পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] জীবিত অবস্থায় তিনি যেরূপ ছিলেন, সেই মূৰ্ত্তিতে এবং সেই পরিচ্ছদে নান্নার শয্যার নিকটে আসিয়া দাড়াইলেন । সেখানে দাড়াইয়া তিনি কিছুক্ষণ সস্নেহনয়মে মান্নাকে নিরীক্ষণ করিয়া তাহাকে বলিতে লাগিলেন, তুমি নিদ্রামগ্ন হইয়া তোমার দুঃখকষ্ট ভুলিয়া বহিয়াছ, কিন্তু তোমার চক্ষুতে অশ্র-চিহ্ন দেখা যাইতেছে, তোমার উপাধান পর্য্যন্ত অশ্রুতে সিক্ত হইয়া রহিয়াছে। মনে হয় শিশু যেরূপ কঁদিতে-কাদিতে ঘুমাইয় পড়ে, তুমি সেরূপ সুমাইয় পড়িয়াছ । আমি এথানে আসিয়াছি তোমাকে দেখিতে এবং তোমার সহায় হতে । জীবিতাবস্থায় আমি তোমা ইষ্টতে দূরে পাই নাই, মৃত্যুতে ও আমি তোমাকে ছাড়িয়া ধাইব ন, প্রতুধে দেবতারা আমার দেহ সংকার করিবেন ; তাহারা মনে করিতেছেন যে, চিরাগত প্রথা-অমুসারে আমার সমস্ত রত্নfলঙ্কারের ন্যায় তোমাকেও তাহার। আমার দেঙ্গের সহিত অগ্নি পংকত কfরবেন । কিন্তু তাঃ হুইবার ময় । তাঙ্গর পূৰ্ব্বেই মাতা ফ্রিগদেবী তোমাকে মৃত্যু দান করিবেন ; সেই মৃত্যু হইবে যন্ত্রণ। বিহীন । মুতু্যতে তোমার আত্মা দেহবিমূক্ত হইলে দেবতারা আমার দেহের সহিত তোমার দেহমাত্র অগ্নিসংকুভ করিবেন—তোমাকে নয় । আমি জানি যে তুমি আমাকে কত ভালবাস, কাজেই আমার সাহচৰ্য্য লাভ করিবার জন্য যে কোনও প্রকার মৃত্যু তোমার অনভিপ্রেত হইবে ন! । আমার ইচ্ছামত হইলে আমি মৃত্যুকে একেবারেই অপসারিত করিয়া স্বৰ্গরাজ্যে তোমার জীবিতকাল যথেষ্টপরিমাণে বাড়াইয়া দিতাম। কিন্তু তাহা শুধু তোমার অনভিপ্রেত বলিয়া নয়—তাহাতে আমার অধিকারও নাই । তুমি মৃত্যুতেও আমার সহযাত্রী হইবার জন্য প্রস্তুত হইয়াছ, কিন্তু জানিয়া রাখিও, মৃত্যু-রাজ্যে হেলাদেবীর সে অন্ধকার প্রদেশে জীবন বড় সুখের নয় । সেখানকার অধিবাসীরা সব ছায়াময় প্রাণী, কারণ তাহারা সকলেই মৃতের আত্মা । দেবতাদের মধ্যে সেখানে আছি এক আমি আর আছেন হেলাদেবী । মানব-জগতের মধ্যেও যাহারা সম্রাস্তচিত্ত, বাহা বীরের ন্যায় যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়া মৃত্যুকে বরণ করিয়া নরওয়ের পুরাণ »ዓ> লইয়াছে, তাহারা ত জানই ভলছন্নাতে স্থান পাইয়াছে। কাজেই হেলাদেবীর রাজ্যে আসিয়াছে যত অজ্ঞাত অখ্যাত অকৰ্ম্মণ্যের দল, যত ভীরু, বৃদ্ধ এবং দুৰ্ব্বল ব্যক্তি, যাহারা রোগে আক্রাস্ত হইয়া জরায় জীর্ণ হইয়া মৃত্যু লাভ করিয়াছে । অবশুই তুমি আসিলে আমরা দু-জনে পরস্পরের সাহচধ্যে অন্তত: কিছু সাস্তুনা লাভ করিতে পাইব এবং স্বৰ্গরাজ্যের কথা আলোচনা করিয়া সময় কাটাই তে পারিব । বলডার এইপৰ্য্যন্ত বলিয়া শেষ করিলেন, আমনি তাহার দেহাবয়ব যেন অস্পষ্ট হইতে লাগিল ! লাল্লা ঘুমের মধ্যে চীৎকার করিয়া তাহার দিকে হাত বাড়াইয়া দিলেন । বলডার বিষগ্নচিত্তে মস্তক সঞ্চালন করিলেন এবং অদৃশ্য হইয়া গেলেন। নান্না আবার শখাতে পড়িয়া তখন মাত। ফ্রিগাদেবী লঘুহস্তে সেই মুক্তাত্মা নিদ্র গত হইলেন । র্তাহাকে দেহ বিমুক্ত করিয়া দিলেন । তখন বলডারের অভিমুখে অগ্রসর হইলেন । ঠিক সেই মুহূর্তে রাত্রি প্রভাত হুইল । যাহাই হউক নান্নার মৃত্যু যেরূপেই সংঘটিত হইয়। থাকুক, দেবতারা তাহাকে চিতার উপরে বলডারের পার্থে শয়ান করাইলেন—যেন মৃত্যুতেও তিনি স্বামীর সহুগামিনী হইতে পারেন । সহমরণের প্রথ। ইহারা অত্যন্ত সন্ত্রমের চক্ষে দেখেন—ইহাতে হিন্দুদের সহিত তাই াদের আশ্চৰ্য্য সাদৃশ্ব দেখা যায় । এবিষয়ে ইছারা আবার হিন্দুদিগকেও ছাড়াইয়া গিয়াছেন । দেবতারা বলডারের সহিত তাহার পত্নীকে মাত্র সহমরণে পাঠাইয়াই ক্ষান্ত হইলেন না । তাহারা বলডারের অশ্ব এবং কুকুরসমূহ বধ করিয়া বিস্তুত চিতার উপর স্থাপন করিলেন । বলডারের প্রতি স্নেহ-ভালবাসার নিদৰ্শন-স্বরূপ দেবতার সকলেই নিজ-নিজ পক্ষ হইতে নানাপ্রকার বহুমূল্য দ্ৰব্যসম্ভারে চিতার সৌষ্ঠব বুদ্ধি করিলেন । সৰ্ব্বশেষে ওডিন আসিয়া তাছার মন্ত্রপূত অঙ্গুরী ড্রাউপনির (Draupnir চিতার উপরে প্রদান করিলেন এবং শেষ সময়ে বলডোরের কানে-কানে কি যেন বলিয়া দিলেন—কি যে বলিলেন -হাছা কেহই জানিল না । কাহারও কাহারও মতে বলডার যে কল্পাস্তে মৃত্যুরাজ্য হইতে মুত্তি লাভ করিয়া