পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুধা কিরণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ-বছর বড়দিনের ছুটতে কলকাতায় খুব ধুমধাম। একজিবিশনের দরুন বাইরে থেকে এখানে লোক আসছেনও খুব। আমার মামা রাচীতে ওকালতি করেন, তার কাছ থেকে হঠাৎ এক চিঠি পেলাম, তিনি সপরিবারে এই ছুটিতে কলকাতায় আসছেন ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই, মাস দুই থাকবেন, একটা ছোট বাড়ী ভাড়া করে রাখবার জন্ম আমায় লিখেছেন । একে কলকাতার বাড়ী ভাড়া পাওয়া দায়, তার উপর এসময়ে, আমি তো মুস্কিলেই পড়ে গেলাম। আমার মামার পরিবারটি খুবই ছোট অর্থাৎ মাম, মামীম ও তাদের মেয়ে বিভা, কাজেই ভরসা রইল—খুব ছোট বাড়ী পেলেও চলবে । বিভা আমার সমবয়সী, সে আসছে জেনে বেশ খুলী হ’য়ে উঠলাম, আর তখনি বাড়ী খুজতে বেরিয়ে পড়লাম। কয়দিন ঘুরে কোন বাড়ীর সন্ধান পেলাম না, আজ ২৯শে নভেম্বর, মাত্র আর একদিন বাকী ডিসেম্বর মাস পড়তে, সকালে বসে ভাব ছি—কি করব, এমন সময় দেখলাম আমাদের পাশের বাড়ীর সাম্নে একখানা গরুর গাড়ী-বোঝাই জিনিষ । বাক্স, আলমারী, বিছানা, বালতী, আল মারী, আল না, চেয়ার, যতদূর সম্ভব বোঝাই করা হয়েছে। গাড়ীটা রওনা হ’য়ে গেলে পর একখানা ভাড়া-গাড়ী এসে দাড়াল ; তার ছাতেও কিছু জিনিষ চড়ল, একটা ছোট বইএর আলমারী, সেলাইএর কল ইত্যাদি বোঝাই হ’লে পর, এতে আমাদের প্রতিবেশী অতুল-বাবু সপরিবারে অর্থাৎ তার মেয়ে ও ছোট ছেলেটি চড়ে রওনা হ’লেন। বুঝলাম র্তারা এ-বাড়ী ছেড়ে অন্ত বাড়ীতে অথবা বিদেশে চলে’ গেলেন । ওঁরা চলে যাওয়ার অল্প পরেই বাড়ীওয়ালার লোক যখন বাড়ী বন্ধ করছে, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করে’ জানলাম, ইচ্ছা কবুলে বাড়ীটা ভাড়া পাওয়া যেতে পারে। আমি ত বেঁচে গেলাম,বাড়ীটা ছোট হ’লেও ঠিক আমাদের পাশেই, আর বেশ নতুন । তখনি সেটা দেখতে গেলাম। বাড়ী,বেশ পরিষ্কার রয়েছে, দেখলে একটুও মনে হয় না যে ভাড়াটে বাড়ী। উপরে ২ খন ঘর—ছোট ঘরথানিতে দেখলাম খানকয়েক ছেড়া চিঠি, কয়েকখানা পুরানো খবরের কাগজ, কয়েকটা মাথার র্কট ও সেফ টিপিন ছড়িয়ে পড়ে আছে শেলফে । বুঝতে পারলাম মেয়েটি এই ঘরেই থাকৃতেন । বাড়ী নেওয়৷ স্থির করে তখনি চাকর ডকে পরিষ্কার করতে বলে দিলাম, অবিপ্তি ভাড়া একটু বেশীই লাগল। আজ ৪ঠা ডিসেম্বর, মামারা এসেছেন আজ সকালে । বিকালে আমি কলেজ থেকে ফিরে’ ওবাড়ীতেই চা খেতে গেলাম। বিভা চা করে’ সকলকে খাইয়ে আমায় উপরে তার ঘরে নিয়ে গেল গল্প করতে। বিভাও সেই ছোট ঘরখানা নিয়েছে দেখলাম। বাবা, মা আর মামারা নীঠে বসে গল্প স্বরু করলেন। বিভা বললে,"শচীদ তুমি কি এঘরগুলি সব নিজে দাড়িয়ে পরিষ্কার করিয়েছিলে ?” আমি বললুম, “হ্যা”। সে জিজ্ঞাসা করলে, “ৰ্তারা কোথায় গেছেন জানো,যারা এই বাড়ীতেছিলেন” ? আমি বললাম,“জানিনে ত । তাদের সঙ্গে আমার বিশেষ আলাপ ছিল না।” বিভা বললে, “আজ আমি আমার ঘর-গুছোবার সময় শেলফ পরিষ্কার করতে গিয়ে সব-উপরের তাকে হাত দিতেই কয়েকটা শুকনো রজনীগন্ধ ফুল ঠেকৃল, আমি ভাব লাম এখানে ফুল এল কোথা থেকে ? একটা চেয়ারে চড়ে দেখলাম, একখানা খাতা রয়েছে, তার ভিতরেও কয়েকটা শুকনো ফুল রয়েছে। বেশ কাচ হাতের লেখায় আধখানি খাতা ভরা, তার পর শেষে কয়েক লাইন পরিষ্কার মেয়েলী হাতের লেখা । এ কোন তরুণ হৃদয়ের করুণ কাহিনী 7 ছেলেটির সঙ্গে আলাপ করবার আর সময় নেই, মেয়েটির সঙ্গে বড় আলাপ করতে ইচ্ছা করছে, তাদের ঠিকানা খুজে’ বা’র করা যায় না কি ? এস আগে তোমায় পড়ে শোনাই ।” @