পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] কয়েকখানা বাশের বাথারী আনিয়া নিধিরাম, রামচরণের হাত ও পা সোজা করিয়া বেশ কষিয়া বাধিয়া দিল। দু’চার দিন পরে-পরে আসিয়া দেখিয়া যাইতে লাগিল, হাত ও পায়ের বঁাধন মজবুত আছে কি না । তিন সপ্তাহ পরে, হাড় জোড়া লাগিয়াছে বলিয়া যখন সে রামচরণের হাত ও পায়ের বাধন খুলিয়া দিল, তখন দেখা গেল, হাড় জোড়া লাগিয়াছে বটে, কিন্তু বেচারার কল্পই ও হাটুর জোড়া এমন শক্ত হইয়া গিয়াছে যে হাত-পা আর খেলে না। নিধিরাম, একটা মালিশের ব্যবস্থা করিল কিন্তু কোন ফল হইল না। সেই হইতে রামচরণের ডান পা-টা খোড়া এবং ডান হাত-ট একেবারেই অকৰ্ম্মণ্য হইয়া গেল। কিন্তু এই অঙ্গহানির জন্য রামচরণ কিছুমাত্র দুঃখিত হইল না। ডাক্তার তাহার হাত-পা ছাড়িয়া দিতেই সে খোড়াইতে-খোড়াইতে ফুলির কাছে যাইয়া বলিল, “চল রে ফুলি, আমাদের বারোমেসে পেয়ার গাছটা -দেখে আসি, যদি কিছু থাকে।” ফুলি, শঙ্কিত হইয়া বলিল, “না রে রাম, আর গাছে উঠতে স্বাসনে ৷” রামচরণ হি-হি করিয়া হাসিয়া বলিল, “আমি কি আর গাছে উঠতে পারি রে, যে, গাছে উঠতে যাবো ? চল, স্ট্রাকৃষি দিয়ে পাড় ব’খন।” রামচরণের কথায় ফুলির চোখে জল আসিয়াছিল । সে তাহার ভাঙা হাতখানা ধরিয়া বলিল, “আর জাল দিয়ে মাছও ধরতে পারবিনে ?” রামচরণ বলিল, “না রে ফুলি, তা আর পারব না।” গরীবের ছেলেমেয়ে, যারা পেট পুরিয়া খাইতে পায় না, পেটের ভাতের কথাই তাঁহাদের সকলের আগে মনে আসে, তাই ফুলি প্রশ্ন করিল, “তবে কি করে’ থাবি ?” রামচরণ, বলিল, “যে ক'দিন বাবা আছে সে-ই থা গুয়াবে।”

  • তার পর ?” রামচরণ একটু দুঃখিত হইয়া বলিল, “কি জানি— হয়ত না খেয়ে মরব।”

ফুলি »ፃ:> ফুলি যেন তাহাকে আশ্বাস দিবার জন্ত বলিল, “দূর, তা কেন ? আমি তোকে খাওয়াবো।” রামচরণ হি-হি করিয়া হাসিয়া বলিল, “হ্যা, তুই খাওয়াবি! তুই ত ৰে হ’লে কোথায় থাকুবি তার ঠিকানা নেই।” ফুলি বলিল, “আমি তোকে বে করব।” রামচরণ পেয়ারা গাছের দিকে যাইতে-ঘাইতে বলিল, "তা হ’লে পারবি।” ( e.) রামচরণের বাবা বনমালী হালদারের জেলেদের মধ্যে অবস্থা একটু ভালোই। মাছ বেচিয়া কিছু টাকা সে হাতে করিয়াছিল। আর দু’খান নৌকাও তাহার ছিল। ছেলের বয়স যখন আঠারো বছর হইল, তখন বনমালীর ইচ্ছা হইল, তাহার বিয়ে দেয়। সে মেয়ের সন্ধান করিতে লাগিল। কিন্তু তাহার টাকার লোভে কেহ তুলিল না । রোজগারের জন্ত শরীরটাই যাহাদের পুজি, হাত-পা না থাকিলে তাহারা একেবারে দেউলে । সুতরাং এই খোড়া ও মুলো ছেলেটির হাতে কেহই মেয়ে দিতে রাজি হইল না । ফুলিও জেলের মেয়ে। বিধবা মা, আর কেউ নাই । মা মাছ বেচিয়া কোন রকমে চালায় । দায়ে ঠেকিলে অনেক সময়ে বনমালীর কাছে সাহায্যও পায়। বনমালী যখন আর কোথায়ও মেয়ে পাইল না তখন ফুলির সহিত ছেলের বিবাহের প্রস্তাব করিল। বুড়োর যে কিছু টাকা আছে তাহ ফুলির মাও শুনিয়াছিল । সে মনে করিল, রামচরণের বুদ্ধি আছে, বাপের টাকাটা স্বদে খাটাইলেও থাইতে পাইবে । নৌকা দুখানা ভাড়ায় খাটাইলে, তাহাতেও পনেরোটা টাকা আসিবে । নিজের মন ঠিক করিয়া, ফুলির মন বুঝিবার জন্য সে বিয়ের কথা ফুলির নিকটে তুলিয়া বলিল, “ছোড়ার বুদ্ধিশুদ্ধি আছে, তবে খোড়া আর কুলো ।” ফুলি, মুখ ফিরাইয়া বলিল, “হ’লই বা ।” ফুলির মা প্রফুল্লমনে বিয়ে দিতে রাজি হইল। বিয়েও झेश्च।। ८१iल । দুটা বছর বেশ কাটিয়া গেল। ফুলি সময় পাইলেই