পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা । জন্তেই ‘কালীমাই তোয়ের করেননি ; যাবে!” অনেক দিন এইভাবেই গেল, তাহার পর একদিন এই ঘটনাটি ঘটিয়া বসিল – সেদিন ছিল দোল-পূর্ণিমা। কলের ছুটি, ঘরও খালি —লোক গুলা রাস্তার পিচকারির উৎসবে মাতিয়া বেড়াইতেছে । শ্লীল-অশ্লীল নানাবিধ গীতে, হাসির উন্মাদ হবুরায় আর বেয়াড় খঞ্জনি-বাধা, ঢোল ও করতালির স্বষ্টিছাড়া আওয়াজে এই অল্প-পরিসর জায়গাটা গমৃগম্ করিয়া উঠিয়াছে। এতলোক যে এখানে ছিল তাহা ভাবিয়া উঠা যায় না। স্বনরাও ময়লা কাপড়ের উপর একটা নূতন পিরান চড়াইয়া, মাথায় একটা ধোপকরা ফুলদার হালকা টুপি পরিয়া, রং আবির ও কাদা মাখিয়া, মুখে কালী লেপিয়া, সঙ্গীদের পালাক্রমে গাধায় চড়াইয়া ও বারকতক নিজেও চড়িয়া সমস্ত সকালট কাটাইল ! একটা রসিক ছেলে স্বনরা ও লছিয়াকে উদ্দেশ করিয়া বিচিত্র ছন্দে গান বাধিয়া আনিয়াছিল। স্বনরা প্রথমটা বেজায় চটিল, দল ছাড়িবে বলিয়া ভয় দেখাইল, তাহার পর সরস গানটার মাদকতা যখন তাহার মনটা ভিজাইয়া দিল, সকলে পরামর্শ করিয়া লছিয়ার নামটা বাদ দিয়া ঘণ্টাদু'এক ছয় পংক্তির গানটা লইয়া গলার শিরা ফুলাইয়া সহরময় খুব একচেটি চীৎকার করিয়া ফিরিল। আন্দাজ ১টার সময় তাহারা বাড়ী ফিরিল। এক-আনা দামের ছোট, গোল আবৃস্টি ঝুড়ির পেটারা হইতে বাহির করিয়া নিজের মুখটা দেখিতেই স্বনরা হাসিয়া ফেলিল এবং তাহাতে দাতন-দিয়া মাজা শাদা দাতগুলা বাহির হইয়া পড়ায় আরও যে একটা নূতনতর রূপ খুলিল তাহাতে তাহার হাসির মাত্রাট আরও বাড়িয়া গেল। মাথা দুলাইয়া-জুলাইয়া নিজের প্রতিচ্ছায়াটাকে বলিল, “লছিয়া দেখলে আজ আর তোমায় আস্ত রাখবে না।” তাহার পর জাম-টুপি খুলিয়া বগলদাবা করিল এবং একহাতে কলসীটা ঝুলাইয়া কলের দিকে চলিল । দূর হইতে দেখিতে পাইল রং-কাদা-মাখ। গোটা-চার তখন দেখা “কলতলার কাব্য’ సిసి পাচ ছোট চ্যাংড়া ছেলের সহিত লছিয়া তুমুল বিবাদ জুড়িয়া দিয়াছে। তাহারাও গা না ধুইয়া ছাড়িবে না, লছিয়ারও জিদ—কোন মতেই তাহাদের কলতলা নোংরা করিতে দিবে না। পাটের কোম্পানী যখন এইসব নিশাবাজ’ গুণ্ডাদের পুষিতেছে তখন তাহার কলের ভিতরকার ভালো পুকুরটাতে গিয়া স্নান করুক না, কে মানা করে ? ‘ভলে আদমির মেয়ে-ছেলেরা যেখানে খাবার-জল লইতে আসে সেখানে 'হারামজাদগি করিতে আসার কি অধিকার তাদের ? স্বনরা পা চালাইয়া আসিয়া পন্থছিল ; ভারী করিয়া প্রশ্ন করিল, “কা ভইল রে ?” ছেলে-গুলা সমস্বরে বলিয়া উঠিল, “দেখনা স্বন্দর ভইয়া, বাতাহিয়ার বদমাইসি—” “বাতাহিয়ার বদমাসি,আর তোরা সব যত ভালোমানুষ না ? কলতলাটা সব উচ্ছন্ন দিতে এসেছিস ; পাল, না হ’লে বসালুম কিল’ বলিয়া স্বনরা কৃত্রিম রোষ দেখাইয়া দুই-একটা ছেলেকে ধরিতে গেল ; দল ভাঙিয়া ছেলেগুলা দিগ্বিদিকে ছুট দিল। একটা ছেলে নিরাপদ ব্যবধানে ঘুরিয়া দাড়াইয়া বলিল, “আর তুমি গা ধুলে বুঝি দোষ নেই ? নিজের চেহারার দিকে একবার দেখ দেখি—” “আরে, আবার তর্ক করে” বলিয়া স্থনর আর-একটা তাড়া দিল । আর কেহ দাড়াইতে সাহস করিল না, অনেক দূরে গিয়া হাততালি দিয়া ছন্দোবন্ধে গাহিতে লাগিল—“বাতহাইয়াকে পিছে স্বন্দর বাতাহা ভেলন বা ।” হাঙ্গামাটা থামিয়া গেলে কৃতজ্ঞতার বদলে লছিয়া স্বনরার মুখের পানে চাহিয়া বলিল, “অনুমন বন্দরকে মাফিক দেখাবতাড়", অর্থাং ঠিক বাদরের মত মানিয়েছে। স্থনর বিকট হাসি হাসিয়া ফেলিল । তাহার পর হঠাৎ গম্ভীর হইয়া বলিল, “দেখ, লছিয়া, আজ আমার মনটা অন্য-ধরণের, বেশি ঘাটাস-নি। হোলির দিন, তোর গ’লগুলাও এত মিষ্টি লাগছে যে না জানি কি হ'তে কি হয়ে যায়—” লছিয়ার মেজাজ সঙ্গে-সঙ্গে ঘুরিয়া গেল। চোখ আওয়াজ