পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌb~ একটু—খুব সামান্ত ব্যতিক্রম ঘটাইত কলতলাটা । সেইখানে ব্যয়িত তাহার জীবনাংশে আশা-বিষাদের একটা অজ্ঞাত-পুৰ্ব্ব মিশ্র অনুভূতি জাগিয়া উঠিতেছিল। সেটাকে সে যে পূর্ণভাবে নিজের হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিতেছিল এমন নয় ; সেটা শুধু ধরা-ছোয়ার বহিভূত একটা অস্পষ্ট আকারে তাহার উদ্ধাম মনটাতে একটা ছায়াপাত করিয়া মিলাইয়া যাইত। তাহার এমন ভাষা ছিল না যে, সে এই আভাসটুকুকে একটা আকার দিয়া বুঝিতে-স্বঝিতে পারে—কারণ, যৌবন, স্বীয় আগমনের সঙ্গে আর-সকলকে যে শব্দ-সম্ভার দিয়া চৈতন্য ও স্পন্দন দান করে, লছিয়াকে তাহা দিবার অবসর পায় নাই । কলতলার একটা টান ছিল, কিন্তু সেটা বেদনার টান কি স্বখের এবং তাহার উদ্ভবই বা কোনখানে সেটা সে বুঝিতে পারিত না ; তাই কলতল ছাড়িয়া সে বাচিত কি মরিত বলা কঠিন ; তবে বাড়ী আসিলে তাহার সহজ, প্রাত্যহিক জীবনের পাশে কলের স্মৃতি আসিয় তাহাকে বিত্রত করিতে পারিত না এটা ঠিক,—কারণ মনটা ছিল তাহার বীণার মত-একটু ঘা পড়িলে একটু রণরণিয়া উঠিত বটে, কিন্তু তাহার স্মৃতি সে বহন করিয়া রাখিতে পারিত नीं । এক-একদিন লছিয়া বুড়ার সহিত ঝগড়া করিয়া নিজেই জল ভরিতে আসিত। বুড়াকে বলিত, “জলে ভিজে-ভিজে তুই যদি মরিস তাহলে আমি দাড়াবো কোথা ? সবাইকে ত পেটে পূরে বসে আছিস ; কাউকেও রেখেছিস্ কি ?” বুড়া বিষণ্ণভাবে মাথাটা নাড়িয়া বলিত, “ঠিক বাত, ঠিক বাত, .তবে কথা এই লচ্ছি, তুই বা যদি জরে পড়িস, তা হ’লে তোর যে একটা বন্দোবস্তের কথা ক'দিন থেকে আমি ভাবছি সেটাতেও যে, বাগড় পড়ে যাবে—” একথাটা লছিয়া মোটেই বরদাস্ত করিতে পারিত না । একেবারে অগ্নিশৰ্মা হইয়া উঠিত, মুখ ভেঙাইয়া বলিত, “বন্দোবস্ত ? বন্দোবস্ত ?—আমার বন্দোবস্ত করলে ঐ হাড় ক’খানা আগলাবে কে ?—শেয়াল-কুকুরে ? বুড়ে বয়সে তোর মতিচ্ছন্ন ধরেছে—তা আর আমার বুঝতে বাকি প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ { ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড নেই। তা দেখি, আমি আগে যমের সঙ্গে তোর বন্দোব করি কি তুই আমার বন্দোবস্ত করিস্—” বর্ষা গেল, শীত গেল, বসন্ত ফিরিয়া আসিল । জলে কলের ভিড় আবার জমিয়া উঠিতে লাগিল এবং এ জমায়েতেরমুখ-দুঃখ,বাঙ্গালার নিন্দ এবং মুল্লুকের তারিফ প্রভৃতি সেই পুরাতন গল্পের মধ্যে একটা নূতন বিষ মাঝে-মাঝে আলোচিত হইতে লাগিল—সেটা স্বনরাও লছিয়ার পরিবর্দ্ধমান ঘনিষ্ঠত । সকলেই নাসিকা কুঞ্চি করিতে লাগিল, ভ্র কপালে উঠাইতে লাগিল, একাল সেকালের তুলনা করিতে লাগিল এবং সবশেষে নিলিপ্ত ভাবে এই অভিমতই প্রকাশ করিতে লাগিল যে, যাহা নাতনী তাঁহারই যখন চাড নাই ত অপরের মাথ ঘামাইয়া ফল কি ? তা প্রকৃতই, স্থনরা ও লছিয়া একটু বাড়াইয়া তুলি য়াছে। তাঙ্গদের কলতলার-কলহ দু’-একটা লোক জড় ন হওয়া পৰ্য্যস্ত আজকাল আর থামে না, আর তাহাদে গল্প-হাসি মুরু হইলেও একটু বিবেচক লোকের চক্ষে তাহ কেমন-কেমন ঠেকে। এমন-কি স্বনরা জরে পড়িয়ে লছিয়া দু-একবার তাহার জল জোগাইয়া, তাহার পটোলেং ঝোলের পথ্য পৰ্য্যন্ত রাধিয়া দিয়া আসিয়াছে। মুন্নাও যে কথাটা নেহাৎ না জানিত এমন নয়, কারণ জল তুলিতে যাইয়া স্বনরার গৃহে এ-সব উপলক্ষে যে-টুকু বিলম্ব হইত, লছিয়া তাহার একটা মনগড়া জবাব-দিহি দিবার চেষ্ট করিত । স্বনরা কিন্তু কখন পাণ্টা ভিজিট দেয় নাই—লছিয়া জরে মরণাপন্ন হইলেও নয় । মনস্তত্ত্ববিদরা বোধ হয় বলিবেন তাহার মনে গলদ ছিল বলিয়া সে এতটা খোলা-প্রাণ হইত্বে পারিত না –কথাটা অসম্ভব নয়, হইতেও পারে। তবে লছিয়া ভাল হইয়া যদি মুখ ভার করিয়া অম্বুযোগ করিত, স্থনর বলিত সাহেবের বাড়ী পৰ্য্যন্ত তাহাকে খাটিতে হয়, তাহার কি নড়িবার জো আছে ? যদি মনটা লছিয়ার ভাল দেখিত, কখন কখন এটুকু যোগও করিয়া দিত—“আর তোমার অমুখ হ’লে আমিই কি এমন ভাল থাকি লচ্চি, যে দু’পা হেঁটে দেখে আসব ?” লছিয়া বলিত, “আচ্ছা, জির-বোখার’ শুধু আমার