পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిసిe গিয়াছিল, বলাই দরদের সহিত বলিল, “দেখেছ দিদি, কি কাটাই কেটেছে ! দিদির মত সস্নেহ-স্বরে শান্তি কহিল, “বড় কি জলছে ভাই,—বাতাস করব ?” বালিশে মুখ গুজিয়া কানাই বলিল, “খুবই জল ছিল, বড়-মা বাতাস করতে-করতে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।” শাস্তির আদরে তাহার চোখে জল আসিয়াছিল । মুখে ঢাকা দিয়া সে সঙ্গীদের দৃষ্টি এড়াইতেছিল। বলাই কহিল, “আচ্ছা ? তুমি ঘড়িটা ভাঙতে গেলে কেন ?” • কানাইলালের সদ্যপীড়িত মনে আবার ব্যথা লাগিবার ভয়ে শাস্তি তাড়াতাড়ি বলাইকে ধমক দিয়া কহিল, “ষা: ! নিজের জালায় বঁrচছে না, এখন তোকে তাই শোনাতে বসবে ?” তবু বলাই বলিল, “তোমার মোটে বুদ্ধি-শুদ্ধি নেই। আমাদের খেলার ঘরে নিয়ে গিয়ে যদি ভাঙতে, তা হ’লে কি আর বাবা দেখতে পেত ?” এমন উপদেশটা দিদির ধমকেও সে সাম্‌লাইয়। রাখিতে পারিল না। এবার শান্তির গাম্ভীৰ্য্য৪ টুটিয়া গেল । কথায় মাতিয়া সে নিজেই বলিল, “ঘড়ির মধ্যে শব্দটা কে করে, তাই দেখবার জন্যে বোধ হয় ভেঙেছিলে—ন কানাই ?” কানাই বিমর্ষমুখে কহিল, “হ ।” কানাই তাহার নিজের অপরাধটা তখন একটুএকটু বুঝিতেছিল। বিজ্ঞভাবে শাস্তি বুঝাইয়া কহিল, "ও আর কিছু না, ঘড়ির মধ্যে যে চাকা ঘোরে, তারই দ্বাতোতে আর-একটা ডান্ট লেগে অমৰু শব্দ হয়।” এ-ব্যাপারের বিচার-বিভ্ৰাটটা বলাইকে তখনও ভাবাইতেছিল । সে তাই কহিল, “বড় মারও কিন্তু বড় দোষ । বাবা এই মারলে, তার পর বড় ম আবার কান ধরে সমস্ত উঠানটায় টানাটানি করতে লাগল। দু-জনে মিলে’ কেন মারবে ? একটা ত মোটে দোষ করেছে।” কানাইলালের চোখের কোণে জল আসিয়া জমিতে লাগিল । এততেও তাহার মায়ের নিন্দা সহিল না । সে কহিল, “বড়-মা বুঝি সেইজন্যে মেরেছে ?” প্রবাসী—অগ্রহায়ণ; ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড রাগিয়া বলাই উচু গলায় কহিল, “নী—সেইজন্যে না কি জন্যে ?” কানাই কহিল, “ও বড়-বাবুর উগর রাগ করে ।” কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া ভালো করিয়া বুঝাইয়া দিবার জন্য সে আবার কহিল, “নইলে পটি বেঁধে দেয়— বসে’-বসে’ বাতাস করে ?” মহেশ্বরী বাহিরে দাড়াইয়া-দাড়াইয়া সমস্ত শুনিতেছিলেন। র্তাহার চক্ষু-দুটিও সজল হইয়া উঠিয়াছিল। তিনি হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন, “হারামজাদা ! সেজন্যে মেরেছি না, কি জন্যে মেরেছি ? তুই আমার ছেলের ঘড়িটা ভেঙে গুড়ো-গুড়ো কবুলি—আর রাগ করতে গেলাম বড়-বাবুর ওপরে ?” শিশুদের সমস্ত বিচার-বিতর্ক থামিয়া মধ্যে গৃহটি নিস্তব্ধ হইয়া গেল । মহেশ্বরী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন । বস্ত্র ত্যাগ করিতে-ফরিতে আপন-মনে বলিতে লাগিলেন, “নইলে পটি বেঁধে দেয়— বাতাস করে ?—নইলে যে মরে’ যেতিস, গায়ে কি আর রক্ত আছে ? আমার পাপের ভোগ ছিল নইলে শেষকালে এমন বন্ধনে লোকে পড়ে ?” মহেশ্বরী বকিতে-বকিতে রান্না-ঘরে চলিয়া গেলেন । গৃহের মধ্যে তখন আবার তাহাদের কথা-বাৰ্ত্তা জমিয়া উঠিল। বলাই বলিল, “দিদি ? দেখলে বড় মায়ের কাগুটা ? এখনও পর্য্যন্ত গালি-মন্দ করছে, বড়-মা ভাই বড় নিষ্ঠুর ।” কানাই পাশ ফিরিয়া শুইল । তাহার চক্ষু দিয়া জল গড়াইয়া বিছানা ভিজিতে লাগিল । কানাইলালের মাথায় হাত বুলাইতে-বুলাইতে শাস্তি জিজ্ঞাসা করিল, “ক্ষিধে পেয়েছে ? কিছু খেতে দেননি বোধ হয় ?” কথার গতিটা অন্য পথে ফিরাইয়া দিবার তাহার ইচ্ছা ছিল । কানাইলালের ক্ষুধার উদ্রেক খুবই হইয়াছিল। সে তাহাদের দিকে ফিরিয়া শুইল । কহিল, “বড়-বাবুর সঙ্গে বলছিল, আজ আর কিছুই খেতে দেবে না, ক্ষিধে যা লেগেছে— ।” শাস্তি বলাইকে কহিল, “বলা ! তুই এক কাজ কর । মুহূর্তের