাত ফাটিয়া জলই পভুক বাড়ীট মেরামত করিয়া অনর্থক টাকা খরচ করিবার কোন প্রয়োজন নাই । ভাড়া চলিবেই। কারণ, বে কয়েকজন আপিসের কেরাণী সেখানে মেস করিয়াছে, ভাড়া বাড়িবার ভয়ে, মেরামতের তাগিদ তাহদের নিকট হইতে আসিবে না। নূতন ভাল বাড়ী খোজ করিয়া উঠিয়া যাইবার উদ্যম এবং অবসর তাহীদের নাই, স্বতরাং ঘাড়ে ধরিয়া তাড়াইয়া দিলেও যে তাহারা কেহ যাইতে চাহিবে না, ইহা স্বনিশ্চিত । আগাছার জঙ্গলে ভৰ্ত্তি নোংরা উঠানের মাঝে একটা জলের কল । কলের নীচে ইট দিয়া যে অপরিমিত স্থানটুকু বাধাইয়া দেওয়া হইয়াছিল তাহাও আবার মাদ্ধাতার আiমল হইতে জল পড়িয়া-পড়িয়া গর্তের মত হইয়া গিয়াছে । ভাঙা শু্যাওলা-ধর সবুজরঙের চৌবাচ্চাটার ফাটল বাহিয়া একটা ছোট অশ্বখ গাছ দিনে-দিনে বাড়িয়া উঠিতেছে। পাশেই নৰ্দ্দম,—যেমন নোংরা, তেমনি দুৰ্গন্ধ। অনতিদুরে রান্নাঘর এবং তৎসংলগ্ন খাবার জায়গা। রান্নাঘরের অপৰ্য্যাপ্ত ঝুল ও কালীর মধ্যে অন্ততঃপক্ষে হাজার-দুইতিন অrরসলা সপরিবারে বাস করে । সেই ঘরের মধ্যে দিনের বেলা কেরোসনের ডিবে জালাইয়া একজন সংশ্রেণীর উৎকল ব্রাহ্মণ রান্না করিতেছিলেন । সেদিন রবিবার। কেহ কলতলার আশেপাশে আবার কেহ বা রান্নাঘরের দোরে কয়েকটা ইটের উপর বসিয়া, কলে জল থাকিতে-থাকিতে ময়লা কাপড় জামায় প্রাণপণে সাবান ঘষিয়া লইতেছিল। দু’চার জন স্বান সারিয়া আহারের তাগিদে নীচে নামিয়া আসিল । ভাঙা সিড়ির উপর ভবতোষ চাটুজ্যের পায়ের পডমের শব হইল। ভদ্রলোকের একটুখানি রিচয়ের আবশ্যক। তাহাকে ঠিক প্রৌঢ়ও বলা চলে না, আবার ঠিক লোলচৰ্ম্ম বুদ্ধও তিনি নন। নিতান্ত কদাকার চেহারা, চুলগুলা এখনও সব পাকে নাই, কিন্তু দাতগুল পড়িয় গেছে। এই কলিকাতার কোন-একটা সওদাগরী আপিসে মোটামাহিনার চাকুরি করেন,—কিছু-কিছু উপরি পাও নাও আছে । সে-আজ প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পূৰ্ব্বে সৰ্ব্বপ্রথমে তিনিই এই পোড়ো বাড়ীটা আবিষ্কার করিয়া সস্তাদরে একটা হোটেল খুলিয়া বসেন। এখন তাহার শক্তিসামর্থ্যের অভাবেই হোক কিংবা অন্ত-কোনও কারণেই হোক সম্প্রতি সেটা মেস হুইয়াছে। কিন্তু র্তাহাকে কেহ এথান হইতে নড়াইতে পারে নাই। জীবনে তিনি রোজগার করিয়াছেন যথেষ্ট, কিন্তু আল্পের পাশেই ব্যয়ের যে স্ববৃহৎ ছিদ্রটি তিনি নিজের হাতে প্রস্তুত করিয়াছিলেন, সেই সৰ্ব্বনাশা ফুটা দিয়া তাহার বুকের রক্তে জমানে।