পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুন-বাগদী শ্রী অরবিন্দ দত্ত চতুর্থ পরিচ্ছেদ শিশুদিগের একটা প্রধান গুণ এই,—তাহারা পরস্পরের মধ্যে যত শীঘ্র বিচ্ছেদ ঘটায়, আবার তত শীঘ্র ঘনিষ্ঠতাও করে । সে-সনিষ্ঠতায় একে অন্যের অপরাধের প্রতি অন্ধ হইয় তাহার দুঃখের অংশটাই এমন সহজ ও সরলভাবে অতি শীঘ্ৰ গ্ৰহণ করিয়া বসে যে, তাছাদের সরলতায় কিছুমাত্র সন্দেহ করিবার থাকে না। বলাই, শান্তি এবং কানাইলাল তিন জন একত্রে অঙ্গনের একপাশ্বে খেলাঘরে বৰ্মিণ পুতুল লইয়া থেলিলেছল। বলাই ও শান্তির পুত্র-কন্যার বিবাহে কানাইলালের বিধি-ব্যবস্থার সঠিত মথন ৰাখীদের মতের ঐক্য হইল না, তখন সে ঝগড়াঝাটি করিয়া সেখান হইতে উঠিয়া আসিল । এবং এই সঙ্গীবিরহের বেদন ঝটুপটু মনের মধ্যে চুকাইয়। ফেলিতে সে যখন হাতের কাছে কোন কাজই পাইল না, তখন দরদালানে ঢুকিয়া সম্পূর্ণ খেয়ালের বশে স্বপেন্দুর জামার পকেট হইতে ঘড়িট টানিয়া বাহির করিল এবং একট। বড় নিগ্ৰহ ঘাড়ে লইবার জন্য তাহার পঞ্চত্রও ঘটাইল । কানাইলালের পৃষ্ঠে স্বথেন্দু—রক্তের নদী বহাইয়া দিলে তাহার করুণ চীৎকারের শব্দে বলাই ও শান্তি খেলা ফেলিয়া তথায় ছুটিয়া আসিল । দুই ভাই-বোনে ভয়ে জড়সড় হুইয়া বিস্থিত-নেত্রে একপাশ্বে দাড়াইয়া দেখিতে লাগিল । তার পর মহেশ্বরী অtসিয়া যখন কানাইলালকে বাড়ী হইতে তাড়াইয়া দিবার জন্য তাহার কান ধরিয়া উঠানের এক পাশ্ব হইতে অপর পার্শ্বে টানিয়া লইয়া যাইতেছিলেন, তখনও তাঙ্গর পুতুলের মত নিশ্চলভাবে সেইখানে দাডাইয়া থাকিয়া সজল চক্ষু চারিট কানাইলালের পিঠ জোড়া ক্ষতটার উপর ন্যস্ত করিয়া সমবেদন জানাইতেছিল। কানাইলালের আর্বনাদে তাহদের শিশুহৃদয়ের স্নেহ-তন্ত্রীগুলি একই স্বরে র্কাপিয়া উঠিতে চাহিতেছিল । মহেশ্বরী কানাইকে সঙ্গে লইয়া বিছানায় যাইয়া শয়ন করিলে তাহার শিশু সার্থী দুটিও ধীরে-ধীরে মানমূখে সেই গুহের দ্বারে আসিয়া বসিল । এবং পলকহীন হইয়া কানাইলালের দিকে তাকাইয়া রহিল । উদ্বেগ ও কৌতুহল, বিস্ময় ও করুণ তাহাদের ছোট হৃদয়গুলির ভিতর এমন ভিড় করিয়া তুলিয়াছিল যে, কথায় তাহার কোনোটাকেই তাহারা প্রকাশ করিতে পারিতেছিল না । ভাত খাইবার জন্য রান্নাঘর হইতে শৈলবালা কয়েকবার বলাই ও শাস্তিকে ডাকাডাকি করিলেন, তাহারা উঠিল না। কানাইকে ফেলিয় তাহারা যায় কি করিয়া ? ক্ষুধা-তৃষ্ণ। যাহাঁদের মধ্যে সৰ্ব্বদাই জাগ্রত, তাহারা অনায়াসে আহারের কথা ভুলিল, চুপ করিয়া সেইখানে বসিয়া রহিল । শেষে শৈলবালা এক সময় তাহণদের হাত ধরিয়া উঠাইয়া লইয়া গেলেন। না থাওয়াইয়াত আর ছেলেদের ফেলিয়া রাখা যায় না ? কিন্তু মা টানিয়া আনিলে না থাইয়া উপায় নাই, তাই থাইতে হইল। কিন্তু কোন-মতে নাকে-মুখে চারিটি গুণ্ডিয়া আবার তাহারা সেইখানে আসিয়া বসিল । কিসের পর কি ষে খাইল আজ তাহা তাহীদের চোখেই পড়িল না। তার পর মহেশ্বরী যখন স্বান করিতে গেলেন, তখন সেই অবসরে তাহার গৃহে ঢুকিল । কানাইলালের সঙ্গে দু’টা কথা বলিবার জন্য বন্ধুদের প্রাণ ব্যাকুল হইয়া উঠিয়ছিল । এতক্ষণে বাকৃশক্তিও তাহার। ফিরিয়া পাইয়াছিল । বলাই ডাকিল, “কানাই-দাg ঘূমিয়েছ ?” তাহার কথার স্বরে মমত ঝরিয়া পড়িতেছিল। কানাইলালের পৃষ্ঠে ক্ষত। সে উপুড় হইয়া শুইয়াছিল। বলাইএর ডাকে সে ধুতিটি বালিশের উপর ভর করিয়া মাথা উচু করিল। ডাগর চোখে বলাইএর মুগের দিকে তাকাইয়া বলিল, “বিছানার উপর বসবি ?—আয় ।” মুহূৰ্বে বলাই ও শান্তি বিছানার উপর উঠিয়া কানাইলালের পৃষ্ঠের দিকে ঝুঁকিয় পড়িল । কানাই ডাকিয়াছে আর কি দূরে থাকা যায় ? কাপড়ের পটিটা রক্তে ভিজিয়া