পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ফুলি Ջե Ց চেচাইয়া উঠিতেই সে তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল । হঠাৎ দুৰীখানার কথা ফুলির মনে হইল। সে কোন রকমে ছুরী-খানা বালিশের নীচ হইতে টানিয়া লইয়া আক্রমণকারীর হাতে পোচ লাগাইয়া দিল । লোকটা তৎক্ষণাং তাহাকে ছাড়িয়া দিয়া পলাইল । ফুলির চেচামেচিতে দু’একজন লোক আসিল । কিন্তু কোন লোকজন দেখিতে না পাইয়া, তাহার মাথা খারাপ হইয়াছে বলিয়া চলিয়া গেল। ফুলি চুপ করিয়া বিছানার উপরে বসিয়াবসিয়া রাত্রি কাটাইল । ভোরে ঘরের কাজ সারিয়া মাছ বেচিতে বাহির হইবে এমন সময়ে নদের-চাদ, গ্রামের কয়েকজন লোক ও একজন কনেষ্টবল সঙ্গে করিয়া উপস্থিত হইল। নদেরচাদ ফুলকে দেখাইয়া বলিল, “এই!” কনেষ্টবল, ফুলির হাত ধরিল। ফুলি, লজ্জা ও ভয়ে থতমত খাইয়ু বলিল, “কি করেছি আমি ?” কনেষ্টবল দাত খিচাইয়া বলিল, "নেকি, জানেন না কি করেছেন ! এই ধে নদের-চাদবাবুর হাত জখম করে’ দিয়েছিস্ ।” ফুলি বলিল, “ও রাত্রে আমাকে বে-ইজ্জত করতে এসেছিল—" কনেষ্টবল ধমকু দিয়া বলিল, “ও ত নষ্ট৷ মেয়েমানুষের বাধি গৎ । গেছিলি ওঁদের কলা-বাগানে কলা চুরি করতে, ধরা পড়ে হাত জখম করে। পালিয়েছিস্ । চল এখন দিন-কয়েক ছিরি ঘরে মজা করে আসবি ।” ফুলিকে আর কথা বলিতে না দিয়া কনেষ্টবল তাহাকে হিড় হুিড় করিয়া টানিয়া লইয়া চলিল । নদের চাদ অর্থবান স্বতরাং গ্রামের গরীবদের সাধ্য কি যে তাহার বিপক্ষে কথা বলে। সাক্ষীও দু’চারটি জুটিয়া গেল। রামচরণের মত ফুলিকেও আদালতে লইয়া গেল, প্রমাণও হইল সে কলা চুরি করিতে যাইয়া ধরা পড়িয়ছিল এবং নদের চাদের হাতে আঘাত করিয়া পলাইয়াছিল। ফুলির দু'মাসের জেল হইয়া গেল । থান, পুলিশ ও আদালত দেখিয়া, ফুলি প্রথমে ভয় পাইaাছিল, ক্লিন্তু জেলের হুকুম শুনিয়া সে একটুও ভয় পাইল না। বরং সে মনে-মনে খুলীই হইল। জেলকে সে শাপে বর মনে করিতে লাগিল । কেননা জেলে গেলেই সে রামচরণের কাছে থাকিতে পরিবে । সে জানিত সমস্ত পুথিবীতে মাত্র একটি জেল আছে। স্বতরাং স্বামীর কাছে যাইতেছে বলিয়া সে খুব উৎফুল্প হইল । কিন্তু বেচারা জানে না যে, রামচরণ ঘানি ঘুরাইতেছে বৰ্দ্ধমান জেলে, আর সে যাইতেছে সাজাদপুর । জেলে যাইয়াই ফুলির ভুল ভাঙিয়া গেল এবং সঙ্গে-সঙ্গে তাহার আশা ও আনন্দ উড়িয়া গেল। নিরুপায় হইয়া সে সাজাদপুরের জেলে শুরকি কুটিতে লাগিল। কেবল শুরুকি কোটাই যদি শাস্তি হইভ তাহা হইলে চাষার মেয়ে ফুলির বিশেষ কষ্টের কথা ছিল না, কেননা এরূপ পরিশ্রম করা তাহার আজন্মের অভ্যাস। কিন্তু প্রথম দিনেই সে বুঝিতে পারিল, প্রাচীরবেষ্টিত প্রহরীরক্ষিত জেলখান ও তাহার গ্রামের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই । পাহারাওয়ালা হইতে আরম্ভ করিয়া ওয়ার্ডার পর্য্যন্ত সকলেই তাহাকে দেখিলে কদর্ঘ্য রসিকতা করিত। না সঙিয়া উপায় নাই বলিয়া ফুলি সমস্ত নীরবে সহিয়া যাহত । যেখানে মেয়ে কয়েদীদের সহিত ফুলি শুবুকি কুটিতেছে, একদিন জেলার-বাৰু সেইখানে আসিয়া দাড়াইলেন। নূতন কয়েদী ফুলির উপরে নজর পড়িতেই তিনি তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোর কমাসের মেয়াদ ?” ফুলি বলিল, “দু’মাসের ” “কি করেছিলি ?” ফুলি তাহার দুঃখের কথা বলিতেই তিনি একটু হাসিয়া বলিলেন, "বুঝেছি, দেশে তা হ’লে তোর আর কেউ নেই ?” “না।” "খালাস পেলে কি কবি ?” “দেশে যাবো ।” “কার কাছে ? দেশে যেয়ে আবার জেল খাটুবি নাকি ?” ফুলি দেখিল সত্যই তাহার আর আশ্রয় নাই। সে চুপ করিয়া রহিল।