পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8९ যাই, তখন বহু বৎসর পরে একত্র আহারের পর নানা কথা-বাৰ্ত্তার মধ্যে নিম্নে বিবৃত ঘটনাটি তিনি আমাকে বলেন । বরাবরই আমার ইচ্ছা ছিল, তিনি ইহা লিথিয়া প্রকাশ করুন । কিন্তু এতদিন কোন কারণে র্তাহাকে কোন অনুরোধ করি নাই । এক্ষণে আমার আহরোধে তিনি ইহা লিথিয়া দিয়াছেন । যে-কারণে আমি তাহাকে ইতিপূৰ্ব্বে অনুরোধ করি নাই, তাহার প্রভাব তাহার মনের উপর এখনও থাকা সত্বে ও ভিনি ইহা লিখিয়া দেওয়ায় তাহাকে কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি —ীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ] স্কুলের ডেপুটি ইনেসপেক্টারি করিতাম। জেলার মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতাম, বেশীর ভাগ গরুর-গাড়ীতে। “ভোজনং যত্র তত্ৰ শয়নং হুটমন্দিরে" এইভাবেই প্রায় মফঃস্বলে জীবন যাপন করিতাম। কখনও রাজভোগ কখনও বা অনশন, কখনও জ্যোৎস্নার আলোকে শালজঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্য দিয়া যাইতে যাইতে বিপুল আনন্দ অনুভব, কখনও বা নিবিড় অন্ধকাৰুে, জঙ্গলে পথ হারাইয়া ব্যাঘ্র-ভল্লুকের সন্নিকটে রাত্রি যাপন, কখনও সাধু সঙ্গ, কখনও দস্থ্য-তস্করের সহিত সাক্ষাৎ, কখনও আতিথেয়ভার উচ্চ আদর্শ দেখিতে পাইয়াছি, কখনও বা গৃহস্থের গৃহ হইতে বহিষ্কৃত হইয়া উপবাসে রাত্রি যাপন করিয়াছি । আজ পাঠকুবর্গের নিকট একটি অভূত আতিথেয়তার পরিচয় দিব । * সে আজ প্রায় ২৫ বৎসরের কথা—একবার র— জেলায় একটি স্কুল দেখিতে গিয়াছিলাম। স্কুল দেখিয়া ৮৯ মাইল অন্তরে একটি বাঙ্গালায় রাত্রি যাপন করিৰ মনস্থ করিয়াছিলাম। বেলা আন্দাজ ৩টার সময় সেই বাঙ্গালায় যাইব বলিয়া গরুর গাড়ীতে উঠিলাম। পশ্চাতে আর-একটি গাড়ীতে একজন সব ইনেসপেক্টার ছিলেন, তিনি একজন হিন্দুস্থানী ব্রাহ্মণ। খুব নিষ্ঠাবান হিন্দু। বৈশাখ মাস। কিছুদূর আসিতে না আদিতে আমার নিদ্র আকর্ষণ হইল। আমি ঘুমাইতে লাগিলাম। গাড়ী মন্থরগতিতে চলিতে লাগিল। হঠাৎ বেলা পাচটার সময় মেঘের গুরু গর্জনে ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল। উঠিয়া প্রবাসী—অগ্রহায়ণ, ১৩৩১ [ ২৪শ ভাগ, ২য় খণ্ড দেখি চতুৰ্দ্দিকু নিবিড় মেঘাচ্ছন্ন-প্রকৃতির ভয়ঙ্কর মূৰ্ত্তি। অতি শীঘ্র ঝড় ও তাহার সহিত শিলাবৃষ্টি ও জল আরম্ভ হইল—মুহুমূর্খ বজ্রপাতও আরম্ভ হইল –নিকটে কোথাও আশ্রয় দেখিতে পাইলাম না । গাড়োয়ানকে জিজ্ঞাসা করিলাম, নিকটে ধোন গ্রাম আছে ? সে বলিল, রাস্তার বামদিকে প্রায় এক মাইল যাইলে একটি গ্রাম পাওয়া যাইবে । আমি বলিলাম, যেমন করিয়া পার সেইখানে চল, এখানে থাকিলে মৃত্যু নিশ্চয়। গাড়োয়ানও ভয় পাইয়াছিল । সে প্রাণপণে গাড়ী ইকাইয়া চলিতে লাগিল। পশ্চাতে সব-ইনেসূপেক্টার বাবুও আসিতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ পরে অতি কষ্টে আমরা একটি গ্রামে উপস্থিত হইলাম • তখনও তুমুল ঝটিকা বহিতেছে। এক লম্ফ দিয়া গাড়ী হইতে অবতরণ করিয়া সিক্তবস্ত্রে সম্মুখে যে গৃহটি দেখিলাম -সেই গৃহেই প্রবেশ করিলাম-বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ না করিয়া-বাহিরেই একটি গোয়াল-ঘরে প্রবেশ করিলাম। সব-ইনেস্পেক্টার-বাবুটিও আমার পথ অনুসরণ করিলেন । ঘরটি গোয়াল ঘর হইলেও বেশ পরিষ্কৃত-পরিচ্ছন্ন ছিল—সেইখানেই দুইখানা ভিজা কম্বল পাতিয়া বসিলাম —অদ্যান্য জিনিযপত্রও ক্রমশঃ গাড়ী হইতে উঠাইয়া আনা হইল । যাহা হউক একটি আশ্রয় পাইয়া বড়ই আনন্দিত হইলাম। তখন অন্ধকার হইয়াছে—কোন গতিকে হারিকেন-লণ্ঠন জালিয়া—সেইখানে বেশ আড্ডা জমাইয়া দিলাম। বাড়ীর কৰ্ত্তার কোন, সন্ধান পাইলাম না । কেই বা সে দুর্ধ্যোগে বাটীর বাহির হইবে ? কিছুক্ষণ পরে ঝড় থামিল ও বৃষ্টিও অনেকটা কম হইল। গাড়েয়ান বলিল, এটি একটি মুসলমানের গ্রাম, এখানে একটিও হিন্দু নাই । আমার সবইনস্পেক্টের বাৰু ঈষৎ বিচলিত হইলেন—সন্ধ্যা-আহ্নিক হইবার আশা নাই। আহারেরও কোন বন্দোবস্ত হইতে পারে না। প্রায় ১ ঘণ্টা বসিয়া থাকার পর বাড়ীর কৰ্ত্ত দেখা দিলেন। র্তাহার হৃষ্টপুষ্ট দেহ, সৌম্য মূৰ্ত্তি, শুভ্ৰ কেশ, শুভ্ৰ শ্মশ্র ও শুভ্ৰ বেশ দেখিয়া আমার মনে অাশার সঞ্চার হইল। মুসলমান সাধারণতঃ যে-প্রকার কাটখোট্টা-রকমের হয়—তাহার কিছুই দেখিলাম না।