পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড আছে শুকদেব, এখনও জল খেতে দেওয়া হয়নি—দুর ছাই ! এসব কি আর আমাদের বেটাছেলের কাজ ! যা বাপু, জলদি কিছু ভালো মিষ্টি-ফিষ্টি— শুকদেব উৰ্দ্ধশ্বাসে ছটিয়া চলিয়া গেল। डिम চৌদ্দ বছরের সেই মা-হারা মেয়েটাকেই সব করিতে হইল। "বহুকে রান্নাঘরে বসাইয়া প্রভা একসময় ঘরে গিয়া তাহার উস্কোখুক্ষে মাথার চুলগুলা চিরুণী দিয়া তাড়াতাড়ি আঁচড়াইয়া লইল । কপালে একটা নূতন কঁচি-পোকার টিপ পরিয়া তাহার পরনের ময়লা কাপড় ছাড়িয়া ফেলিল। আবৃশিতে ভালো করিয়া মুখখানা আর একবার দেখিতে গিয়া হঠাৎ তাহার মনে পড়িল, রাত্রে মেয়েদের নাকি আবৃশি দেপিতে নাই । আবৃশিখানা তুলিয়া রাখিয়া পুনরায় সে রান্না-ঘরে চলিয়া যাইতেছিল, কিন্তু শাড়ীটার দিকে তাকাইতেই লজ্জায় সে যেন মরিয়া গেল,—এই বেশপরিবর্তন তাহার বাবার নজরে পড়িলে তিনি কি ভাবিবেন ।---কাজ নাই । প্রভা আবার তাহার সেই পরিত্যক্ত ময়লা কাপড়খানাই পবিয়া লইল । পাশের ঘরে ছেলেদের সহিত রতনমণি গল্প করিতেছিল । নিকুঞ্জবিহারী পুনরায় ষ্টেশনে চলিয়া গিয়াছিলেন । প্রভা রান্না-ঘরে ফিরিয়া আসিতেই বহু বলিল, একটি ভালো রঞ্জিলা শাড়ী পরে’ এস দিদি, বুঝলে ? জামাইকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে নাও। নিয়ে ঘুমোওগে যাও । বাবু ছেলেদের নিয়ে এর পর খাবেন। প্রভা মুখে কিছুষ্ট বলিল না । বহুর মুখের পানে তাকাইয়া ফিক্‌ করিয়া একবার হাসিল । মাংস ইত্যাদি রান্না করিতেই সাড়ে-বারোটা বাজিয়া গেল । হরিপদ এক-সময় ছুটিয়া আসিয়া বলিল,—রান্না কখন হবে দিদি ৷ জামাই-বাবু বলছে, আজ কি তাকে উপোষ পাওয়াবে নাকি ? প্রভার অত্যন্ত লজ্জা হইল। বলিল,—ফাজ লমি করতে হবে না। যা দেখি, বাবাকে ডেকে আন । —ই । হরিপদ তাহার বাবাকে ডাকিতে গেল। "বহু’ বারান্দার উপর আসন বিছাইয়া ঠাই করিয়া দিল । পাওয়া শেষ হইতেই দেড়টা বাজিল । নিকুঞ্জবিহারী রতনমণিকে লইয়া পাশের ঘরে গিয়া গল্প করিতে লাগিলেন। চাকৃরি, বেতন-বুদ্ধি ইত্যাদি অনেক প্রশ্নই তিনি তাহাকে করিতেছিলেন । প্রশ্নের উত্তর দিবে কি, রতনমণি তখন ছটফট করিতেছিল। প্রভা নিজে খাইল। "বহু’কে খাওয়াইয়া বাড়ী পাঠাইয়া দিল । সমস্ত দিন পরিশ্রম করিয়া ঘুমের ঘোরে এইবার তাহার চোখ দুইটা বন্ধ হইয়া আসিতেছিল। চোখে জল দিয়া ঘুম ছাড়াইয়া নিজের হাতেই বিছানা পাতিল । অবসন্ন শরীরটা তাহার যেন বিশ্রামের জন্য অধীর হইয়া উঠিয়াছিল। যতবার ঘুম আসে, চোখ দুষ্টটা রগড়াইয়া ততবার সে জাগিয়া থাকিবার চেষ্টা করে ; কিন্তু পোড়া ঘুম যেন আজ তাহাকে ছাড়িতে চাহিতেছিল না। যে শাড়ীখানা একবার পরিয়া লজ্জায় সে খুলিয়া রাখিয়াছিল, এইবার সেখান ভালো করিয়া পরিল । তাহার পর, বিছানার এক পাশে আনন্দে ও লজ্জায় চুপ করিয়া বসিধা-বসিয়া ঢুলিতে-চুলিতে কোন একসময় বালিশের পাশে মুখ গুজিয়া ঘুমাইয়া পড়িল । নিকুঞ্জবিহারী বাহিরের দরজা বন্ধ করিয়া আসিয়া ছেলে-দুটিকে লইয়া সেই ঘরেই মাদুরের উপর শয়ন করিলেন । রতনমণি অনেক রাত্রে তাহার কবল হইতে পরিত্রাণ পাইয়া পাশের ঘরে আসিয়া বসিল । দেখিল, প্রভা বিছানার এক পাশে শুইয়া আছে। ইহা তাহার কপট নিদ্রা ভাবিয়া প্রথমে তাহাকে উঠাইবার চেষ্টা করিল না। আহারাদির পর বিড়ি-সিগারেট না টানিতে পাইয়া অনেকক্ষণ হইতে তাহার পেট ফাপিতেছিল, এইবার পকেট হইতে একটা হাওয়াগাড়ী সিগারেট বাহির করিয়া চো-টো করিয়া টানিতে-টানিতে সস্তা তামাকের বিকট গন্ধে ও ধোয়ায় সারা ঘরটা একেবারে মশগুল করিয়া ফেলিল । * كققعقع