পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] জামাতা বাবাজীউ ఆలి এইবার প্রভাকে উঠাইবার পালা। প্রথমে ধীরে, পরে জোরে-জোরে বারকতক নাড়া দিয়া রতনমণি বুঝিল নিদ্রা তাহার কপট নয়, সত্যই সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। কিন্তু বহু দিন পরে যাহার স্বামী আসিয়াছে, সে-মেয়ে যে কেন ঘুর্মীয় এবং ঘুমাইলেও বা ডাকিলে উঠে না কেন, এই কথাটা সে কোনপ্রকারেই বুঝিতে পারিতেছিল না। ঘুমন্ত প্রভার গায়ে স্থড় স্কড়ি দিয়া আদর করিয়া মিনিট পাঁচ-ছয়ের মধ্যেও যখন তাহাকে উঠাইতে পারিল না, রতনমণি তখন রাগিয়া উঠিয় তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ ধরিয়া ঝাকানি দিতে স্বরু করিল। বেশী জোরে-জোরে কিছু করাও যায় না, পাশের ঘরে শ্বশুর-মহাশয় আছেন,— তাহার লজ্জাও করিতেছিল। অবশেষে সে একবার জোর করিয়া বিছানার উপর তাহাকে উঠাইয়া বসাইয়া দিতে গেল, কিন্তু ঘুমের ঘোরে প্রভা এমুনি জোরে র্কাইমাই করিয়া উঠিল যে, ভয়ে লজ্জায় রতন তাহাকে ছাড়িয়া দিতে বাধ্য হইল। আলোটা নিভাইয়া দিয়া সে এইবার রাগ করিয়া নিজেও এক পাশে শুইয়া পড়িল । মনে-মনে সে এই অসভ্য ঘুমন্ত মেয়েটার বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলিতে লাগিল, অনেক গৰ্হিত অপবাদ দিতে লাগিল, অথচ সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত হইতেও পারিল না। ঘুম ভাঙাইবার যতপ্রকার কৌশল তাহার জানা ছিল, একে-একে প্রভার উপর সেগুলি সমস্তই প্রয়োগ করিতে কম্বর করিল না, কিন্তু এই এত রাত্ৰি পৰ্য্যন্ত সংসারের সমস্ত কাজ-কৰ্ম্ম করিয়া প্রভার পরিশ্রাস্ত দেহ-মন গাঢ় নিদ্রায় এত বেশী অচেতন হইয়া পড়িয়াছিল যে, তাহার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং দেহের উপর কোনপ্রকারের অত্যাচার সে টের পাইল না। রাত্রির শেষ-প্রহরে প্রভ হঠাৎ জাগিয়া উঠিল । চোখ খুলিয়া দেখিল, পাশ্বে তাহার স্বামী তখন নিশ্চেষ্টভাবে ঘুমাইতেছে। প্রভার বুকের ভিতরটা কি যেন এক অজানা অনুভূতিতে ছলিয়া উঠিল। অতি সন্তৰ্পণে বালিশের উপর মাথাটা তুলিয়া হাত দিয়া সে তাহার ঘুমন্ত স্বামীর গলা জড়াইয়া ধরিল। ডাকিয়া তুলিবার ইচ্ছা করিল, কিন্তু মুখ দিয়া একটি কথাও বাহির হইল না,•••নড়াইতে গিয়া দেখিল, হাতে তাহার এতটুকু শক্তি নাই।--খোলা জানালা দিয়া শেষ-রাজির ঠাণ্ডা বাতাস বহিতেছিল। আবার ধীরে-ধীরে কোন সময় সে ঘুমাইয়া পড়িল । প্রাতে রতনমণির যখন ঘুম ভাঙিল; বাহিরে তখন স্বৰ্য্য উঠিয়াছে। অনতিদূরে জানালার স্বমুখে রেললাইনের উপর স্বর্ধ্যের আলো চিক্‌মিক্‌ করিতেছে। প্রথমেই তাহার মনে হইল, এখনই তাহাকে এই লাইনের উপর দিয়াই কলিকাতার ট্রেন ধরিয়া ছুটিতে হইবে । তাহার এই অঙ্কশায়িনীর বিরুদ্ধে রাগ তাহার শতগুণ বাড়িয়া উঠিল । আর-একবার সে শেয-চেষ্টা করিয়া প্রভাকে জোরে-জোরে নাড়িয়া দিল, মুখে কোনও কথা বলিল না । জোরে-জোরে নাড়িবার প্রয়োজন ছিল না । প্রভা চোখ খুলিল, কিন্তু খোলা জানালার পথে প্রভাতের উজ্জল আলোর দিকে দৃষ্টি পড়িতেই লজ্জায় সে ধড়মড়, করিয়া উঠিয়া বসিয়া একেবারে খাট হইতে লাফাইয়া পড়িল । এবং তাহার বিপ্লথ বসনের প্রাস্তভাগ রতনের হাত হইতে টানিয়া লইয়া দরজা খুলিয়া তাড়াতাড়ি বাহিরে চলিয়া গেল । রাগে দাত কটমট করিতে-করিতে জামার পকেট হইতে একটা বিড়ি বাহির করিয়া রতনমণি ফস্ করিয়া দিয়াশলাইট জালিয়া ফেলিল । রতনকে আজই কলিকাতায় ফিরিয়া যাইতে হইবে শুনিয়া, নিকুঞ্জবিহারী যেন একেবারে আকাশ হইতে পড়িলেন । বলিলেন, সে কি বাবা ? তাই কি হয় কখনও । আজকার দিনটা থেকে, কাল যেণ্ড । একে সে রাগিয়াই ছিল, তাহার উপর চাকুরির অজুহাত দেখাইল । তাহার মুখ-চোখের দৃঢ় ভাবভঙ্গী দেখিয়া নিকুঞ্জবিহার বেশী জেদ করিতে পারিলেন না । নিতাস্ত কাতর আমুনয়ের স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, আবার কবে আসবে বাবা ? রতনমণি আশ্বাস দিল যে, সে ছুটি পাইলে আবার আসিবে। এক ছড়া রূপার চেন ও একটি ঘড়ি জামাইএর জন্ত তিনি আনাইয়। রাখিয়াছিলেন। ষ্টেশনে আসিয়া ইণ্টার