পাতা:প্রবাসী (চতুর্বিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] বিবিধ প্রসঙ্গ—বিপ্লব-বাদের উচ্ছেদের উপায় ২৬৯ ভয়ের ভীতিপ্রদতা লোপ পায়। সহস্যে লোকেরা বাঘভালুককে যত ভয় করে, বস্ত লোকেরা তত করে না । বস্ত লোকেরা অনেকে হিংস্ৰ জন্তুর হাতে মারা পড়ে, তবুও তাদের ভয় কম। সহর্যেরা হিংস্ৰ জন্তুর দ্বারা হত হয় না, তবুও তাদের আতঙ্ক বেশী । যথাক্রমে অভ্যাস ও অনভ্যাস ইহার কারণ। প্রবল ও ভয়ঙ্কর মাহুষের দ্বারা নিগ্রহ-সম্বন্ধেও, মানব-প্রকৃতির মধ্যে, স্বতরাং বাঙালীর প্রকৃতির মধ্যেও, একটা অভ্যাসলন্ধ নিশ্চিস্থত।. একটা স্থিতিস্থাপকতা ও অদম্যতা আছে। কোন-প্রকার কঠোর শাসনে, জুলুমে, অত্যাচারে মাহষ প্রথমটা ভয় পাইলেও অচিরে সে ভয় অতিক্রম করিয়া উঠে । এমন ষে নিরীহ বাঙালী রায়ৎ, তাহারাও শেষ পর্য্যন্ত ভীষণ অত্যাচারী ইংরেজ নীলকরকে পরাস্ত করিয়াছিল। অতএব ভীতি-উৎপাদন দ্বারা কাৰ্য্য উদ্ধার ইংরেজ বাংলাদেশে ৪ করিতে পারিবেন না। যখন এই বাংলা দেশের স্বৰ্গীয় অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রমুখ কয়েকজন কৰ্ম্মীকে নিৰ্ব্বাসিত করা হয়, তখনকার আতঙ্কের কথা আমাদের মনে আছে । তখন প্রতিবাদ-সভায় সভাপতি হইবার জন্য কোন রাজনৈতিক আন্দোলককে না পাইয়া ধৰ্ম্মোপদেষ্ট পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীকে সভাপতি করিতে হুইয়াছিল । তখন পূরা তিন গগু লোককেও নিৰ্ব্বাসিত করা হয় মাই। কিন্তু আজ তিন কুড়ির উপর লোক ধূত হওয়াতেও কাহারও ভয় হয় নাই, এবং কলিকাতা সহরে প্রতিবাদ-সভার পর প্রতিবাদ-সভা হইয়াছে, টাউন হলে সভা করিয়া তাহাতে স্থানাভাববশতঃ বাহিরে ময়দানে অনেকগুলি সভা করিতে হইয়াছে, যাহার অধিকাংশের সভাপতি হইয়াছিলেন মুসলমান নেতৃবর্গ। মফঃস্বলেও বিস্তর প্রতিবাদ-সভা হইয়াছে । অতএব কেবল সন্দেহের উপর মানুষকে ধরিয়া দণ্ড দিলে তাহাতে কোন স্বফল হয় না । রাজদণ্ডের উদ্দেশ্য এই, যে, যাহার অপরাধ প্রকাগু বিচারে প্রমাণিত হইয়াছে, তাহার শাস্তি হইলে লোকের সহানুভূতি তাহার প্রতি ত যাইবেই না, অধিকন্তু শাস্তিকে লোকে একটা ভয়ের জিনিষ ও অপমানের বিষয় মনে কপ্লিবে । কিন্তু কেবল সন্দেহে মানুষকে ধরিয়া গোপনে তথা কথিত বিচার করিয়া ৫াহাকে শাস্তি দিলে তাহার প্রতি মানুষের সহানুভূতি হয় এবং সে বীরের অর্ঘ্য লাভ করে । দণ্ডিত হওয়াট। গৌরবের বিষয় হইয় উঠে। এইপ্রকারে রাজদণ্ডের ভীতিপ্রদতা ও অপমানকরত্ব লুপ্ত হইয়া তাহা বাঞ্ছনীয় গৌরবের জিনিষ হইয়া উঠা রাষ্ট্রের পক্ষে অমঙ্গলের কারণ। নির্দোষ লোকদিগকেও যদি জেলে পাঠান হয়, তাহা হইলে বদম্যায়েস কয়েদীদের আত্মমানির হ্রাস ও লোপের সম্ভাবনা ঘটে । নিগ্রহ-নীতির আর-একটা কুফল এই যে, বলের দ্বারা ও ভীতি-উৎপাদন স্বারা মাহুষকে ঠাণ্ড করিতে চেষ্টা করিলে, ক্রিয়ার সদৃশ প্রতিক্রিয়ার নিয়মান্থসারে নিগৃহীত লোকের এবং তাহদের সহচর ও আত্মীয়-স্বজনেরাও বল প্রয়োগ ও ভীতি উৎপাদনে প্রণোদিত হইতে পারে। ইহা কেবল যে রাজনৈতিক কারণে নিগৃহীত লোকদের বেলায়ই ঘটে, তাহা নয়। সকল দেশের সাবেক-ধরণের কারাগারের কার্য্যকারিতার বিষয়ে যাহা কিছু লিখিত হইয়াছে, তাহাতে দেখা যায়, যে, অধিকাংশ স্থলে যে সব অপরাধীকে জেলে পাঠান হয়, তাহারা জেলে যাইবার সময় যেমন ছিল, খালাস হইবার সময় তাহা অপেক্ষা মন্দ্ৰ লোক হইয়া ফিরে ; দণ্ডে তাহাদের সংশোধন হয় না। এইজন্য শাস্তির ব্যবস্থা ও জেলের ব্যবস্থা সভ্যদেশ-সকলে এরূপ করিবার চেষ্টা হইতেছে স্বাস্থাতে দণ্ডিত লোকদের হৃদয়ের পরিবর্তন ও চরিত্রের উন্নতি হয় । বিপ্লব-বাদের উচ্ছেদের উপায় বিপ্লবীদিগকে দণ্ডিত করিও না, একথা আমরা বলিতেছি না। আমরা বলিতেছি, যাহারা কোনপ্রকারে আইনভঙ্গ করিয়াছে, তাম্বাদের শাস্তি অবশ্যই হওয়া চাই । কিন্তু প্রঞ্চাশু আদালতে সাধারণ বিচার-প্রণালীঅনুসারে তাহাদের অপরাধ প্রমাণিত হইয়া তাহাদের দও হউক । অনেক অভিজ্ঞ আইনজীবীর মতে এইপ্রকারে বিপ্লবীদের অপরাধ প্রমাণ করিয়া শাস্তি দেওয়া অসাধ্য নহে। আমরাও তাংশই মনে করি। দণ্ডিত হুইবার পর অপরাধীদের সম্বন্ধে এরূপ ব্যবস্থা হওয়া