পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] তাহা হইলেই ত সে গিয়াছে। --দেখিতে-দেখিতে সন্ধ্যা ধনাইয়া আসিল,—রতনও চোখে অন্ধকার দেখিতে লাগিল, রাগে দুঃখে এইবার তাহার কাদিতে ইচ্ছা করিতেছিল। হুমুড়ি খাইয়া পড়িয়া মরিবার ভয়ে গলিব দিকের যে ঝোল বারান্দাটার উপর অতি বড় দুঃসাহসীও কোনদিন পা দিতে সাহস করিত না, আজ দিগ্বিদিকৃজ্ঞানশূন্য হইয়া রতনমণি বারে-বারে তাহারই উপর ছুটিয়া গিয়| গলির মোড় পৰ্য্যন্ত একএকবার দেখিয়া আসিতে লাগিল । ভবতোষ ইাটিয়াই আসিলেন । রাত্রি তখন সাতটা বাজিয়াছে। বলিলেন, হ্যারে চারটি খেয়ে গেলে হ’ত না রতন ? আজি সারারাত, আবার কাল সারাট। দিন । কিন্তু ঠাকুর ত এখনও আসেনি দেখছি— কিন্তু পেটের ক্ষুধার চেয়ে আর-একটা প্রবল ক্ষুধার তাড়নায় রতনমণির তখন দিগ্বিদিকৃজ্ঞান ছিল না, বলিল, তা হ’লে কি আর ট্রেণ ধরতে পারব, বাবা ? তার চেয়ে ষ্টেশনেই যা হোক কিছু— - ভবতোষ ঈষৎ চিস্তা করিয়া কহিলেন, বেজেছে ত সাতটা, দেখে’ এলাম ওই দোকানের ঘড়িতে। উনেfন ধরে গেছে, ঠাকুরও এল বলে’ । রতনমণি তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, কোথায় দেখে’ এলে সাতট বেজেছে ? ওই বিড়িওয়ালার দোকানে ? ও বেটা কি ঘড়িতে দম্-টম্ দেয় কখনও ? ওটা ঘড়ি নয়, ঘোড়া ! এখন আটট। ত বেজেইছে—বরং বেশী ত কম ময় । মেসে কাহারও ঘড়ির বালাই ছিল না। সকাল হইতে আপিস যাইবার সময়টুকুপৰ্য্যস্ত মেসের বাবুরা আন্দাজি ঠিক কয়ট বাজিয়া কয় মিনিট হইল বলিয়। দিতে পারে, কিন্তু আপিস ছুটির পর তাহাদের সে অলৌকিক শক্তিটুকু আর থাকে না ; সুতরাং এখন আর সময় লইয়া বাদাতুবাদ করা নিম্প্রয়োজন ভাবিয়া ভবতোষ, পুত্রের শুধু যাইবার ট্রেণ ভাড়া পাচ টাকা বারো অান এবং রাহা-খরচ-বাবদ সৰ্ব্বসমেত আটটি টাকা দিয়া বেশ করিয়া বুঝাইয়া বলিলেন, পকেটে টাকাকড়ি রাখিসনে বাপু, জনিস ত, সে-বারে সেই জামাতা বাবাজীউ X(సి বাড়ী থেকে আসবার সময়, এই বড় ইষ্টিশনেই পকেট থেকে সাড়ে তিনটা টাকা গোলমালে ফস করে কে তুলে’ নিলে টেরই পেলাম আমাৰ কোন না । আর ইঁ, ভালো কথা মনে পড়ল, শোন্‌--বলিয়া বতনকে তিনি একটুখানি আড়ালে ডাকিয় লইয়া গিয়া কহিলেন, লিখেছে ঘূখন, চেন-ঘড়িটা ত দেবেই, আর সেই পণের দরুন গোট ষাটেক টাকা এখনও পাওনা রয়েছে, তোব যাওয়া-আসা ইন্টার ক্লাসের ভাড়াটাও আদায় করে নিস্—মোটের মাথায়, শ' খানেকের কম যেন ফিরিসনে বাপু,--বুকলি ? সে-সব বুঝিবার মত মনের অবস্থা রতনমণির তথন ছিল না। কোন রকমে ঘাড় নাড়িয়া সেখান হইতে বাহির হইয়া ছুটিতে-ছুটিতে ট্রামে গিয়া চড়িল এবং আর ঘণ্ট-খানেকের মধ্যেই হাওড়া ষ্টেশনে উপস্থিত श्ल । ইহাকে-উহাকে জিজ্ঞাসা করিয়া টিকিট কিনিয়া ছুটাছুটি ধস্তাধস্তি করিয়া অতিরিক্ত-রকমে নাকাল হইয়া সে যখন ট্রেণের থার্ড ক্লাসের একটা বেঞ্চির উপর চাপিয়; বসিল, তখন তাহার মনে হইল, এইবার ঘেখানে হোক চলিল বটে। বাণ্ডিল-দুই বিড়ি পথের জন্য এবং সস্তাদরের এক বাক্স হাওয়াগাড়ী-মাক। সিগাবেট শ্বশুর-বাড়ীর জন্য সে কলিকাতা হইতেই কিনিয়া আনিয়াছিল। পয়সা দুই-এর পাণ কিনিতে গিয়া তাহার যে আহারাদি কিছুই হয় নাই সে-কথাটা হঠাৎ মনে পড়িয় গেল। কিন্তু এসময় মনে হইলেই ব৷ কি হইবে ? সে যখন ষ্টেশনে আসিয়া পৌছে, গাড়ী আলিয়া প্ল্যাটফরণে লাগিতে তখনও ঘণ্ট দেড়েক দেরি ছিল । এই সময়ের মধ্যে অনায়াসে সে কিছু লুচি মিষ্টি খাইয় লইতে পারিত, কিন্তু ওই হিন্দুস্থানী মেয়েটাই তাহার সব মাটি করিয়া দিল । অমর্থক তাহার মুখের পানে তাকাইয়া এমন করিয়া ওই ওয়েটিংক্রমের পাশে বসিয়া থাকা তাইrর ভালো হয় নাই । সে যে কোথায় গিয়া কোন গাড়ীতে চড়িয়া বসিল, ভিড়ের মাঝে ছাই দেখাও গেল না -•• ফিরিওয়ালা হাকিয়া গেল, চাই চিনাবাদাম ।