পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* ২য় সংখ্যা ] আমাদের ঘরে সবৃদেওয়ালের উপর হাড়িতে সন্দেশ আছে, থাটের উপর দাড়িয়ে গোটা-চারেক পেড়ে নিয়ে আয় ; আমি চুপি-চুপি গিয়ে রান্নাঘর থেকে চিড়ে নিয়ে আসি ।” দুই ভাই-বোনে সাবধানে খাদ্য-দুইটি আনিয়া কানাইলালকে খাওয়াইল। মহেশ্বরী কানাইকে ছোট একটি টিনের বাক্স দিয়াছিলেন। সে তাহার মধ্যে কাপড়-চোপড় হইতে বই, শ্লেট, সন্দেশ, খেজুর, খেলনা সবই রাথিত । কোমর হইতে সে চাবিকাঠিটা খুলিয়া বলাইকে দিল । বলিল, “বাক্সটা খোল।” বলাই বাক্স খুলিলে কানাই কহিল, “লাটিমটা বের - কর יין বলাই বাহির করিল ৷ “হহমানটা আর-একটা বড় দাড়ানো পুতুল আছে। সে-দু’টোও বের কর।” বলাই বাহির করিল। কানাই কহিল, “লাটিমটা তুই নে, আর পুতুল-দু’টাে দিদিকে দে।” বলাই বলিল, “আমার লাটিম আছে যে !" কানাই কহিল, “নে না—যা” বলি তাই কবু। লাটিম আছে—তা’র র্কাটাটা কি আস্ত রেখেছিস্ ? সে যে ভেঙে গেছে ।” বলাই পুতুল-দু'টি তাহার দিদিকে দিতে গেল। সে হাজার হইলেও দিদি। সহজে ছোট হয় কি করিয়া ? কহিল, “কেন কানাই, তুমি এ-সব আমাদের দিচ্ছ ? আমার ত পুতুল রয়েছে। তুমি সেরে উঠলে ত খেলতে হবে ?” কানাই কহিল, “তুমিও দেখি কম বোকা নও। দু’চারটা পুতুলে কি যে-যার কাজ হয় ? নিয়ে যাও।” শান্তি বলিল, “তুমি কি দিয়ে খেলবে ?” কানাই বলিল, “সে তখন হবে। আমার ত খেলার জন্য বড় ভাবনা পড়ে গেছে ? নাe—বড়-মা এল ईtळ' ।” মহেশ্বরী কানাইলালের জন্য রুটি-তরকারী লইয়া ঘরে আসিতে শাস্তি ও কানাই তাছাদের লভ্য সামগ্রী কাপড়ের মধ্যে লুকাইয়া লইয়া প্রস্থান করিল। বামুন-বাগদী XS) পঞ্চম পরিচ্ছেদ কানাইলালের জ্ঞান-বুদ্ধি যতই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল, ততই সে বলাই ও শাস্তির পাশ্বে দাড়াইয়া এই পরিবার হইতে সকল অধিকারটুকু সমানভাবে ভোগ করিতে চাহিত। সে নিজেকে বাহিরের মানুষ বলিয়া বুঝিত না, তাই ভিন্ন ব্যবহারে ব্যথা পাইত । কিন্তু লাঞ্ছনা ও নিৰ্য্যাতন ভোগ করিবার জন্য তাহার জন্মের গোড়ায় ষে একটা প্রতিকূল শক্তি চাপিয়া বসিয়াছিল, সে-ই এই বালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সকলের ভ্র কুঞ্চিত করিয়া দিত। কেবলমাত্র মহেশ্বরীর প্রগাঢ় অমুরাগই দুঃখের মধ্যে স্বর্থ-স্কপ্তি আনিয়া তাহাকে শান্ত রাখিতেছিল। তথাপি বালকের অজ্ঞতা ও দুর্ব্যবহারের ফলে এমন এক-একটা ক্ষণ আসিত, যে-সময়ে বালকের সপক্ষে বলিবার স্বযুক্তির রিক্ততায় মহেশ্বরীকেও অত্যন্ত চঞ্চল ও বিত্ৰত করিয়া তুলিত। একদিন শিলাবৃষ্টি হইতেছিল। কানাই, বলাই ও শাস্তি দ্বারের নিকট দাড়াইয়াছিল । তাহার এক-একবার দৌড়াইয়া গিয়া রকের উপর শিল সংগ্ৰহ করিতেছিল এবং আবার দ্বারের নিকট আসিয়া দাড়াইতেছিল। একবার একটা বৃহৎ শিল পড়িল । তিন জুনেরই সেট পাইবার ইচ্ছা ; তবু শাস্তি ভিতরেই রহিল, কিন্তু কানাই ও বলাই দুইজনেই তাহার দিকে ছুটিয়া, বলাই যখন শিলটি সংগ্ৰহ করিল, তখন কানাই এক ধাক্কা দিয়া তাহাকে উঠানে ফেলিয়া দিল।. বলাই চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিল । ছেলের কান্না মায়ের কানে পৌছিতে দেরি হইল না। শৈলবালা তাড়াতাড়ি গৃহের বাহির হইয়া জলে ভিজিতে-ভিজিতেই তাহাকে তুলিয়৷ আনিলেন । আঁচল দিয়া সৰ্ব্বাঙ্গ মুছাইয়া জিজ্ঞাস। করিলেন, “কোথায় লেগেছে ?” to বলাই কাদিতে-কাদিতে কহিল, "ওমা, আমি গেছি— আমার হাতখানা ভেঙে গেছে।” শৈলবালা দেখিলেন, সত্যই তাহার দক্ষিণ হুস্তের কজার সন্ধিস্থানটা অত্যন্ত ফুলিয়া উঠিয়াছে । তিনি আহত স্থানে তৈল মালিশ করিয়া দিতে লাগিলেন এবং