পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ☾Ꮼ ছোকৃর কাপড়ে সাবান দিতেছিল । তাহারা দুজনে পাশাপাশি একঘরেই থাকে। রতনমণি তাহাকে ঠেলিয়া দিয়া বলিল, “বুড়োর ফোকুলা দাতের হাসি শুনেছিস । যাবার বেলা ত’ আমায় খুব একচোটু নিয়ে গেলেন,— এদিকে রসিকতা দেখ বুড়োর । কেন, এই ত আজকালকার ফ্যাশান,—না, কি বল খগেন ? খগেন তাহার হাতের সাবানটা কাপড়ের উপর ঘষিতে ‘ ঘষিতে বলিল, বুড়োর বুড়োর মতই থাকু না রে বাবা, আমাদের সঙ্গে কি বটে তোদের ! রতনমণি বলিল, চল না খগেন, ওরা ত পাশাখেলায় মাতবে, আমাদেরও একবাজি তাস নিয়ে বসা যাক । খগেন ঘাড় নাড়িয়া বলিল, উ হু, বাই নো মিন্স । বোএর চিঠি এসে পড়ে’ আছে আজ সাত দিন,— ‘রিপ্লাই’ না দিলে আর চলছে না । রতনমণি একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া জামাটা কাচিতে কাচিতে গুন-গুন করিয়া কি একটা থিয়াটারী-গানের স্বর ভাজিতে কুরু করিয়া দিল । আহারাদির পর উপরের একটা ভাঙা ঘরে চূণ স্বরকির চট-ছাড়ানো ধুলায়-ভৰ্ত্তি মেঝের উপর একটা মাছর বিছাইয়া ভবতোষদের পাশাখেলা আরম্ভ হইল এবং দেখিতে-দেখিতে মিনিটু-কয়েকের মধ্যেই খেলায় তাঙ্গাব এমনি মাতিয়া উঠিলেন যে, ক্ষণে-ক্ষণে র্তাহীদের হুঙ্কারের চোটে সেই ভাঙু বাড়ীটার কড়িকাঠ ইষ্টছে ভিত্তি পর্যন্ত এক-এক বার থর্-থর করিয়া কঁপিয়া উঠিতে লাগিল । কিন্তু আশ্চর্য্যের বিযয় এই যে, খেলোয়াড়দের এত চীৎকার সত্ত্বেও, কয়েকজন ছোকুরা তাহাদেরই আশে-পাশে, কেহ বা শতছিন্ন মলিন বিছানার উপর আবার বিছানা ময়লা হইবার ভয়ে কেহ বা মাছুরের উপর পুরানো খবরের কাগজ বিছাইয়া তাহদের সেই শ্রমজীর্ণ পঞ্জরাস্থি-সম্বল দেহ গুলি লুটাইবামাত্র গভীর নিদ্রায় মগ্ন হইয়া পড়িল । একে অফিসের হাড়ভাঙা থাটুনি, তাহাতে আবার অনেকের সংসার চলে না, কাজেই সকাল-সন্ধ্য। দুষ্টবেলা ‘প্রাইভেটু টুষ্টশন আছে,.এমুনি করিয়া প্রত্যহ ভোর সাড়ে ছয়টায় উঠিয়া রাত্রি দশটা পর্ধ্যস্ত, শাকচচ্চড়ি ভাত খাইয়ু যাহাঁদের কাজ করিতে প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ { ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড হয়, সপ্তাহের মধ্যে একটা দিন তাহারা যে বাহিরের সমস্ত শব্দ-কোলাহল উপেক্ষা করিয়া এম্নি করিয়াই ঘুমাইয়া পড়িবে, তাহাতে আশ্চর্য্যের কিছুই নাই । খগেনের নূতন বিবাহ হুইয়াছিল। বেীকে একুশপৃষ্ঠাব্যাপী একটি স্ববৃহৎ শোকোচ্ছসিত ব্ৰজকাব্য লিখিয়া সে যখন চিঠিখনি ডাকে দিয়া ফিরিয়া আসিল, বেলা তখন প্রায় পাচটা বাজিয়া গেছে । অন্ধকার সি ডির একপাশে পেরেক আঁটা পুরাতন একটি বিস্কুটের টিন বহুকাল হইতে এই বাড়ীর ‘লেটারবক্সের কাজ করিতেছে । খগেন যন্ত্রবার উপর-নীচে উঠা-নমা করিত, কিছু থাকুক আর না থাকুক, এই চিঠির বাক্সট একবার নাড়িয়। দেখা তাহার অভ্যাস হইয়া গয়াছিল । উপরে উঠবার সময় টিনটা হাতড়াইতে গিয়া দেখিল, পিয়ন কোন সময় একটা পোষ্টা-কার্ডের চিঠি দিয়া গিয়াছে । কাহার চিঠি, অন্ধকারে নামটা ভাল পড়া গেল না, খগেন চিঠিখন হাতে লইয়া উপরের আলোতে আসিয়৷ দেখিল, রতনমণির নাম লেখা। চিঠির মালিককে খুজিতে বিশেষ দেরি হইল না। অনতিদূরে সে তপন ময়লা জলের ট্যাঙ্কের উপর বসিয়া পাশের বাড়ীর দিকে চাঙ্গিয়া মিহিমুরে গান ধরিয়াছে, এবং গানের মাত্র ও তালের সঙ্গে-সঙ্গে জল-ভৰ্ত্তি সেই টবটার উপরেই বায়া-তবলার কাজ চলিতেছে । খগেন পোষ্ট কার্ড থান। তাঙ্গর দিকে উচু করিয়া তুলিয়া ধরিয়া বলিল, রতন, এই দাখ, তোর চিঠি । রতলমণি ভাবিল, তাহার কাজে বাধা দিয়া এখান হইতে তাহাকে নামাইবার জন্যই খগেন এ দুষ্টমি করিতেছে । গম্ভীর ভাবে বলিল, কে দিয়েছে বল ত দেখি ? খগেন পড়িয়া বলিল, শ্ৰী নিকুঞ্জবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছে । আর অধিক বfলবার প্রয়োজন হইল না। রতনমণি একেবারে ডিগবাজি খাইয়া মরি-পড়ি করিয়া নীচু ছাতটা হইতে ঝুপ করিয়া ঝাপাইয়া পড়িল । তাড়াতাড়ি ছুটিয়া আসিয়া খগেনের হাত হইতে চিঠিখানা কড়িয়া লইয়া বলিল, আমার 'ফাদার-ইন-ল’ লিখছে।