পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১২ শ্রমজীবীগণের কানাডা-প্রবেশেব নিম্নলিখিত কারণগুলি পাওয়া যায় । ৫ (১) নিজ স্বার্থ-সম্পাদনের জন্য কতিপয় জাহাজকোম্পানী ও তাহাদের প্রতিনিধিগণের নানা চেষ্টা। (২) কানাডাস্থিত কতিপয় ব্যবসায়ীর প্রচার কার্ঘ্য ; এই ব্যবসায়ীরা সস্তায় শ্রমজীবী পাইবার জন্ত কানাডার আর্থিক সচ্ছলতা বর্ণনা করিয়া মুদ্রিত পত্র প্রচার করিয়াছিল। (৩) কানাডার অর্থ শোষণ করিবার জন্ত যাহারা নিজ দেশবাসীগণকে তথায় আনিতে চাহিয়াছিল, তাহাদের চেষ্টা । ইহা এস্থলে উল্লেখ করা উচিত যে, প্রাচ্য-দেশীয় শ্রমজীবীদের আগমন কমাইয়া দেওয়ার উদ্দেশ্রেই পূৰ্ব্বোক্ত অস্থসন্ধান প্রবর্তিত হইয়াছিল এবং গোড়া হইতেই বাধামূলক আইন কমিশনের কৰ্ত্তাদের মনে ছিল। এই হেতু পূৰ্ব্বোক্ত অনুসন্ধানের ফল রাষ্ট্রনীতি দ্বারা অল্পাধিক রঞ্জিত হওয়া সম্ভব । যেসমস্ত আত্মীয়-স্বজন কানাডায় যাইয়া কিঞ্চিৎ সৌভাগ্য লাভ করিয়াছিল এবং ঐ-দেশের শিল্পজনিত অর্থাগমের সুবিধা দেখিতে পাইয়াছিল, তাহাদের সহিত পত্রব্যবহার করিয়া ঐ-দেশে যাইবার জন্য যে প্রবল ইচ্ছা জন্মে, উহাই ভারতীয়দের কানাডা-যাত্রার সর্বপ্রধান কারণ। বিদেশ পৰ্য্যটল্প-স্পৃহা ও অর্থাগমের স্থবিধা-দর্শন, এই দুইটিতে মিলিয়া উহাদিগকে কানাডায় প্রবাসী হইতে উৎসুক করিয়াছিল । উহারা এমন এক সৌভাগ্যময় ভবিষ্যৎ স্পষ্টরূপে দেখিতে পাইয়াছিল যে, তাহারা নিজ-নিজ সম্পত্তি বা ঘরবাড়ী বিক্রয় করিয়া অথবা বন্ধক দিয়াও পথেৰ খরচ সংগ্ৰহ করিয়াছিল। ভারতবর্ষে স্বদের হার অত্যস্ত বেশী; বিশেষভাবে অল্প টাকার স্বদ অত্যন্ত চড়া । তাহাদের অনেকে শতকরা ১৫ হইতে, ২০ পৰ্য্যন্ত স্বদে টাকা কর্জ করিয়াছিল। কিন্তু তাহদের এই আশা ছিল,যে অল্প সময়ের মধ্যে অর্থ উপার্জন করিয়া দেশে ফিরিয়া আসিয়া ঋণ পরিশোধ করিবে । 5. Canada sessional Papers, 1907-08, Vol 17 No. 36a, 1908, p. 8. প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড প্রায় কোন ভারতীয়ই কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করিতে যায় নাই। তাহাদের উদ্দেশু ছিল কিছু অর্থসঞ্চয় করিয়া কয়েক-বৎসর পরে দেশে প্রত্যাবর্তন করা । আমেরিকা-প্রবাসী, ইটালী, অষ্ট্রিয়া ও অন্তান্ত যুরোপীয় দেশের শ্রমজীবীদের মধ্যেও এই উদ্দেশুষ্ট রহিয়াছে। অবশু কানাডায় আসিবার পর তাহাদের কেহকেহ তাহাদের মত পরিবর্তন করিয়া ঐ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করিতেও ইচ্ছুক হইয়াছে। বাধা-প্রদান পূৰ্ব্ব হইতেই জাপান ও চীন-দেশীয় আগন্তুকদের সম্বন্ধে কানাডাবাসীদের মন বিরূপ হইয়া উঠিতেছিল ; তাহার উপর ১৯৭৭ ও ১৯০৮এ যে বড়-বড় দুই দল ভারতবাসী কানাডায় প্রবেশ করে, তাহাদিগকে দেখিয়া সঞ্চিতবিদ্বেষ নূতন করিয়া জাগিয়া উঠে। তাহারি ফলে ঐবিষয়ে তদন্তের জন্য ১৯০৭ সালের রাজকীয় কমিশন বসান হয়। ঐ কমিশন প্রাচ্য-দেশীয়, তথা ভারতীয়, প্রমজীবীগণের প্রবেশ রোধ করিতে বা সংযত করিতে আইন-প্রণয়নের উপদেশ দেয়। আইন-প্রণয়নের পূৰ্ব্বে মিঃ ডব্লিউ,এল,ম্যাকেঞ্জি-কিং (শ্রমবিভাগের সহকারী সচিব,) . ১৯০৮ সালে বিলাতে প্রেরিত হন। ঐসময়ে কানাডার ও বিলাতের গবর্ণমেণ্টের যে-মন্ত্রণ ও পত্র-ব্যবহারাদি চলিয়াছিল, তাহার বিবরণ গোপনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রহিয়াছে। ৬ কিন্তু ঐ মন্ত্রণাদির ফলেই প্রকৃত-পক্ষে কানাডায় ভারতবাসীদের প্রবেশ বন্ধ হয়। কানাডা গবর্ণমেণ্টের মতে বাধামূলক আইন করিবার উদেশ্ব (১) ভারতীয়গণকে কানাডার দুরন্ত আবহাওয়াজনিত কষ্ট হইতে রক্ষা করা । (২) জাতি-বিদ্বেষ ও তজনিত গোলমাল এড়ানো । (৩) কানাডার শ্রমজীবীদের জীবনের ও পারিবারিক কৰ্ত্তব্যের এবং সামাজিক দায়িত্বের উন্নত আদর্শ রক্ষা করা । নিম্নলিখিত বিশিষ্ট উপায়গুলি অবলম্বিত হইয়াছিল । প্রথমতঃ যেসমস্ত জাহাজ-কোম্পানী ভারতের (*) Canada Sessional Papers, 1907-08 Wol 17, no. 36a, p. 7.