পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సా8 প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড স্বখেলু কিছুকাল চুপ করিয়া থাকিয়া কহিলেন, “আমি বুঝেছি সব। নবীন ত আর শমন হাতে করে" জাগৰে না, যে তোমার কানাইকে দিতেই হবে। সে ত তুমি দিলেও পারে—ন দিলেও পারে।” মহেশ্বরী কছিলেন, “না—তাতে আর কাজ নেই! ঘরটা-শুদ্ধ লোক জালিয়ে পুড়িয়ে খেলে, কাহাতক লোকে সহ করবে ?" স্বখেদু কছিলেন, “বলাইএর যদি একটা ভাই থাকৃত— জার দুই হত, তার জন্যে ত কোন নবীনকেও খুঁজে পাওয়া যেত না। রাগের মাথায় ছ'-এক কথা বলি বলে’ কি তোমার অভিমান করা উচিত ?” মহেশ্বরী কিছু বলিলেন না । পরদিন যখন সংবাদ আসিল, নবীন তাহার বাড়ীতে বা কৰ্ম্মস্থলে নাই, মনিবের কার্ধ্যে স্থানান্তরে গিয়াছে, তখন মহেশ্বরী ইপি ছাড়িয়া বঁচিলেন। তাহার পিত্রালয়ে যাওয়াও স্থগিত হইল। এক-জায়গার মাটির প্রতি ওঁহার বিতৃষ্ণ অকস্মাৎ দূর হষ্টয়া গেল। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ নিত্যসঙ্গীর প্রতি ভালবাসা শিশুদের মনে বয়স্কদের তুলনায় গভীর। তাই কখনও বয়োধর্থের গুণে হঠাৎ একে অঙ্গকে আঘাত করিয়া বসিলে সেই আঘাতটাই আবার নিষ্ঠুরের মত তাহারই শক্তি পরীক্ষা করিতে উষ্ঠত হয় । বলাইকে ফেলিয়া দেওয়ার পর হইতে কানাইএর অন্তরে এমন একটা আঘাত বাজিয়া উঠিয়াছিল যে, প্রাণের কোন নিবিড় অম্বুরাগের স্পর্শে সে তাহার সঙ্গীটিকে সস্তুষ্ট করিতে পারিবে ভাবিয়া-ভাবিয়া কোন কুল-কিনারাই পাইতেছিল না। কাল হইতে বলাই তাঁহাদের ঘরে শয্যায় শুইয়া আছে। কানাইলালের সে-গৃহে যাইতে বরাবরই নিষেধ ছিল ; সেখানে জল থাকিত, স্বথেন্দুর খাদ্যাদিও থাকিত। বন্ধুকে চোখের দেখা দেখিবার উপায়ও তাহার নাই । কানাই এ-দুইদিন ছট্‌ফট্‌ করিয়া বেড়াইতে লাগিল, কি ছলে সে বলাইকে দেখিতে পাইবে এই ছিল তাহার একমাত্র, চিন্তা । শাস্তির কাছে জিজ্ঞাসা করায় সে বলিয়াছে যে, ব্যথাটা খুবই বাড়িয়াছে। রায়া-ঘরের দরজার কাছে দাড়াইয়া সে আজ দুইদিন শৈলবালাকে চুণ-হলুদ গরম করিয়া লইয়া বলাইএর গৃহে ঢুকিতে দেখিতেছে। এই সামান্য ঔষধে বন্ধুর সেবায় তাহার মন উঠিতেছিল না। “চুণ-হলুদে নাকি আবার ব্যথা ভালো হয় ?” তাহার মনে একটা বুদ্ধি যোগাইল। তাহাদের বাড়ীর কিছু দূরে পরেশ নন্দী থাকিত . সে অনেক মন্ত্রতন্ত্র জানিত। সে প্রায়ই দেপিত, ঐরকমের মচ কা ঘী, ফুল, ব্যথা ইত্যাদি লইয়া অনেকে তাহার দ্বারে ঝাড়া-ফুকা করিতে আসিত এবং অনেকে বেশ ফলও পাইত। সে কাহাকেও কিছু না বলিয়া চুপিচুপি পরেশের কাছে গেল। পরেশ তখন ধুনী বুনিতেছিল। উচু হইয়া তাহার সম্মুখে বসিয়া সে অনেকক্ষণ গালে-মুখে হাত দিয়া তাহার বুনন-কাৰ্য্য দেখিতে লাগিল। পরেশ এই প্রতিবাসীটিকে চিনিত । এবং সে যে তাহার , মনিবমাতা মহেশ্বরীদেবীর অতি প্রিয়পাত্র তাহাও সে জানিত। কানাইলালকে অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে দেখিয়া সে নিজেই উদ্যোগী হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি কানাই-বাৰু! চুপ করে বসে যে ! কি মনে করে’ ?” - ইতস্ততঃ করিয়া কানাই বলিল, “তুমি খুনলী বুনছ যে—” “তাতে কি হয়েছে, বলোইন—বুনতে-বুনতে শুনব ।” কি করিয়া কথাটা ফেলিবে কানাই ভাবিতে লাগিল । পরেশ কহিল, “লজ্জা কি ? বলে’ ফেল না শুনি । আমি কি পর ?” টোক গিলিয়া কানাই বলিল, “তুমি অনেক মন্তরতন্তর জানে— 1" “তা ত জানি ।” কানাই ঘুরিয়া পরেশের পিছনে আসিয়া দাড়াইয়া লজ্জিতভাবে বলিল, “মচ কা ঘার মন্তরটা যদি আমায় শিখিয়ে দাও।” পরেশ হাসিল । জিজ্ঞাসা করিল, “কেন—সে-মস্তর নিয়ে কি হবে ? কা'কে চিকিৎসা করবে ?" গভীরভাবে কানাই কহিল, "শেখা থাকৃবে।”