পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] শোবার বন্দবস্ত হ’ল। ঘরখানার পূব ও দক্ষিণদিক্‌ খোলা, ছুদিকেই দুটি বড় জানালা আর সেই দুই জানালা জুড়ে’ আমার মস্ত খাট । আমি শুয়ে শুrয় সারাদিন রাস্তা দেখতাম । কতরকম লোক চলেছে রাস্তা দিয়ে, কতরকম গাড়ী-ঘোড়া । মন্ট, সারা দিনই প্রায় আমার কাছেই থাকৃত, তাকে গল্প বলতাম তৈরী করে করে । চুপ করে’ শুয়ে থেকে থেকে বোধ হয় আমার ভাববার আর তৈরী করবার শক্তিটা বেড়ে গিয়েছিল। আমাকে দেখতে আসতেন কাকীমার ভাই যতীনমামা। তিনি বেশ বড় ডাক্তার। রোজই সন্ধ্যাবেলা খুব জর আসত। মণ্ট, আমার সব কাজই করে' রাখত,—যখন যা চাই, ও যেন বল্বার আগেই বুঝতে পাবৃত। মাত্র সাত বছর বয়স ওর কিন্তু আমার সেবা কবৃত ঠিক একজন বড় নার্স-এর মতন। যদি কোন দিন ওকে না বলে’ কাকীমাকে কিছু করতে বলতাম ওবেচার অভিমান করে সে বেলাই আর আস্ত না আমার ঘরে । আমাদের দুভাইএর বসে বসে কত কথাই হ’ত । বড় হ’য়ে আমরা কি হ’ব তাই । আমরা ঠিক করেছি আমরা ইঞ্জিনীয়ার হ’ব । মন্ট, কোথা থেকে একখানা ভাঙা কাচি, কতকটা স্থত, খানিকট গামছা, একটু মোমবাতির টুকরা, কতকগুলি ভাঙা সাবামের বাক্স নিয়ে এসেছে, আমি শুয়েশুয়ে তাই দিয়ে ছোট-ছোট বাড়ী, নৌকা, গাড়ী তৈরী করতাম আর মণ্ট,আলমারীতে সাজিয়ে রাখত। এইরকম করে প্রায় মাস খানেক কাটুল। যতীন- . মামাকে জিজ্ঞাসা করলাম আর কতদিন শুয়ে থাকৃতে হবে, তিনি বললেন আর বেশী দিন নয় । তখন পূজার ছুটি, রাস্তায় গাড়ী ঘোড়ার ভিড়, লোক চলাচল সবই একটু কম। এই সময়ে আমাদের বাড়ীর দক্ষিণ দিকের গলির শেষ বাড়ীতে কা’র নূতন ভাড়াটে এলেন। মণ্ট, এসে খবর দিলে, তারা বেহারী। আস্তে আস্তে পূজার ছুটিও শেষ হ’য়ে গেল। একদিন Iাস্তার দিকের জানালার ধারে সরে’ বসে’ আছি, দেখলাম ময়েদের স্কুলের গাড়ী এসে দাড়াল, আর আমাদের গলির শষের সেই বেহারীদের একটি ছোট্ট মেয়ে গিয়ে গাড়ীতে ডুল। গাড়ী চলে গেল । স্বধা ՀԳ বিকাল বেলা মন্ট, জানুলা দিয়ে চিনেবাদাম কিন্‌ছে আমিও পাশে বসে আছি, এমন সময় স্কুলের সেই গাড়ীখান এসে দাড়াল। দরজার পাশে একটি স্বন্দর-দেখতে মেয়ে বসে আছে, খুব ফর্স। রং, কাল চুলগুলি একটি লাল ফিতে দিয়ে বাধা, গলায় একটি সোণার হার আর কাণে দুটি মাকৃড়ি, সে তার হাতের বইএর দিকে কি জানি দেখ ছিল । চীনে বাদামওয়ালা সবে চলে যাচ্ছে এমন সময় মন্ট, চেচিয়ে উঠল “এই! আর-এক পয়সার দাও” বলেই সে পয়সা আনতে দৌড়ল। মেয়েটি তার চীৎকার শুনে আমার জানালার দিকে চাইলে । কি চমৎকার চোখ দুটি তার : আমি তার দিকে চাইলাম, সেও চাইলে আমার দিকে, বেহারী মেয়েটি নেমে এল, গাড়ীও ছেড়ে দিলে । সে আমার দিকে তাকিয়েই রইল ; মণ্ট এসে চিনেবাদাম কিন্‌লে, কিন্তু আমার আর সেদিন চিনেবাদাম খাওয়া হ’ল না, সমস্তক্ষণ তার চোখদুটি ভাসতে লাগল মনের ভিতর । পর দিন দশটার সময় আস্তে-আস্তে সরে জানলার ধারে গিয়ে বসলাম । গাড়ী এল। সে দরজার পাশে বসে আছে, আজ আর সে তাকাবে না জানলার দিকে ঠিক করেছে বলে মনে হ’ল । বেহারী মেয়েটি যেই গাড়ীতে চড়ল গাড়ীও ছেড়ে দিলে। সেও এইবার চট করে জানলার দিকে চেয়ে নিলে, আমার চোখে চোখ পড়তেই চোখ নামিয়ে নিলে । তার পর থেকে রোজ সকাল-বিকাল আমার জানলার ধারে সরে বসা অভ্যাস হ’য়ে গেল। মণ্ট, একদিন বেহারী মেয়েটির বাড়ী গিয়ে তার সঙ্গে ভাব করে এসে বললে “মেয়েটির নাম কৃষ্ণ, তার বাবা শেয়ালদার রেলের একাউণ্টাণ্ট । বেশ লোক তারা, কৃষ্ণার মা তাকে প্যাড়া খাইয়েছেন, আরও কত কি । 哆 এই সময়ে আমার দশ-পনর দিন রে-পরে খুব বেশী জর হতে লাগল। যেদিন খুব জর বাড়ত মন্ট কে দিয়ে জানলার পাশে একখানা বড় আয়না টাঙিয়ে দিতাম, তাতে শুয়ে-শুয়েই তাকে দেখতে পেতাম, সে কিন্তু একটু যেন খুঁজত আমাকে জানলায় না দেখে ।