পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૨ উপর ঘোমটাটা টানিয়া দিয়া মাথাটা পিছনে ঘুরাইয়া, গলাটা নামাইয়া বলিল, “হাম কি জানি।” মুন্না ফিরিয়া আসিয়া আর আধ গেলাস শেষ করিল, তাহার পর স্বনরাকে বলিল, “আচ্ছ বলে যা, দেখি আর সব মেলে কি না।” স্বনরা কৌতুহলন্তব্ধ সভার ঔংস্থক্য বাড়াইয়া বলিতে লাগিল—“আমাদের গ্রাম থেকে ১০ক্রোশ দূরে মবোলিতে আমার বিবাহ হয়। সে প্রায় ১০ বৎসরের কথা । নেহাৎ ছেলেমানুষ ছিলাম বলে সব কথা মনে পড়ে না । মনে পড়ে শুধু শ্বশুরবাড়ীর সাম্নে প্রকাও বটতলাটার নীচে আমার পাঙ্কীটা নেমেছিল । রাস্তায় ভয়ানক বৃষ্টি হয়েছিল বলে কি-একটা ছুতো করে’ বাবা শ্বশুরের সঙ্গে খুব একচোট ঝগড়া বাধিয়ে দিয়েছিলেন এবং শ্বশুরের পক্ষ থেকে মারামারির ভয় দেখিয়ে আমার জবরদস্তি বিবাহ দেওয়া হয়েছিল। সেই তুমুল বর্ষ। আর ভীষণ ঝগড়া ও গোলমালের রাতের সব কথা মনে থাকা সম্ভব নয়, কিন্তু মুন্নাকাক্কা বোধ হয় এইসব পরিচয় থেকেই টের পাবেন যে, আমি মিথ্যা কথা বলছিনে। সে-সময়ের মুল্লা-কাক্কার 'vচহারাটা বেশ মনে পড়ে—কেননা উনিই আমায় পাৰী থেকে চ্যাংদোলা করে’ গাজুরি-বাড়ীর মধ্যে নিয়ে গিয়ে ছিলেন,—ওঁর চেহারা তখন ছিল পালোয়ানের মত—গালে গালপাট্ট দাড়ী ছিল, হাতে লোহার একটা বাল ছিল ; আমার বেশ মনে পড়ে, প্রাণের আশা ছেড়ে দিয়ে আমি চীৎকার করতে কন্নুতে ওঁরই বুকে মুখ গুজে ছিলাম। আজ আমায় ভগবান ভুলেছেন, স্বতরাং সবাই ভুলবে; তবে আমি যে-বুকে একদিন আশ্রয় পেয়েছিলাম, তার আশা কখন ছাড়ব না।” বুড়া মুল্লা আর থাকিতে পারিল না ; হাত দুটা বাড়াইয়া স্থনরার পানে ছুটিল, বলিল, “আবার তোকে বুকে নিই আয় মতিয়া, আর সে-সব পুরোনো কথা তুলে আমায় পাগল করিসূনে—” হলুমান মাহতে তাহাকে ধরিয়া ফেলিল, কহিল, "মাথা ঠাণ্ডা কবু দোস্ত, আরে কে ও তা কে জানে ? সেসব কথা অন্য লোকে জেনে নিতে পারে না ?” সভার দিকে চাহিস্থ জিজ্ঞাসা করিল, “কি হো ভাই সব, ঠিক বোলতানি কি না ?” সকলেই সমস্বরে বলিল, “ঠিক বাৎ, প্রবাসী—কাৰ্ত্তিক, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড বন্ধত ঠিক, বহুত ঠিক"; একজন প্রাচীন এপর্য্যন্ত রায় দিল “আজ-কালকার জমান, কত লোক কত মতলবে ঘুরছে যে জানে ? লচ্ছি মাইয়ের লছমীর মত চেহারা দেখলে অনেক ছেলেই এ-সব কথা প্রাণ দিয়ে খুজে বার করতে পারে। আমি জিজ্ঞাসা করি, যদি বেই করেছিলি ত এতদিন কোন জাহাঙ্গমে, নিজের সমর্থ পরিবার ছেড়ে, ছিলি রে হতভাগা ?” স্থনর বলিল, “সে কথাও বলছি –বিয়ের প্রায় ৪ বৎসর পরে—আমার বয়স তখন ১৩ কি ১৪ হবে-চাবাগানের এক সেপাই আমাদের গ্রামে এসে উপস্থিত হয় । এসে গ্রামের যে জোয়ান-জোয়ান ছেলেগুলো ছিল, সেগুলোকে খুব ভজাতে আরম্ভ করলে। গ্রামের একপ্রাস্তে সে বাসা নিয়েছিল। দলে-দলে আমরা সেখানে জুটুতুম, তার পয়সায় খাওয়া-দাওয়া, নেশা-ভাঙ্গ, কর্তুম, আর চা-বাগের গল্প শুনতুম। শিকারের দল যখন বেশ জমে এসেছে, সেপাইট একদিন সকলের সাম্নে একটা প্রকাও খাতা খুলে ধরলে আর বললে, 'নাও, একে-একে সই কর ; দু-বছরের সর্ত, তবে আমি যখন মাঝখানে আছি, যার যখন খুনী ছেড়ে চলে আসতে পারে, সাহেবকে আমি মুঠোর মধ্যে রেখেছি—উঠতে বললে ওঠে, বসতে বললে বসে। আর বেশি দেরী করা চলে না, কাল ভোরের গাড়ীতেই রওনা হ’তে হবে। কাল সাহেবের তার এসেছে—আমার জন্তে কাজকৰ্ম্ম সব বন্ধ। আরও অনেক কথাই বললে, অনেক লোভই দেখালে, সব এখন মনে পড়ে না । সেদিন আমাদের নেশার মাত্রাট বেশী হয়েছিল, প্রায় সবাই সই করলে ; যারা করলে না, তারা যাতে গ্রামটাকে সতর্ক করে’ না দিতে পারে সেজন্যে বেশী আগ্রহ করে তাদের নেশাট আরও বাড়িয়ে দেওয়া হ’ল । সকালের গাড়ীতে আমরা ক’জন রওনা হ’লাম । “চা-বাগানে এসে দেখলাম ৬ বৎসরের জন্তে সকলের পায়ে শিকল অঁাটা ! আমি খালি সাবুত দিতে বসেছি ; সেখানে ৬টা বৎসর কি দুঃখে কি যন্ত্রণায় কেটেছিল তা আর বলে’ কি হবে ? মোট কথা, মহাবীরজীর কৃপায় ৬টা বৎসর জেলখাটfর মত কাটিয়ে দিলাম। অনেক ফন্দি করে আবার ।