পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bԵ-Հ ويه প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড জড়াইয়া ধরিয়া কাদিতে-কাদিতে বলিল, “এ কি করলে ?” * * রামচরণের এতক্ষণ পরে যেন হস হইল। সে উদ্ধতস্বরে বলিল, “বেশ করেছি। আমি গরীব, অক্ষম বলে’ যে-সে যে তোকে অপমান করবে তা আমি সইব না।” ফুলি, চোখের জলে ভাসিয়া বলিল, “এখন উপায় ?” "উপায় ফাসি। কিন্তু তোর অপমানের ত শোধ দিয়েছি।” যথাসমধে পুলিশ আসিয়া রামচরণকে ধরিয়া লইয়া গেল। কয়েকদিন পরে তাহার সেশনে বিচার হইল। রামচরণ খুন স্বীকার করিল, কিন্তু তাহার ফাসি হইল না। তাহার উত্তেজিত হইবার যথেষ্ট কারণ ছিল দেখিয়া জজ তিন বছরের জেল দিলেন। ফুলি কাদিতে-কাদিতে জজকে বলিল, “হুজুর আমাকেও জেলে দিন ?” জজ হাসিয়া বলিলেন, “তুমি ত কোন অপরাধ করনি যে, জেলে দেবো ।” পুলিশ রামচরণকে লইয়া গেল। ফুলি, কাদিতেক্টাদিতে তাহার নিকট হইতে বিদায় লইল । রামচরণ জেলে গেল, জেলের খাটুনিও খাটিতে লাগিল—আর ভাবিতে লাগিল ফুলির কথা । তাহাকে রক্ষা করিবার জন্ত সে খুন করিয়াছে, কিন্তু এখন যে সে সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ভাবিতে-ভাবিতে তাহার মন উদভ্ৰান্ত হুইয়া উঠিল। সে জেলের কয়েদি হইতে আরম্ভ করিয়া, ওয়ার্ডার, পাহারাওয়ালা সকলকেই জিজ্ঞাসা করিত, *ই্যা ভাই, আমার অপরাধের জন্য সবৃকার ত আমাকে শাস্তি দিলেন ; কিন্তু ফুলি যে এখন একেবারে নিরাশ্রয়, তার রক্ষার জন্য ত কিছু করেননি ?” এই পাগলের মত প্রশ্ন শুনিয়া সকলে হাসিত আর বলিত, "হঁ্যা ফুলির জন্য এখন সেপাই-সাস্ত্রী মোতায়েন হয়েছে।” এ-উপহাস রামচরণ বুঝিত। সে মনে-মনে ভাবিত “এর চেয়ে ফুলিকে নিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেও যে ভালো হ’ত।” নিজের নির্ব দ্ধিতার জন্য সে আত্মগ্লানিতে জলিত। জেলের খাটুনি তাহাকে একটুও কাতর করিতে পারিত না-কাতর করিত নিরাশ্রয় ফুলির চিন্তা । ( t ) ফুলি কঁাদিতে-কাদিতে বাড়ী ফিরিল। কিন্তু এখন স্বামীর চিন্তা অপেক্ষা, নিজের চিন্তাই বড় হইল। এখন সে দাড়ায় কোথায় ? দুঃখ যত বড়ই হউক, ছুটি ভাতের সংস্থান তাহাকে শরীর খাটাইয়া করিতেই হইবে। কাজেই ফুলি শশের দিদির আশ্রয়ে থাকিয়াই মাছ বেচিতে লাগিল। রাত্রেও শশের দিদি অনুগ্রহ করিয়া তাহার কাছে আসিয়া শুইতে লাগিল । কয়েকটা দিন এমনিভাবে কাটিয়া গেল। কিন্তু যে শ'শের দিদির সে আশ্রয় লইয়াছে, সেই শ'শে লোকটা ভালো ছিল না। নিরাশ্রয় বলিয়া ফুলির উপরে এখন অনেকেরই দৃষ্টি পড়িল। নদের-চাদ গ্রামের মধ্যে ধনীর ছেলে, চরিত্রও তাহার জঘন্ত । শ’শের দিদিকে সে সহজেই হাত করিল। একদিন শশের দিদি বলিল, “ফুলি, আজকে আমি আমার - বোনের বাড়ী যাবে। কাল দুকুরে ফিরে’ আসব।” ফুলি, উদ্বিগ্ন হইয়া বলিল, “আমি একা থাকৃব কি করে, শ’শের দিদি ?” "আঃ সবে ত একটা রাত্তির, তা না হয় একটু সাবধানে শুয়ে থাকিস। আর ভয়ই বা কি এত ?” নিরুপায় হইয়া ফুলি চুপ করিয়া রহিল। সে রাত্রে শ'শের দিদি আসিল না। আত্মরক্ষার জন্য ফুলি, জালের স্থতাকাটার একখানা বড় ছুরী বালিশের নীচে লুকাইয়া রাখিল । মনে করিল আজ আর ঘুমাইবে না। কিন্তু সমস্ত দিনের পরিশ্রমের পর বিছানায় পিঠ দিতে কথন যে সে ঘুমাইয়া পড়িল, তাহা সে জানিতেও পারিল না। ফুলির ঘরখানা একেবারে জীর্ণ। চাটাইয়ের বেড়া উইএ খাইয়া একেবারে জিবুজিরে করিয়া রাখিয়াছে, একটু হাত লাগিলেই খসিয়া পড়ে। স্বতরাং ঘরে প্রবেশ করিতে কাহারে একটুও কষ্ট বা অন্ধবিধা হয় না। অনেক রাত্রে হঠাৎ ফুলির ঘুম ভাঙিয়া গেল। তাহার মনে হইল কেহ যেন তাহার গায়ে হাত দিতেছে । সে ধড়মড় করিয়া বিছানায় উঠিয়া বসিল এবং দেখিল, তাহার বিছানার কাছে একটা লোক বসিয়া আছে। ফুলি